নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি এবং মামলার কারণে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার প্রেক্ষিতে সোসাইটির ট্রাষ্টিবোর্ড ও কার্যকরী পরিষদ-এর পক্ষ থেকে গত ২০ নভেম্বর শনিবার দুপুরে নিউইয়র্কের উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জনাকীর্ণ এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সোসাইটির ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের অন্যতম সদস্য হাজী মফিজুর রহমান এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম এ আজীজ।
সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি সহ কার্যকরী পরিষদ, ট্রাষ্ট্রি বোর্ড ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা/সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, সোসাইটির মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ২ ডিসেম্বর। খবর ইউএনএ’র। সংবাদ সম্মেলনে হাজী মফিজুর রহমান সোসাইটির নির্বাচন ঘিরে মামলা সহ সোসাইটির চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, সোসাইটির নির্বাচন ঘিরে আমরা মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়েছি। যার ফলে আমাদের প্রিয় এই সংগঠন সঙ্কটের মুখোমুখি। আমাদের বিশ্বাস সোসাইটি প্রিয় সকল প্রবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় এই সঙ্কট সহসাই কেটে যাবে এবং সোসাইটি অতীতের চেয়ে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর সংগঠনে পরিণত হবে।
মহামারী করোনায় মৃত্যুবরণকারী সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, সহ সভাপতি আবুল খায়ের খালেক, কার্যকরী সদস্য আজাদ বাকির ও সাবেক কর্মকর্তা সহ শত শত প্রবাসী বাংলাদেশীকে হানানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা কালে মানুষের এই চরম সঙ্কটে আমরা সবকিছু ভুলে সাধ্য মতো সবাই প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াই। সঙ্গত কারনেই নির্বাচন পিছিয়ে যায়। আমরা সোসাইটির কর্মকর্তারা যে যার অবস্থান থেকে ব্যক্তি উদ্যোগ ছাড়াও নিউইয়র্ক সিটি ও ষ্টেটের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করি। পাশাপাশি পেন্ডামিকের সময় ফিউনারেল সার্ভিস ছিলো দূষ্প্রাপ্য। তারপরও সোসাইটির পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২৫০টি কবরের জায়গা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বেশীরভাগ কবর বিনামূল্যে সোসাইটির নিজস্ব কবরস্থানে প্রদান করা হয়।
পাশাপাশি করোনাসহ বিভিন্ন সময় মৃত্যুবরণকারী অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ফিউনেরাল/অন্তেষ্টিক্রিয়ার জন্য যারা সাহায্য চেয়েছে তাদেরও সাহায্য দেয়া হয়েছে। করোনার কঠিন সময়ে কুইন্স ও ব্রুকলীনে এন্টি বডি টেস্টিং ছাড়াও ভ্যাকসিন সার্ভিস প্রদানের ব্যবস্থা করি। এছাড়াও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সাহায্যে তার নেতৃত্বে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী বাংলাদেশে গিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা সাহায্য প্রদান করেন। একই সময় দেশের উত্তর বঙ্গে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪৭টি পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহ নির্মাণ করে দেয় হয়। নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডে অগ্নিকান্ডে নিহত তিন যুবকের মধ্যে দুই যুবকের জন্য অর্থ সাহয্য এবং সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত এক কিশোরের সাহায্যে অর্থ সহযোগিতা দেয়া হয়। এসব অর্থ সোসাইটির কর্মকর্তা ও প্রবাসীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
সবশেষে তিনি বলেন, প্রবাসী সকল বাংলাদেশী মনেপ্রাণে সোসাইটিকে ভালবাসে। আর যারা সোসাইটিকে ভালবাসে না, তারাই সোসাইটির ক্ষতি করতে চায়। সোসাইটির ক্ষতি করে সোসাইটিকে ভালবাসা যায় না। আমরা মনে করি প্রিয় এই সংগঠনকে রক্ষা করতে যেখানে আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব, সেখানে মামলা-মোকদ্দমার প্রয়োজন কি? তাই কমিউনিটির সকলের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সোসাইটিকে রক্ষা করি, মামলাবাজদের চিহ্নিত করে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করি।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এম এ আজীজ সোসাইটির বিরুদ্ধে মামলাকারীদের ‘আবর্জনা’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাদের অভিযোগ মিথ্যা দাবী করেন। তিনি বলেন, আমরা ভুলের উর্ধ্বে নই।
তবে গঠনতন্ত্র মেনেই সোসাইটি পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সোসাইটির বিরুদ্ধে কোন সদস্যের কোন অভিযোগ থাকলে তাহলে তাকে প্রথমে কার্যকরী কমিটির কাছে লিখিত অভিযাগ জানাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই অভিযোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী পরিষদ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা ট্রাষ্ট্রিবোর্ড-এর কাছে অভিযোগ আকারে পুনরায় দাখিল করার সুযোগ রয়েছে। ট্রাষ্ট্রি বোর্ড কোন ব্যবস্থা না নিলে সেক্ষেত্রে মামলায় যেতে পারেন। কিন্তু বর্তমান মামলার বাদী সেই নিয়ম মানেনি। বরং বাদীর বক্তব্যে সোসাইটির কর্মকর্তাদের চরত্রি হনন করা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মামলা আইনগভাবেই চলবে। প্রয়োজনে আরো অভিজ্ঞ এটর্নী নিয়োগ করা হবে। আর মামলার কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় কত ডলার গচ্ছা দিতে হবে তার হিসেব এখনই বলা সম্ভব নয়।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সোসাইটির বিরুদ্ধে মামলাবাজদের আমরা চিনতাম না, মিডিয়ার মাধ্যমেই তাদের পরিচয় জেনেছি। তাদের পরিচয় নিয়ে আমরা কথা বলতে চাইনা। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে এম আজীজ বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটি একটি নন প্রফিট সংগঠন। আমি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর সোসাইটির ট্যাক্স ফাইল করা হয়। আর সোসাটি ৫১ সি’র সুবিধা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এবং সোসাইটির অর্থ আতœসাতের কোন প্রশ্নই উঠে না। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে এম আজীজ বলেন, মামলার বাদীর পক্ষ থেকে যথাযথভাবে মামলার নোটিশ সার্ভ করেনি। তারা নিজেরাই নোটিশ সার্ভ করে আবার তা নিয়ে গেছে।