নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপন করা হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের ‘এলামনাই নাইট ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও ব্যবসায়ী এবং আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আবু জাফর মাহমুদ বলেছেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে দেশের ছাত্র সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের শিক্ষাঙ্গনে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম যেমন ব্যহত হচ্ছে, তেমনী নতুন নেতৃত্বও তৈরী হচ্ছে না। সময় এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক ও প্রশাসনকে রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত রাখার। রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন সময়ের দাবী। আর এটাই সময়ের দাবী, আমাদের অঙ্গীকার। খবর ইউএনএ’র।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা গত ১৯ নভেম্বর শনিবার সিটির কুইন্সের ফাইভ স্টার হোটেল লাগোর্ডিয়া প্লাজার বল রুমে ‘অ্যালামনাই নাইট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ আনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যুক্তরাষ্ট্রে চবি এলামনাই গঠনের ২৯ বছর পুর্তি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি ও এলামনাইদের আড্ডা, আলোচনা আর অনুষ্ঠানে উঠে আসে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নানা ঘটনা আর স্মৃতি। ফলে অনুষ্ঠানস্থল হয়ে উঠে এক টুকরো চবি ক্যাম্পাস, এলামনাইদের মিলন মেলা। এতে নিউইয়র্ক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে এলাইমনাইরা অংশ নেন। উল্লেখ্য, প্রবাসে বিগত ২৯ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন এতবড় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করলো, যা সকলের দৃষ্টি কাড়ে। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে নানা অনুষ্ঠান। সিনিয়র-জুনিয়র এলামনাইরা নেচে-গেয়ে আনন্দে পুরো অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বিশ্ববিদ্যায়ের লগো সম্বলিত কোটপিন উপহার দেয়া হয়।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং বংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকবাল ফারুক। এই পর্বে সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ আহমেদ, ‘এলামনাই নাইট ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ আয়োজক কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর শাহ নেওয়াজ ডিকেন্স, সদস্য সচিব আব্দুল আউল শামীম শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখার পর মূল বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে হোম কেয়ার সার্ভিসের প্রবক্তা এবং বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার সার্ভিসের কর্ণধার, অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক আবু জাফর মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে জুম ভিডিওতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শিরিন আখতার। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রফেসর ড. রহমান নাসির উদ্দিন। অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে আরো শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান, এটর্নি মঈন চৌধুরী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ও পরেশ সাহা, চবি এলামনাই যথাক্রমে রানা ফেরদৌস চৌধুরী, মীর চৌধুরী (নিউজার্সী), ববি চৌধুরী, হেলাল চৌধুরী, আনোয়ারুল করিম, বিষ্ণ গোপ, আবু তাহের (টেক্সাস), সেকেন্দার চৌধুরী (ডালাস), শামীম আল মামুন, পলি পারভিন, কিরন কবির, শাহেদ আলী, রাহি ইয়াহিয়া, নুর ইয়াহিয়া, ইরফানুল কবির (ডালাস), সুশ্রীত চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে এলামনাই এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাকালীন সকল সদস্য এবং বর্তমান নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। যৌথভাবে সমগ্র অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন শাহেদ আলী ও ছন্দা বিনতে সুলতান।
অনুষ্ঠানে আবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার আগে যারা একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গৌরবান্বিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ দেশ ও জাতির কল্যাণে বড় ধরণের অবদান রেখে চলেছে।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক সংকীর্ণতায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার মূল চেতনার অপমৃত্যু ঘটে। একে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে দলীয় লেজুরবৃত্তিমুক্ত ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোকে রজনৈাতক দলের প্রভাব ও বলয়মুক্ত করতে হবে। তবেই না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান চর্চা ও নেতৃত্ব তৈরির কারখানায় পরিণত হবে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে স্বাধীন বাংলাদেশের যতটুকু অর্জন তাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রদেরও অবদান রয়েছে।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, দেশ আমাদেরকে অনেক দিয়েছেন, এখন দেশকে দিতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে। তাদেরকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করার সময়ে এসেছে। আমরা প্রবাসে বসেও বাংলাদেশের সুন্দর উত্তোরনের জন্য কাজ করতে পারি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শিঘ্রই বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভালো কিছু আসবে।
এর আগে জাহাঙ্গীর শাহনেওয়াজ ডিকেন্স তার বক্তব্যে আবু জাফর মাহমুদের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও কার্যক্রম তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আবু জাফর মাহমুদ এক অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী, সাবেক ছাত্রনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। তিনি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উজেলার সন্তান। দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্ক প্রবাসী। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ জাতির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি তার সাহসিকতার সাথে মুক্তিযুদ্ধে ‘মাউন্টেন ব্যাটেলিয়ন কমান্ডার’-এর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা আবু জাফর মাহমুদ একজন লেখক, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক। সফল ব্যবসায়ী আবু জাফর মাহমুদ নিউইয়র্কে হোম কেয়ার ব্যবসায় অগ্রদূত। কমিউনিটির বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষে গড়ে তুলেছেন দুটি প্রতিষ্ঠান ‘বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার সার্ভিস’। আবু জাফর মাহমুদ দীর্ঘ তিন দশক ধরে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। পাশাপশি মূলধারার রাজনীতিতে জড়িত এবং কুইন্স কমিউনিটি বোর্ড-৪ এর অন্যতম সদস্য।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পর্বে ছিলো নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি আর সঙ্গীত। সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভিন, চন্দন চৌধুরী ও সায়রা রেজা। অন্যান্য পর্বে অংশ নেন নারমিন হায়দার, মাহুরুহ, সায়রা জাকের, লায়লা কিরণ, প্রতি দাস, রবি চৌধুরী, রওশন হাসান প্রমুখ।
এই পর্ব উপস্থাপনায় ছিলেন রাহি ইয়াহিয়া। অনুষ্ঠানটি উপলক্ষ্যে ‘শাটল ট্রেন’ শীর্ষক একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। ম্যাগাজিনটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন প্রফেসর ড. রাহমান নাসির উদ্দিন। সবশেষে ছিলো নৈশ ভোজ। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনের চার্চ এভিন্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। এর প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন আবু জাফর মাহমুদ এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাহাঙ্গীর শাহ নেওয়াজ ডিকেন্স। আরো উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ মাইল দূরে হাট হাজারিতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২৭ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।