নিউইয়র্ক (ইউএনএ): অবশেষে নিউইয়র্কে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা, ইনক এর নিজস্ব ভবন উদ্বোধন হলো। অবসান হলো সকল জল্পনা-কল্পনার। রোববার (৮ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় ভবনটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর উদ্বোধন হয়। এতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী সিলেটবাসীসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। খবর ইউএনএ’র।
উল্লেখ্য, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বিদায়ী কমিটির সভাপতি হেলাল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শেফাজ ও কোষাধ্যক্ষ মইনুল ইসলামের (বর্তমান সাধারণ সম্পাদক) প্রচেষ্টায় কুইন্সের এস্টোরিয়ায় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ডলারে ভবনটি ক্রয় করা হয়। সংশ্লিস্টদের মতে এই ভবন ক্রয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান মইনুল ইসলামের। ভবন ক্রয় ছিলো তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও। যদিও ভবনটি ক্রয় প্রক্রিয়া নিয়ে মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনেকেরই নানা অভিযোগ ছিলো। তারপরও ভবনটি হয়েছে এতেই অনেকে খুশি। আর এই ভবন উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে মইনুল ইসলামের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলো।
অপরদিকে ব্যক্তিগত নামে ক্রয় করা ভবন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের নামে হতে পারে না বলে সভাপতি বদরুল হোসেন খান সহ কার্যকরী কমিটিতে তার সমর্থকরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। ফলে তারা ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন বলে এসোসিয়েশনের কেউ কেউ মনে করছেন।
এদিকে এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শওকত আলীর সভাপতিত্বে ‘জালালাবাদ ভবন’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ট্রাষ্টি বোর্ডের সাবেক সদস্য মনজুর আহমেদ চৌধুরী, সিলেট সদর থানা সমিতির সভাপতি রানা চৌধুরী, সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সাবেক কোষাধ্যক্ষ আতাউল খান আসাদ ও সাবেক প্রচার সম্পাদক এম এ করিম সহ জুনেদ খান, দুলাল মিয়া (হাজী এনাম), খলিল আহমেদ, আসাদ উদ্দীন, শেফাজ, শেখ জামাল হোসাইন, এম এন মজুমদার, এ এফ এম মিসবাহউজ্জামান, আব্দুল জব্বার, মাসুক মিয়া, পংকি মিয়া, মাওলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকী, রুমানা আহমেদ, মনির আহমেদ, জালাল আহমেদ, শাহ মিজান, ফারুক শামীম, মোদাব্বির হোসেন, আব্দুল রাজা, হাজি আব্দুল জব্বার, শামসুল ইসলাম, আযম চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা ভবন ক্রয়ের জন্য বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জালালাবাদ এসোসিয়েশন নিয়ে আমাদের মাঝে কোন বিরোধ নেই। সবার সহযোগিতায় জালালাবাদ এসোসিয়েশন ভবন হয়েছে, আমাদের স্থায়ী ঠিকানা হলো। এই ভবন যতদিন থাকবে ততদিন মইনুল ইসলামের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কেননা তার বিশেষ সহযোগিতায় ভবনটি ক্রয় হয়েছে। বক্তারা সকল দ্বিধা-বিভক্তি ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এসোসিয়েশনকে আরো শক্তিশালী করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
জবাবে সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম আজ জালালাবাদবাসীদের স্বপ্ন পুরণ হলো। এজন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের ভুল-ত্রুটি হতে পারে, কিন্তু ভবন হয়েছে। এই ভবন সকল জালালাবাদবাসীর। তিনি বলেন, জালালাবাদ ভবনের মর্টগেজ মাসে সাড়ে ৫ হাজার ডলার। ২টি ফ্লোর থেকে ভাড়া পাচ্ছি বা পাবো মাসে সাড়ে ৬ হাজার ডলার। এ দিক থেকে আমরা লাভে আছি। ভবনের ওয়াকিং বেজমেন্ট সংগঠনের অফিস হিসেবে ব্যবহার হবে। জালালাবাদ ভবন চলবে নিজস্ব আয় থেকেই। বেজমেন্টের হল রুমটি সিলেটের ১১টি উপজেলাবাসীর জন্য উন্মুক্ত। তারা বিনা অর্থে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
আারো উল্লেখ্য, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান সহ বর্তমান কমিটির অনেকেই ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে জালালাবাদ এসোসিয়েশনে কেউ কেউ বিভক্তি বা ভাঙ্গণের আভাষ পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা, ইনক এর প্রচার সম্পাদক ফয়সল আহমদ কর্তৃক ৭ জানুয়ারী, শনিবার (৭ জানুয়ারী) প্রেরীত ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনকে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র ভবনের নামে অপপ্রচারের প্রতিবাদে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র প্রতিবাদ’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে: ‘যুক্তরাষ্ট্রস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের নিজস্ব কোন ভবন নেই। বর্তমান কার্যকরী কমিটি, প্রাক্তন কার্যকরী কমিটি কিংবা সম্মানিত উপদেষ্টা পরিষদ কারো দ্বারা এ ধরনের প্রক্রিয়াও গ্রহণ করা হয়নি। কতিপয় ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজস্ব নামে ক্রয়কৃত ভবনকে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের ভবন হিসেবে পরিচিতি দিতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে বলে আমরা জ্ঞাত হয়েছি। আমরা জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক এর কার্যকরী কমিটি এ ধরনের হীন উদ্দেশ্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ধরনের অযাচিত উদ্যোগ প্রবাসী বৃহত্তর সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত সুশৃংখল ও ঐতিহ্যবাহী মানবিক সংগঠনকে বিতর্কিত এবং বিশৃঙ্খল সংগঠনে পরিণত করার স্বার্থান্বেষী অপচেষ্টা বলে মনে করি। কোন অপশক্তি দুষ্টচক্র কর্তৃক বৃহত্তর সিলেটবাসীর ঐক্য- সংহতির প্রতীক, বিশ্বময় সমাদৃত এ মহতি সংগঠনের নামে অপপ্রচার থেকে সাবধানতা ও দূরত্ব বজায় রাখতে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে আহবান জানাচ্ছি।’