উত্তর আমেরিকায় ঈদুল আযহা উদযাপিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ধর্মীয় ভাবগম্বীর পরিবেশে শনিবার (৯ জুলাই) নিউইয়র্ক সহ উত্তর আমেরিকার পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন হয়েছে। ঈদুল আযহা মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আযহা উদযাপনের অন্যতম প্রধান কর্মকান্ড হচ্ছে ঈদের নামাজ আদায় করার পর সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানী। এদিকে চরমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বাস্থবিধি মেনেই নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়েছে। কোথাও কোথাও খোলা মাঠে ঈদের জামাত হয়েছে। খবর ইউএনএ’র।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর উদ্যোগে ঈদুল আযহার চারটি জামাত হয়েছে যথাক্রমে সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা ও সকাল ১০টায়। এই জামাতগুলোতে শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সর্বস্তরের শত শত পুরুষ-মহিলা নামাজে অংশ নেন। ঈদের জামাত শেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মুনাজাতে প্রবাসী ও দেশবাসীর সহ জাতির কল্যাণ এবং করোনামুক্ত বিশ্ব কামনা করা হয়। যদিও স্থানীয় টমাস এডিসন স্কুল মাঠে সকাল ৮টায় একটি জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনায় এই কর্মসূচী বাতিল করা হয়। জেএমসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান ডিডিএস, সেক্রেটারী আফতাব মান্নান ও জয়েন্ট সেক্রেটারী ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার সহ অন্যান্য কর্মকর্তা মুসল্লীদের স্বাগত জানান। এতে অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট ২৩এর কাউন্সিলওম্যান লিন্ডা লী।

আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে ঈদুল আযহার তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।। প্রথম জামাত হয় মসজিদ ভবনে সকাল ৬টায়। এরপর জ্যামাইকার রুফস কিং পার্কে আরো দুটি ঈদের জামাত হয় যথাক্রমে সকাল ৮টায় এবং সকাল ১০টায়। ম্যানহাটানের মদিনা মসজিদের উদ্যোগে স্থানীয় পার্কে ঈদের জামাত হয় একটি সকাল ৮টায় মসজিদ সংলগ্ন পার্কে।
জ্যামাইকার মসজিদ আল আলাফা (আরাফা ইসলামিক সেন্টার)-এর উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল আযহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায় স্থানীয় সুসান বি এন্থনী স্কুলের খোলা মাঠে। এখানে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও নামাজে অংশ নেন।
জ্যামাইকার ‘হাজী ক্যাম্প মসজিদ’ নামে পরিচিদ মসজিদ মিশনে ঈদুল আযহার ৪টি নামাজ অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল সোয়া ৬টায়, সকাল সোয়া ৭টা, সকাল সোয়া ৮টা ও সকাল সোয়া ৯টায়।
এস্টোরিয়ার আল আমীন জামে মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টার-এর উদ্যোগে ঈদুল আযহার একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় ৩৬ ও ৩৭ এভিনিউর মাঝে। নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম এই জামাতে অংশ নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

এছাড়াও নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টার, সানিসাইড মসজিদ, এস্টোরিয়ার শাহজালাল মসজিদ ও গাউসিয়া মসজিদ, ব্রুকলীনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, বায়তুল জান্নাহ ইসলামিক সেন্টার, ব্রঙ্কসের পার্কচেষ্টার জামে মসজিদ সহ অন্যান্য মসজিদের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে কানাডা ও ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী, কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জেনিয়া, ওয়াহিও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোরিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিটি ঈদের জামাত শেষে নবীন-প্রবীন, ছোট-বড়, সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় আবার অনেকে কোলাকুলি করেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আবার অনেকে স্বপরিবারে বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের বাসা-বাড়ীতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়া প্রবাসীরা ফোনে বাংলাদেশে ফোন করে স্বজনদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শুভেচ্ছা বিনিময় হয় ফেসবুক আর টেক্স ম্যাসেজের মাধ্যমে।

সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে এবং স্থানীয় পুলিশ প্রিসক্টের সহায়তায় সর্বত্রই নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদের নামাজ আদায়ের স্থানগুলোর আশপাশের রাস্তায় ফ্রি গাড়ী পার্কিং এর ব্যবস্থা থাকায় দূর দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা সপরিবারে ঈদের নামাজে শরীক হন। রং বেরং এর বাহারী পোশাক গায়ে নামাজিদের একত্রে ঈদের নামাজ আদায় ভীন দেশীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। সেই সাথে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদের দিনটি উইকেন্ড হওয়ায় বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীকে ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। অপরদিকে গ্রোসারীর মাধ্যমে অনেকেই মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য খাসী ও গরু কোরবানী দেন। কোরবানীর মাংস হাতে পাওয়ার পর সেই মাংস আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় বাসায় গিয়ে বিতরণ করা হয়।

উত্তর আমেরিকায় ঈদুল আযহা উদযাপিত
Comments (0)
Add Comment