খবরের কাগজ কিংবা,অনলাইন মিডিয়া বা টেলিভিশনে প্রতিনিয়তই আমরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য ভ্যাকসিন আবিস্কারের খবর শুনে আসছি । কিন্তু আশার আলো খুব কমই দেখতে পাচ্ছি । এমনই এক সময়ে আশার আলো দেখাচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যাল । যত তারাতারি ভ্যাকসিন আবিস্কার হয় ততই মঙ্গল ।
কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় ধাপের পরীক্ষা খুব ভালোভাবে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান অ্যান্ড্রু পোলার্ড । ২২ মে শুক্রবার তিনি বলেছেন, তাঁদের এ কর্মসূচিতে আরও ১০ হাজার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে ।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন গবেষণা দ্রুত শেষ করতে ২য় ও ৩য় ধাপকে এক করে ফেলা হচ্ছে। ৩য় ধাপে ১৮ বছর বয়সের বেশি বয়সী অধিক সংখ্যক মানুষের মধ্যে টিকা কীভাবে কাজ করে তার মূল্যায়ন জড়িত এবং এটি কতেটা ভালোভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও অসুস্থতা থেকে মানুষকে প্রতিরোধ করতে পারতে পারে, তা ভাল করে দেখা হবে।
বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়, পোলার্ড এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ক্লিনিকাল স্টাডিজ খুব ভালোভাবে এগিয়ে চলছে এবং টিকা প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কতটা ভালোভাবে উজ্জীবিত করে, তা মূল্যায়নে আমরা এখন গবেষণা শুরু করছি।
মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছয়টি মাকাক বানরের উপর পরীক্ষার আশাব্যঞ্জক ফলাফলের পরে ২৩ শে এপ্রিল অক্সফোর্ডে পরীক্ষামূলক টিকা টি দুই জনের মধ্যে ১ম পরীক্ষা করা হয়েছিল।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে প্রাপ্তবয়স্ক এক হাজার ব্যক্তিকে পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার পরের ধাপে ১০ হাজার ২৬০ জনকে যুক্ত করা হচ্ছে, যার মধ্যে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরাও আছেন। মে ও জুন মাসে তাদের টিকা দেওয়া হবে।
আগামী ২ থেকে ৬ মাসের মধ্যে গবেষণার ফল জানা যেতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যে কোভিট-১৯ করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেমে গেলে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, এতে প্রাকৃতিকভাবে কম মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হবে।
এই জন্য গবেষকেরা যাঁদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানা যায় । যেমন স্বাস্থকর্মী,ডাক্তার,নার্স,ওয়ার্ডবয় ।
বিজনেস ইনসাইডার বলছে, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ কোভিট-১৯ করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন খুঁজে বের করার প্রতিযোগিতায় কয়েকটি অভিজাত পরীক্ষাগার ও সুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সোমবার মার্কিন সংস্থা মডার্না তাদের ভ্যাকসিন পরীক্ষার প্রথম ধাপের এক পরীক্ষার ইতিবাচক ফল প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি এস ফাউসি গত ২১ মে বৃহস্পতিবার বলেছিলেন যে তিনি এ বিষয়ে সতর্কতার সংগে আশাবাদী।
ওষুধ জায়ান্ট ফাইজার ৫ মে থেকে তাদের পরীক্ষামূলক করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষা শুরু করতে বায়োএনটেকের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে। তারা এখনো ফলাফল ঘোষণা করেনি বলে জানা গেছে ।
বিশ্বজুড়ে প্রায় বারোটি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন মানুষের ক্ষেত্রে পরীক্ষা শুরু হয়েছে বা শুরুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানা যায় ।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলটির নেতৃত্বে থাকা সারাহ গিলবার্ট গত ১১ এপ্রিল বলেছিলেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিন চলে আসার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
ভ্যাকসিন অনুমোদিত হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত না হলেও ইতিমধ্যে এর উচ্চ চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। গত ২১ মে মার্কিন সরকার ১২০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের ত্রিশ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য সম্মতি দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা বলেন, আমাদের নিজস্ব ঝুঁকি এবং ব্যয়ে সম্পূর্ণরূপে উৎপাদনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সিদ্ধান্তটি গ্রহণ হয়েছে।
অগ্রগতি সত্ত্বেও, ভ্যাকসিনটি অনুমোদিত হলে ডোজ বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচের শিশি এবং ঢাকনা সংকটে বিশ্বব্যাপী পৌঁছানো বাধাগ্রস্ত হবে এমন উদ্বেগও রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা । সারা বিশ্বের মানুষ এখন তাকিয়ে আছে কবে বের হবে ভ্যাকসিন । কবে নাগাদ মানুষ মুক্ত হবে করেনা নামক এই ক্ষুদ্র জীবানুটি থেকে । এ প্রত্যাশা বিশ্বের সকল মানুষের ।
তথ্যসুত্র :হিন্দুস্তান টাইমস অব ইন্ডিয়া ।