নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ফেডারেশন অব বাংলাদেশীজ এসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা-ফোবানা’র একাংশের বিরুদ্ধে অপরাংশের দায়ের করা মামলা মাননীয় অদালত খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে বিভক্ত ফোবানা ঐক্যবদ্ধ করার সময় এসেছে। এজন্য উভয় মহলের আন্তরিক উদ্যোগ আর সহযোগিতা প্রয়োজন। ফোবানা ষ্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান ও কার্যকরী সেক্রেটারী কাজী সাখাওয়াত হোসেন আযম নেতৃত্বাধীন ফোবানার নেতৃবৃন্দ নিউইয়র্কে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। খবর ইউএনএ’র।
সিটির জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে গত ৩১ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাথেন ফোবানা ষ্টিয়ারিং কমিটির কার্যকরী সেক্রেটারী কাজী সাখাওয়াত হোসেন আযম। এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোবানার ভাইস চেয়ারম্যান আলী ইমাম শিকদার। পরবর্তীতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ফোবানা ষ্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান, ফোবানা কনভেনশন-২০১৯ এর কনভেনর শাহ নেওয়াজ ও সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ সহ ডা. মাসুদ রহমান, গিয়াস আহমেদ, কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন ও আলী ইমাম শিকদার। এসময় ফোবানা কর্মকর্তাদের মধ্যে সৈয়দ এনায়েত আলী, ওয়াহিদ কাজী এলিন, মাকসুদুল হক চৌধুরী, ডা. নার্গিস রহমান, শাহাদৎ হোসেন সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে করোনায় মৃত্যুবরণকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ জানিয়ে বলেন, ফোবানা এই নিউইয়র্কের ৮টি স্পটে এন্টি বডি টেষ্টের ব্যবস্থা করেছে। এই সব টেষ্টে বিপুল সংখ্যক দেশী বিদেশীরা অংশগ্রহণ করেছেন। ফোবানা নর্থ আমেরিকায় বাংলাদেশী জনমানুষের বহু বছরের একটি পুরানো এবং ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। ২০১৯ এর নিউইইয়র্কস্থ ফোবানা কনভেনশন ছিল সকল দিক থেকে একটি সফল ফোবানা কনভেনশন। সকল বিবেচনায় আমরা আমাদের কনভেনশন স্বার্থকভাবে সম্পন্ন করে ছিলাম। উল্লেখিত কনভেনশন করতে গিয়ে আমাদের লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করতে হয়নি। আমরা লক্ষ লক্ষ ডলারের শ্রাদ্ধ এবং লক্ষ লক্ষ ডলারের ঋণের চাকার নীচে পড়ে পিষ্ঠ হইনি। শোনা যায়, ফোবানা করতে গিয়ে, ঋণের বেড়াজাল থেকে আজও কারো কারো মুক্তি মিলেনি। অনেকে পাওনা টাকার জন্য ধরণা দিচ্ছেন। এনিয়ে আপনাদের ও আমাদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন উকি ঝুঁকি দিয়েছে। এত বড় কনভেনশনের পর প্রশ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক। এই সব নিয়ে আপনাদের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও নানাবিধ সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় যে, নর্থ আমেরিকায় পাল্টা পাল্টি ফোবানা কনভেনশন, ফোবানার বিভক্তি/বিভাজন নিয়ে আমরা আপনাদের ও কমিউনিটির কাছে সব সময় বিব্রত বোধ করি। আপনারাও কমিউনিটির এই বিভক্তি ও বিভাজন নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত। তা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করছি। কিন্তু আমরা এই বিভক্তি না চাইলেও একটি না অবুঝ চক্রের নানা কর্মকান্ডের কারণে আমরাও এর থেকে পরিত্রান পাচ্ছি না।
গত ২০১৯ এর নিউই্য়র্কস্থ ফোবানা কনভেনশনকে কেন্দ্র করে বিভক্তমান একটি পক্ষ আমাদের কনভেনশন বন্ধ করার জন্য প্রথমেই নিষেধাজ্ঞা জারী করার লক্ষ্যে আদালতে দরখাস্ত প্রদান করলে বিজ্ঞ আদালত তাদের আবেদন বাতিল করে দেয়। তারপরও জনগণের কাছ থেকে সংগৃহিত টাকার এক বিপুল অংশ খরচ করে পুনরায় মামলা করেন।
এই মামলায় ফোবানার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মেদ আলী ইমাম শিকদার, ফোবানার কার্যনির্বাহী সেক্রেটারী কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম, প্রাক্তন চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান সালু, ২০১৯ ফোবানা কনভেনশনের কনভেনর শাহ নেওয়াজ, মেম্বার সেক্রেটারী ফিরোজ আহমেদকে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ করার উদ্দেশ্যে সরাসরি বিবাদী করা হয়েছিল। প্রতিপক্ষ আমাদের উল্লেখিত কনভেনশন বন্ধ করা এবং ক্ষতিপুরনের টাকা দাবী করেছিলেন। উল্লেখিত সকল মামলা গত ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে বিজ্ঞ আদালত খারিজ করে দিয়েছে। তাদের দায়েরকৃত সকল মামলায় বিজ্ঞ আদালত সমাজ কল্যানে একচ্ছত্র