নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের জ্যামাইকায় উদ্বোধন হলো ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’। অমর একুশে মহান শহীদ দিবস তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর ১৬৯ ষ্ট্রটি ও হোমলন ষ্ট্রীটের কর্ণারে নতুন সড়কটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সিটি কাউন্সিলম্যান জিম এফ জিনারো। হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারী) অপরাহ্নে নাম ফলক উন্মোচন করে সড়কটি উদ্বোধন করা হয়। খবর ইউএনএ’র।
সড়কটি উদ্বোধনের আগে ঐ স্থানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাগত রাখেন এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কাউন্সিলম্যান জিম এফ জিনারো। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিড ওয়েপ্রীন, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমার, সিটি কাউন্সিলওম্যান নানতাসা উইলিয়াম, কুইন্স ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী মেলিন্ডা কার্টজ, কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ আমানুল্লাহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এছাড়াও চিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত এবং আমর একুশের গান ‘আমার ভায়ের রক্সে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী’ পরিবেশন করেন। জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক আল আমীন রাসেল কাউন্সিলমান জিম জিনারোকে পুষ্পস্তবক ও ক্রেষ্ট প্রদান করেন।
তবে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেভাবে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো তা কারো কাম্য ছিলো না। অনুষ্ঠানটি আরো ভালো ও সুন্দর হতে পারতো। আর এই না পারাটা কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের অনৈক্য বলেই সচেতন প্রবাসীরা মন্তব্য করেছেন।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের আরো অভিমত জ্যামাইকায় ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ আর প্রবাসী বাংলাদেশীদের মান-মর্যাদা, স্বীকৃতি আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো। এখন প্রবাসীদের দাবী নিউইয়র্কে স্থায়ী শহীদ মিনার।
এদিকে চরম বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানটি এক পর্যায়ে বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেন কাউন্সিরশ্যান জিম জেনারো। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের বিশৃঙ্খলা, অনৈক্য আর নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা দেখে ত্যক্ত-বিরক্ত হন কাউন্সিলম্যান স্বয়ং। অপরদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই বেলা ২টার দিকে জ্যামাইকার বাংলাদেশী কমিউনিটির একটি পক্ষ মাইক্রোফোন হাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য শুরু করে দেন। এতে অনুষ্ঠানের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এডভোকেট কামরুজ্জামান বাবুর উপস্থাপনায় অনির্ধারিত এই পর্বে কমিউনিটি নেতা নাসির আলী খান পল, মোর্শেদ আলম, ফর্মাসিস্ট নূর উদ্দিন, ফখরুল আলম, বাহলুল সৈয়দ উজ্জল প্রমুখ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে কাউন্সিলম্যান জিম জিনারো অনুষ্ঠান স্থলে আসার পর অনুষ্ঠানিকভাবে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর মুহূর্তে নেতৃবৃন্দসহ প্রবাসীদের ঠেলাঠেলি আর মঞ্চ দখলের মতো অবস্থানে এক পর্যায়ে কাউন্সিলম্যান জিম জেনারোকে সিটি পুলিশের সাহায্য নিতে হয়। তার আগে একবার এখানে আরেকবার ওখানে মঞ্চ স্থানের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে এক হ-য-ব-র-ল আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। পুলিশ বেষ্টুনীতে আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষে জিম জিনারো সড়কটির নাম ফলক উন্মোচন করেন।
এদিকে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত হতে থাকেন। অনুষ্ঠান স্থলে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী শহীদ মিনার। যা দেশী-বিদেশী সকলের নজর কাড়ে। টাঙানো হয় একুশ স্মরণে ব্যানার। জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি, জ্যামাইকা থিয়েটার প্রভৃতি সংগঠনের উদ্যোগে ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় পতাকা হাতে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।