বিয়ানীবাজার সমিতির সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তা কারো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভূমিকা রাখার আহ্বান

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): প্রবাসের অন্যতম পুরাতন ও বৃহৎ সামাজিক সংগঠন বিয়ানীবাসীবাজার সমিতি। ঐতিহ্যবাসী সিলেটের প্রবাসী বিয়ানীবাজারবাসীদের প্রাণের এই সংগঠনের পুরো নাম ‘বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ’। এই সমিতির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন আগামী ১০ অক্টোবর রোবববার। নির্বাচনে দুটি প্যানেল সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। জমে উঠেছে নির্বাচন। একদিকে এই নির্বাচন ঘিরে নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিয়ানীবারবাসীদের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তেমনী অন্যদিকে নির্বাচন ঘিরে নানা সমিতির সদ্যস্যরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। চলছে নানা কর্মকান্ড ও সমালোচনা, পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ। বিশেষ করে নির্বাচনী ভোট কেন্দ্র নিয়ে এক পক্ষ সমিতির কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। ফলে সমিতির নির্বাচন ঘিরে জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে এই সমিতির নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র চলছে, নির্বাচন আদৌ হবে কিনা? ইত্যাদি ইত্যাদি। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সাবেক চারজন সভাপতি ও একজন সাবেক সাধারণ সম্পাদক যৌথভাবে সাংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা সমিতির বিগত বছরগুলোর কর্মকান্ড ও সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি কারো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের পালাবদলে ভূমিকা রাখার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খবর ইউএনএ’র।

সিটির ওজন পর্কের আল মদিনা পর্টি হলে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সমিতির ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির বর্তমান ও সাবেক ৭জন কর্মকর্তার যৌথ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক সভাপতি মস্তফা কামাল। এসময় বর্তমান সভাপতি মকবুল রহীম চুনুই ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান রুহেল ছাড়াও সাবেক সভাপতি আজিমুর রহমান বুরহান, মাসুদুল হক ছানু ও মাশুকুল ইসলাম খান এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি মকবুল রহীম চুনুই এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান রুহেল। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠের পর উপস্থিত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাগণ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির বর্তমান ও সাবেক উপদেষ্টা এবং কার্যকরী কমিটির কয়েকজন কর্মকর্তা ও সাবেক নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেণলনে সাবেক সভাপতি মস্তফা কামাল তাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, আগামী ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউ এস এ ইন্ক এর বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে প্রচার ও প্রচারণা চলছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, অতি সম্প্রতি সচেতন বিয়ানীবাজারবাসী নামের ব্যানারে কতিপয় ব্যক্তির একটি সংবাদ সম্মেলণের বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যারা এই সংবাদ সম্মেলণে বক্তব্য রেখেছেন তাদের অনকেই সরাসরি আগামী ১০ অক্টোবরের নির্বাচনের একটি প্যানেলের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সচেতন বিয়ানীবাজারবাসী নামের ব্যানারে যে সংবাদ সম্মেলনটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে সমিতির বর্তমান ও সাবেক বেশ কিছু কমিটির নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঢালাও, মিথ্যা, বানোয়াট, সাজানো এবং নির্বাচনী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করার অপচেষ্টায় ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু অভিযোগ আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা মনে করি তাদের এই অসত্য বক্তব্য আগামী নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।

মস্তফা কামাল বলেন, একটি পক্ষ বিয়ানীবাজারবাসীর নামে ব্যানার তৈরি করে অভিযোগ করেছেন যে, বিগত দিনে সমিতির কার্যক্রম শূণ্যের কোঠায়! তারা কোন সুস্পষ্ট ব্যখ্যা দিতে না পারলেও ঢালাওভাবে বলেছে যে সমিতি সেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। তারা ভোটারদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে এটাও বলার চেষ্টা করেছে যে বিগত দিনে সমিতির নেতৃবৃন্দ কোন কাজ করেননি। আমরা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সমিতির হাজারও সচেতন সদস্য জানেন সমিতি কোন অবস্থান থেকে কোন অবস্থানে কাদের অবদানে এসেছে। সেটি তারা স্বীকার করতে চান না বলেই নানানভাবে সাধারণ সদস্যদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা জানাতে চাই যে, বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সমিতি সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। শুধু বৈশি^ক মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহ দুঃসময়ে সমিতির স্বাভাবিক কার্যক্রম অন্য সব কিছুর মতো যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এবং নিউইয়র্ক স্টেট আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে সাময়িক বিঘিœত হয়েছে। এরপরও আমরা মহামারিকালে সমিতির পক্ষ থেকে ফিউনারেল সার্ভিস থেকে শুরু করে বিপদগ্রস্থ সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমরা করোনাভাইরাস পরীক্ষা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করেছি। এছাড়া আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশে বিয়ানীবাজারবাসীর পাশেও দাঁড়িয়েছি। তারপরও কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা কারও কারও ইন্ধনে বা তাদের মাধ্যমে ঘটেছে।