নেতৃত্বের অধিকার যুক্তিসংগত মনে করেননি বিধায় তাদের সকল আবেদন বাতিল ঘোষনা করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা এতে তাদের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। তারপরও তারা ফোবানাকে নিয়ে অপ্রয়োজনীয় টানা হেঁচড়া করেই চলেছেন। তারা আমাদের বহু বছরের ঐতিহ্যবাহী ফোবানাকে জনগনের আদালত থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত আদালতের কাঠগড়ার নিয়ে দাঁড় করিয়েছেন। ব্যাপারটা এমন দাড়িয়েছে যে, অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে নিজের নাক কাটিয়েছেন। আমাদের সম্মেলন বন্ধ করতে এই পর্যন্ত তিনবার তারা আদালতে গিয়েছেন এবং তিনটি মামলায় তারা পরাজিত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়: ফোবানা সম্মেলন ২০১৯ সমাপ্তির পরপরই বিভক্তমান ফোবানাকে পুনএকত্রিকরণের প্রচেস্টা চালাই। আমাদের পক্ষ থেকে সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান আলী ইমাম সিকদার ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী কাজী সাখাওয়াত আজমকে আলোচনার মাধ্যমে ফোবানাকে একত্রিকরণের সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই প্রারম্ভিক আলোচনা অনেকটাই সামনের দিকে এগিয়ে এসেছিল। এক পর্যায়ে এই আলোচনাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং ঐক্যের আলোচনা অর্থবহ করে তোলার লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে সম্মানিত আট সদস্যকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করে (দুই পক্ষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে) এবং তাদেরকে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য পুর্ণক্ষমতা প্রদান করে, অফিসিয়ালী সম্মানিত চেয়ারম্যান শাহ এম. হালিম এর কাছে পত্র প্রেরণ করি। উত্তরে তারাও অনুরূপ একটি পত্র প্রদান করেন যার মধ্যে প্রতিনিধিদেরকে ঐক্য প্রক্রিয়ার কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি।
এরপর ঐক্য আলোচনার আর অগ্রগতি হয়নি। এর কিছুদিন পর অক্টোবর ২/৩ তারিখে মামলার রায় আমাদের হাতে আসে। এই রায়ে তাদের মামলা খারিজ হওয়ার পরও ঐক্যের প্রয়োজনের ব্যাপারে আমাদের মনে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। আমরা আগেও মনে করেছি এখনও মনে করি আলাদা আলাদ ফোবানা করে যেতে পারবো, কিন্তু কোন দিনই বিভক্ত থেকে ফোবানার যৌক্তিক পরিণতিতে পৌছাতে পারবো না। এই উপলব্দি থেকেই অন্য পক্ষের চেয়ারম্যান শাহ এম. হালিমকে ১৪ অক্টোবর ফোন করে ঐক্য প্রচেষ্টা পুুনরায় চালুর অনুরোধ করি। তিনিও এ ব্যাপারে সহমত পোষন করেছেন। আলোচনার ভিত্তিতে আমরা ঐক্যমতে পৌঁচেছি যে, শীঘ্রই একটি ভার্চুয়াল মিটিং এর ব্যবস্থা করবো এবং পর্যায়ক্রমে ফোবানার ঐক্য পুনস্থাপিত করবো।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, আমরা বিভক্ত এটাও যেমন সত্য, তেমনী আমরা কমিউনিটির স্বার্থে ঐক্য চাই। আর এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের। আমরা যারা কমিউনিটিকে কিছু দিতে চাই বা কমিউনিটির জন্য কাজ করতে চাই। তাই আমাদের প্রত্যাশা মামলায় কে হারলো বা জিতলো সেটা বড় কথা নয়, আমরা ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটিকে গুরুত্ব দিতে চাই। ঐক্যের প্রয়োজনে আমি ব্যক্তিগতভাবে অপর অংশের চেয়ারম্যানকে ফোন করেছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে শাহ নেওয়াজ বলেন, আমরা আদালতের পর্যবেক্ষন আর সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে ঐক্য প্রকিওয়াকে এগিয়ে নিতে চাই।
ডা. মাসুদ রহমান বলেন, ফোবানা কনভেনশন-কে একটি সফল সম্মেলন হিসেবে রূপ দিতে শুরু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয় আলোচনা, সেমিনার প্রভৃতি অনুষ্ঠানও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানে সভাই যোগ দেন না এবং এসব অনুষ্ঠান সবার জন্যও নয়। তাই ফোবানা কনভেনশনকে ছোট করে বা শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নির্ভর বলা সমচিন নয়।
এক প্রশ্নের উত্তরে গিয়াস আহমেদ বলেন, আমরা সবসময় ঐক্যের পক্ষে, আগে ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু অন্যরা ঐক্য চান না। তারা কমিউনিটির বিভক্তি চান বলেই মামলা করেন। আমরা মামলায় জয়ী হয়েও ঐক্যেও পক্ষে। এখন তাদের বোধদয় হবে বলেই বিশ্বাস রাখি। কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন বলেন, আমরা অতীতের মতো এখনো কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সবাই মিলে কাজ কতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।