নিউইয়র্ক (ইউএনএ): যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘মাদার সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির বহুল আলোচিত নির্বাচন আগামী ১৪ নভেম্বর রোববার। মনোনয়নপত্র পুরণ নিয়ে একটি প্যানেলের দু’জন সদস্য প্রার্থীর মনোনয়ন নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাতিলের পর সৃষ্ট অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, মামলা, মহামারী করোনা প্রভৃতি কারনে বন্ধ থাকা/স্থগিত হওয়া বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র বহুল নির্বাচন প্রায় দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে ‘রব-রুহুল’ ও ‘নয়ন-আলী’ দুই প্যানেল সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর, রোববার সোসাইটির দ্বি-বার্ষিক (২০২২-২০২৩) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনে দু’টি প্যানেল সহ কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদে ৩৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। খবর ইউএনএ’র।
নির্বাচনে ‘রব-রুহুল’ প্যানেল থেকে সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের ১৯ পদে ১৯জন আর ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল থেকে ১৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মনোনয়নপত্র যাছাই-বাছাই প্রক্রিয়াকালে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলে দু’জন সদস্য পদের প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। অপরদিকে ‘রব-রুহুল’ প্যানেল চুড়ান্ত হওয়ার পর মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই প্যানেলের সহ সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুল খালেক খায়ের ও সহ সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আজাদ বাকির মৃতবরণ করায় পরবর্তীতে তাদের স্থলে যথাক্রমে ফারুক চৌধুরী ও আমিনুল ইসলাম চৌধুরী-কে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সভাপতি পদে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিউইয়র্কের ৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং এজন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) সকল প্রস্ততিও নিয়েছে। সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল ইউ আহমেদ ইউএনএ প্রতিনিধির সাথে আলপকালে বলেন, অবশেষে আমরা নির্বাচন করতে পারছি এটাই বড় কথা। আমরা অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে যেতে চাই। নির্বাচন কমিশন শতভাগ নিরপেক্ষ থেকে সোসাইটির গঠনতন্ত্র ও বাইলজ অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করছে। আশা করছি সবাই মিলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবো। এজন্য তিনি সকল মহলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, সিটির ৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কুইন্সের গুলশান ট্যারেসে প্রধান ভোট কেন্দ্র হবে। এছাড়াও জ্যামাইকার ইকরা সেন্টার, ব্রুকলীনের পিএস ৭৯, ওজোনপার্কের দেশী সেন্টার আর ব্রঙ্কসের গোল্ডেন প্যালেসে অন্যান্য ভোট কেন্দ্র হবে।
এদিকে নির্বাচনী মাঠে মুখোমুখি ‘রব-রুহুল’ ও ‘নয়ন-আলী’ এই দুই প্যানেলের পক্ষ থেকে চলছে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি সভা-সমাবেশ। প্রার্থীদের পরিচিত সভা ছাড়াও খন্ড খন্ড সভা, ফোন আর ফেসবুকের মাধ্যমে চলছে গণ সংযোগ। সিটির বাংলাদেশী অধ্যুষিত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাটানো হয়েছে দুই প্যানেলের রং বে রং-এর পোষ্টার। দুই প্যানেলেই রয়েছেন কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সোসাইটি’র আসন্ন নির্বাচনে সদস্য/ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন ২৭,৫১৩। যা রেকর্ড ভোটার। এরমধ্যে ৪৮৮ জন আজীবন সদস্য/ভোটার রয়েছেন। সাধারণ ভোটার হচ্ছে ২৭,০২৫ জন। সোসাইটির ইতিহাসে এতো সংখ্যক সদস্য/ভোটার হওয়ার নজির নেই। এতো ব্যাপক ভোটার নিয়ে ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সোসাইটির নির্বাচন জমে উঠবে বলে সংশ্লিরা আশা প্রকাশ করছেন।
নির্বাচনে ‘রব-রুহুল’ প্যানেল থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুর রব সভাপতি পদে ও সোসাইটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী পুনরায় একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন সভাপতি পদে ও সোসাইটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উভয় প্যানেলে রয়েছেন কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। ফলে সব মিলিয়ে নির্বাচন জমে উঠেছে। নির্বাচনে হড্ডাহাড্ডির লড়াইয়ের সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ। তবে নিয়ম অনুযায়ী সোসাইটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কোন সংগঠনের নেতৃত্ব থাকা কেউ প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে ‘রব-রুহুল’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুর রব নোয়াখালী সমিতির সভাপতির পদ ত্যাগ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতিতে পর পর তিন তিনবার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রুহুল আমীন সিদ্দিকী বর্তমানে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। কমিউনিটির একজন স্বজ্জন মানুষ হিসেবে তিনি মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর এসোসিয়েশন, শাপলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন।
অপরদিকে কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন মিরেশ্বরাই এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলী বর্তমানে সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ্যের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যক্তিগতভাবে কমিউনিটিতে একজন স্বজ্জন ও পরোপকারী মানুষ মোহাম্মদ আলী কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার সহ নারায়নগঞ্জ জেলা সমিতি, লায়ন্স ক্লাব ছাড়াও মূলধারার রাজনীতি ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত। ‘রব-রুহুল’ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আজিমুর রহমান বুরহান নির্বাচন বিষয়ে বলেন, আমাদের প্যানেল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আশা করছি সবার সহযোগিতায় পরীক্ষিত প্যানেল হিসেবে ‘রব-রুহুল’ প্যানেল জয়ী হবেন। এখন পর্যন্ত নির্বাচন বিষয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই, আশা করছি ১৪ নভেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য হবে।
‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন। আশা করছি সবার দোয়া আর ভোটারদের ভোটে আমাদের প্যানেল জয়ী হবে। কেননা, যোগ্য প্যানেল হিসেবে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলে রয়েছেন যোগ্য প্রার্থী। তিনি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। এদিকে মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের এবারের নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নিজের পকেটের হাজার হাজার ডলার খরচ করে ভোটার বানিয়ে সোসাইটির নেতা বনে যাওয়ার প্রক্রিয়া কমিউনিটির জন্য শুভকর নয় বলে অনেক সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশী অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে ইউএনএ’র অনুসন্ধানে জানা যায়, সোসাইটির নির্বাচনে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে। কোন প্যানেলের পক্ষে এককভাবে বিজয়ী হওয়া কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে ২/৪টি পদ ছাড়া দুই প্যানেলের সকল প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীই যোগ্য বলে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন। তারা সবাই কোন না কোন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত এবং নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। অনেকে একাধিকবার সোসাইটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।