মস্তফা কামাল বলেন, সচেতন বিয়ানীবাজারবাসী নামের ব্যানারে সমিতির সাফল্যকে ম্লান ও হেয় করার অপচেষ্টা করা হয়েছে, যা প্রকারান্তরে সমিতির সাধারণ সদস্যদের অবদানকেই হেয় করার শামিল। বিগত দিনে সমিতির সঠিক সিদ্ধান্তের কারনেই সমিতির ভবন তার নির্ধারিত সময়ের ১৪ বৎসর আগেই ঋণমুক্ত হয়েছে। ২০০৫ সালের জুলাই মাসের ৬ তারিখে ক্রয়কৃত ঘরের ৩০ বৎসরের মর্টগেজ ম্যাচুইরিটি তারিখ ছিল ২০৩৫ সালের ১ আগস্ট। কিন্তু সমিতির বিগত ১৪ বছরে সফল নেতৃত্বের কারনে সবার সহযোগিতায় ভবন আজ ঋণমুক্ত। আপনারা জানেন, ২০০৫ সালে ৫,৬০,০০০ (পাঁচ লক্ষ ষাট হাজার) ডলারে সমিতির ভবন ক্রয় করা হয়।

সমিতির ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারা এমনকি তেলের বা হিটের বিল দিতে না পারার কারনে আদালত থেকে জাজমেন্ট ইস্যু করা হয়, যা তখন বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক ঠিকানা সহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাবেক সভাপতি জনাব বোরহান উদ্দিন কপিল বাড়ি বিক্রি করে তেলের দাম পরিশোধ করার পক্ষে তার সিদ্ধান্তের কথা পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে জানান। সেই দুরাবস্থা থেকে পরপর কয়েকটি কমিটি তাদের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সমিতির ভবনকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ভবনকে ঋণমুক্ত করেছেন। নির্দিষ্ট সময়ে সমিতির সাধারণ সভা, জাতীয় অনুষ্ঠানাদি, পিকনিক, ইফতার পার্টিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়েছে এবং অভিযোগকারী অনেকে এই সব অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই ২০০৮ সালে তৎকালীন সভাপতি মাসুকুল ইসলাম খাঁন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস শাকুর খান মাখনসহ নির্বাচিত কার্যকরী পরিষদ শূণ্য হাতে দায়িত্ব নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে বাড়ির মর্টগেজ নিয়মিত পরিশোধ করে ভবনটিকে ফরক্লোজারের হাত থেকে রক্ষা করে সমিতির নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত ও বেগবান রাখার চেষ্টা করেছেন।

২০১০-২০১৫ সাল পর্যন্ত পরবর্তী সভাপতি জনাব আজিমুর রহমান বুরহান টানা তিনবারের মেয়াদকালে সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে ফখরুল ইসলাম দেলওয়ার, শামীম আহমেদ এবং মুহিবুর রহমান রুহুলসহ নির্বাচিত পরিষদকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত মর্টগেজ পরিশোধ করেন এবং বাড়ি সংস্কার করে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করেন। তারা সাধারণ সদস্যদের সম্পৃক্ত করে নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে সমিতির কার্যক্রমকে আরও বেগবান করেন এবং তাদের হাত ধরে সমিতি আরেক ধাপ এগিয়ে যায়।

২০১৬-২০১৭ সালে সভাপতি মাসুদুল হক ছানু ও সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান রুহেলের নেতৃত্বে কার্যকরী কমিটি ভবন সংস্কারের মাধ্যমে ভাড়া বৃদ্ধি করেন। তারা নিয়মিত মর্টগেজ পরিশোধ করেন এ ছাড়া এককালীন ৬০ হাজার ডলার পরিশোধ করে ব্যাংক ঋণ কমিয়ে আনেন এবং নিউজার্সির মালবরো কবরস্থানে নতুন করে ১১৩টি কবর ক্রয় করেন। যেখানে প্যান্ডামিকের সময়সহ বিভিন্ন সময়ে অনেককে দাফন করা হয়।

