নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নজিরবিহীন নিরাপত্তায় বাক-বিতন্ডার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার জামে মসজিদের সাধারণ সভা। সভায় বিক্ষুব্ধ মুসুল্লিদের প্রচন্ড বিক্ষোভ আর হৈ চৈ-এর মুখে বর্তমান কার্যকরী কমিটিকে দ্বায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মসজিদ পরিচালনা কমিটির দ্বায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছে ট্রাস্টিবোর্ডের কাছে। একই সাথে গঠন করা হয়েছে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন ইসি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা এবং নব নির্বাচিত কমিটির কাছে বর্তমানের বাতিল কমিটি হিসাব নিকাশ সহ দ্বায়িত্বভার বুঝিয়ে দেবেন। উল্লেখ্য, সভায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পূর্ব থেকেই মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ দেয়া হয়। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বেই তারা মসজিদের প্রবেশ পথ ছাড়াও পেছনের দরজায় দরজায় অবস্থান নেয়। খবর ইউএনএ’র।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় মসজিদের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন মসজিদের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন বিদায়ী সভাপতি মোশতাক আহমেদ চৌধুরী। চারঘন্টাধিক ধরে অনুষ্ঠিত সভায় বিপুল সংখ্যক মুসুল্লি অংশগ্রহন করেন। সভায় গঠিত নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা হলেন যথাক্রমে বীর মুক্তিযাদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী, সালিক সিকদার, নজরুল হক, আলমাছ আলী এবং আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী জাকির।
সভা সূত্র জানায়, সভার শুরু থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে উত্তেজনা দেখা দেয়। বক্তাদের প্রায় প্রত্যেকেই মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বর্তমান কমিটি বাতিল, ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে ক্ষমতা অর্পণ, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং মসজিদের বর্তমান অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনেরও দাবী জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যানের মাঝে বক্তব্য রাখেন আব্দুল হাসিম হাসনু, আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী জাকির, সৈয়দ শারফিন মোর্শেদ, আলমাছ আলী, তারেক আলী, রিয়াজ উদ্দীন কামরান, আব্দুস শহীদ, হারুন আলী, সালিক সিকদার, নজরুল হক, সৈয়দ আল ওয়াহিদ নাজিম, সাব্বির কাজী, জামাল হোছাইন, আব্দুর রহিম বাদশাহ, নুরুল আহিয়া, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল মতিন, আকাদ্দেস বাবুল, রেজাউল ইসলাম প্রমুখ। শেষে মসজিদের সর্বিক সাফল্য কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
আরো উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মসজিদের প্রাক্তন কমিটির ৮ জন কর্মকর্তা এক সংবাদ সম্মেলনে পার্কচেস্টার জামে মসজিদের বর্তমান কমিটি সদস্য সংগ্রহের ৬৫ হাজার ডলার মসজিদ ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজেরা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া অবৈধ ভোটার লিস্ট দ্বারা ভোটে বিজয়ী বর্তমান কমিটিরও কোন বৈধতা নেই বিধায় এই অবৈধ কমিটি বাতিল করে পুরাতন কমিটির হাতে দ্বায়িত্বভার অর্পণের পাশাপাশি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানানো হয় ঐ সংবাদ সম্মেলনে। একই সাথে আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারের ব্যাপারে ট্রাস্টি বোর্ডকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানানো হয় ।
এদিকে ব্রঙ্কসের পার্ক চেষ্টার মসজিদ সহ নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত একাধিক মসজিদ পরিচালনা কমিটির অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় কমিউনিটির সচেতন মহল সহ মুসুল্লীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান-কে দূর্নীতি আর স্বজনপ্রিয়তা মুক্ত রাখার দাবীর পাশাপাশি নেতৃত্বের কোন্দল বন্ধের দাবী জানান।