২০১৮-২০১৯ কার্যকালে সভাপতি মস্তফা কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান রুহুলের নেতৃত্বে কার্যকরী কমিটি নিয়মিত মর্টগেজ পরিশোধ ছাড়াও ৭০ হাজার ডলার এককালীন পরিশোধের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ কমিয়ে আনেন। তা ছাড়া ভবন সংস্কারের মাধ্যমে ভাড়া ৮ হাজার ডলার থেকে ১০ হাজার ডলারে উন্নীত হয়। তৎকালীন সভাপতি মস্তফা কামাল ও সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান রুহুল ১ লাখ ৮০ হাজার ডলারের চেক দিয়ে সমিতির ভবন ঋণমুক্ত করার উদ্যোগ নিলেও একটি বিশেষ মহলের অসহযোগিতার কারনে তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এতে সমিতির প্রায় ৩০ হাজার ডলারেরও বেশি মর্গেজ ইন্টারেস্ট বাবদ গচ্চা যায়।

২০২০-২০২১ সালে বর্তমান সভাপতি মকবুল রহিম চুনই এবং সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান রুহুলের কার্যকরী কমিটি নিয়মিত মর্টগেজ পরিশোধ করে গত জুন মাসে ৬৪ হাজার ডলার পরিশোধের মাধ্যমে ভবনটিকে সম্পূর্ণরুপে ঋণমুক্ত করেন। যা এসব কমিটির সাফল্যের ধারাবাহিকতার একটি অংশ। অবশ্যই এখানে সাধারণ সদস্যদের বিশাল অবদান ও সহযোগিতা রয়েছে। কারন এই কমিটিগুলো সদস্যদের সাথে নিয়েই তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শে নিজেদের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। অন্যদের মতো স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে সমিতির ভবন বিক্রি করে বকেয়া তেলের বিল দেয়ার মতো হঠকারী সিদ্ধান্তের কথা বলেননি এটিই হয়তো তাদের দৃষ্টিতে অপরাধ।

এস্তফা কামাল বলেন, বিশ^ মহামারির এই সময়ে সমিতির উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- দুঃখজনকভাবে যারা করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের ফিউনারেল সার্ভিসে সহযোগিতাসহ পাশে থাকা, করোনাকালে দুর্লভ অ্যান্টিবডি টেস্ট, সুরক্ষা সামগ্রী যেমন মাস্ক, স্যানিটাইজার ও গ্লাভস বিতরণ এবং খাদ্য সামগ্রী বিতরণ এছাড়া দেশে বিয়ানীবাজার উপজেলায় নগদ ১১ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়। অতি সম্প্রতি সমিতির উদ্যোগে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বেসরকারি অনুদান প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্রস্থ বিয়ানীবাজার সমিতি। যার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য হলো অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এবং সিলিন্ডার। বিয়ানীবাজারবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায় সফল এই অনুদান সর্বমহলে ব্যপক প্রশংশিত হয়।

একটি পক্ষ তাদের বক্তব্যে বলেছেন দীর্ঘদিন থেকে সমিতির নির্বাচন হয়নি-যা তাদের মনগড়া এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের পালাবদলকে বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। আপনারা দেখেছেন এবং জানেন, একটি অবাধ এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিগত সব কয়টি কমিটি। নিয়ম অনুযায়ী সদস্য নিবন্ধন থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনী সব কার্যক্রমও সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু দুটি পক্ষ ছাড়া নির্বাচন হয়না। একটি পক্ষ সব আয়োজন করলেও অন্য পক্ষটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেননি এই ব্যর্থতার দায়ভার তো তাদের ওপরই বর্তায়?

তিনি বলেন, একটি পক্ষের অসৎ উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে যে, স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে আমরা ভোট নিবন্ধন এস্টোরিয়ায় নিয়েছি। ২০১৭ সালের ভোট নিবন্ধনের সময় ওজন পার্কের রোজ বেঙ্গল রেস্টুরেন্টে যে তান্ডব চলেছিল, কারা ছিল এর নেতৃত্বে! তারা কি অস্বীকার করতে পারবে? ওই ঘটনায় পরবর্তীতে তারা সমিতির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মহামান্য আদালত তাদের করা মামলাটি খারিজ করে দেন এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, কিন্তু তখনও একটি পক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেননি। এটা কি তাদের ব্যর্থতা নয়?

মস্তফা কামাল বলেন, গত সাধারণ সভায় ওজন পার্কের আল মদিনা পার্টি হলে সমিতির বর্তমান সহ-সভাপতির উপর যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার দায়ভার কি তারা এড়াতে পারবে? এ বছর সমিতির ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ভোট নিবন্ধিত হয়েছে এবং ১ লক্ষ ৮ হাজার ডলার সমিতির ফান্ডে এসেছে, যা সম্পন্ন হয়েছে এস্টোরিয়ায়। এবারের ভোটার নিবন্ধন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে যা তাদের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। এস্টোরিয়ায় না হয়ে ওজনপার্কে হলে গত ভোটার নিবন্ধন ও সাধারণ সভার মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার কে নিত! গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়ার সদিচ্ছা থাকলে নিবন্ধন কার্যক্রম ওজন পার্ক কেন নিউইয়র্কের যে কোন স্থানে গঠনন্ত্র অনুযায়ী হলে তাতে অংশ নেয়া সকলের দায়িত্ব।

মস্তফা কামাল বলেন, ২০০৬-২০০৭ সালের কমিটি ৭২ হাজার ডলারের হিসাব দিতে পারেনি! এই কমিটির পর পরবর্তী কমিটিগুলোর সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়ে বার বার আলোচনা ও হট্টগোল হয়। পরে ২০১০ সালের একটি সাধারণ সভায় ৭২ হাজার ডলারের সেই হিসাবটি নিয়ে আর আলোচনা না করতে এবং তাদের দায়মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দায়মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা বর্তমান ও গত ১৪ বছরের কমিটিগুলোর ধারাবাহিক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে কমিটিগুলোর নামে অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। কারন অতীতে ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিগত টেলিফোন বিল সমিতির একাউন্ট থেকে দেওয়ারও রেকর্ড আছে। সমিতির সর্বশেষ সাধারণ সভায় সাবেক একজন সভাপতি চেয়ারের উপরে দাঁড়িয়ে সমিতিকে দ্বিখন্ডিত করার ঘোষণাও দেন। তার এই হঠকারিতা দেখে সাধারণ সভায় আগত অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা চাইছেন মিথ্যা বানোয়াট গল্প সাজিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ও দুর্নীতি ঢাকতে।

বর্তমান কমিটিসহ বিগত ১৪ বছরের কমিটিগুলো সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক বছরে দুটি সাধারণ সভায় আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছভাবে তুলে ধরছে। এছাড়া স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রতি দুই বছর অন্তর অডিট কমিটির মাধ্যমে আয় ব্যয়ের মূল্যায়নও করে তা সাধারণ সদস্যদের সামনে প্রকাশ করে আসছেন। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতিকে পবিত্র আমানত হিসেবে গণ্য করে আসছি। আমরা তিন দশকের এই সমিতিকে ‘‘আমার’’ হিসেবে বিবেচিত না করে ‘‘আমাদের’’ প্রিয় সমিতি হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু একটি মহল প্রিয় বিয়ানীবাজারবাসীর প্রাণের সংগঠনটিকে ‘‘আমার’’ সংগঠন হিসেবে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রিয় বিয়ানীবাজারের সচেতন বাসিন্দারা তাদের সেই অসৎ উদ্দেশ্য কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না।

বিগত তিন দশকের বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত বিয়ানীবাজার সমিতির প্রতিষ্ঠাতাদের থেকে শুরু করে সব কার্যকরী কমিটির অবদানকেস্মরণ কওে তিনি বলেন, এখানে কারও অবদানকে খাটো করে দেখার অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করিনা। একই সাথে সমিতির সাবেক যে সকল কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের সকলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শ্রদ্ধার সাথে তাদের অবদানকেও আমরা স্মরণ করছি।

লিখিত বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন তাদের প্রতি অনুরোধ, আসুন ভুল তথ্য না দিয়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের পালাবদল নিশ্চিত করি। বিয়ানীবাজারবাসী এই প্রবাসে অতীতে ঐক্যবদ্ধ ছিল, আছে এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকবে। মিথ্যা বানোয়াট অসৎ উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচারে সম্মানিত সচেতন সদস্যবৃন্দ কখনো বিভ্রান্ত হয়নি এবং হবেনও না। তিনি বৃহত্তর স্বার্থে সমিতির গঠণতন্ত্র এবং সমিতির সাধারণ সদস্যদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসন্ন নির্বাচনটিকে উৎসবমূখর করে তোলা এবং বিয়ানীবাজারবাসীকে তাদের সঠিক নেতৃত্ব বেছে নিতে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

বিয়ানীবাসীবাজার সমিতি
Comments (0)
Add Comment