নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিধি বাড়ার সাথে সাথে আমেরিকার মূলধারার বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশীদের অবস্থান সুদৃড় হচ্ছে। আমেরিকায় বাংলাদেশী প্রথম প্রজন্ম পেরিয়ে দ্বিতীয় প্রজন্ম ডাক্তার, ইঞ্জনিয়ার, ব্যবসায় এমনকি রাজনীতি সহ সকল শ্রেনী ও পেশায় নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। সবমিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটির উজ্জল ভবিষ্যৎ লক্ষণীয়। এদিকে মহামারী করোনাকালে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত চিকিৎসকগণও মানব সেবায় অবদান রেখে প্রশংসিত হচ্ছেন। ডা. আফসানা রহমান এমনি এক উদীয়মান বাংলাদেশী-আমেরিকান চিকিৎসক যিনি আমেরিকানদের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশী সহ দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চান। খবর ইউএনএ’র।
বাংলাদেশের শরিয়তপুর সদরে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশী-আমেরিকান চিকিৎসক আফসানা রহমান এমডি। ২০১৭ সালে ডাক্তারী পাশ (মেডিসিন) করে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন নিউইয়র্কের নর্থশোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে। তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্স এন্ড বাইয়ো কেমিষ্ট্রিতে মেজর সহ ষ্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক ডাউনষ্টেট মেডিক্যাল স্কুল থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিগ্রি লাভ করেন। আর রেসিডেন্সী গ্রহণ করেন মন্টিফিউর মেক্যিাল সেন্টার থেকে। নর্থশোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল/লং আইল্যান্ড জুইস হাসপাতাল-এর কার্ডিওলোজি ফেলোশীপ ডা. আফসানার স্বামী মঈনুদ্দীন চৌধুরী (এমএস, এমপিএইচ), পেশায় সাইন্টিস্ট। বাবা আমিনুর রহমান রুবেল আর মা ফেরদৌসী রহমানের হাত ধরে ৬ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হন। তার এক ছোট ভাই (মাহিনুর রহমান শান্ত) রয়েছে। স্বামী বায়োলজিষ্ট মঈনুদ্দীন চৌধুরীর সাথে বসবাস কুইন্সের এলমহার্স্ট। আফসানা রহমান মা-বাবার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন পূরণে হয়েছেন ডাক্তার।
তার ছোট ভাইকে নিয়ে মা-বাবা বসবাস করেন কুইন্সের জ্যামাইকা। বাবা আমিনুর রহমান রুবেল বাংলাদেশ- আমেরিকান সোসাইটির সহ সভাপতি এবং শরিয়তপুর সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সহ সভাপতি। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বসবাসকারী ডা. আফসানার শশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর (অব:) মোহাম্মদ আলী আর শাশুরী রেহানা বেগম। তারা উভয়ে নিউইয়র্কে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত। এদিকে ব্যক্তিগত জীবনে আফসানা মা-বাবার মতো সংস্কৃতিমনা মানুষ। তার শখ মৃৎ শিল্পের আর্ট করা আর গান গাওয়ার পাশাপাশি ভ্রমণ। ইতিমধ্যেই বিশ্বের ১১টি দেশ সফল করছেন। ক্লাসিক গানও তার খুব প্রিয়। তবে নিয়মিত নন, মাঝে-মধ্যে গান গেয়ে থাকেন। ডা. আফসানা পেশাগত কাজে উগান্ডা ও নেপালে এক মাস করে সেখানকার হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়েছেন। নিউইয়র্কের হাসপাতালে ডা. আফসনা রহমান আর তার স্বামী মঈনুদ্দীন চৌধুরী কাজ করছেন ল্যাবে। বলা যায়, স্বামী-স্ত্রী মিলেই লড়ছেন করোনা রোগীদের সুস্থ্য করার মহৎ সেবায়।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা ইউএনএ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে ডা. আফসানা রহমান জানান, মানব সেবার ব্রত নিয়ে আফসানা রহমান সেবা দিয়ে যাচ্ছেন রোগীদের। করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। সে সময় এক কঠিন সময় পার করতে হয়। পরবর্তীতে করোনা জয়ী হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। অতি সম্প্রতি নিয়েছেন করোনা ভ্যাকসিন।
ডা. আফসানা রহমান জানান, করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নেয়া প্রয়োজন। এতে কোন ভয় নেই। তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই। তিনি সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই প্রবাসী বাংলাদেশী সহ সকল আমেরিকানকে ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান জানান।
গর্বিত কন্যা ডা. আফসানাকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই মা ফেরদৌসী রহমান ও বাবা আমিনুর রহমান রুবেলের। তারাও চান তাদের মেয়ে মানুষের সেবা করুক, আজীবন মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকুক।
ফেরদৌসী রহমান ইউএনএ প্রতিনিধি-কে জানান, ছোট বেলা থেকেই আফসানা লেখাপড়ায় ভালো ছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ডাক্তারী পড়া সহজ নয় এবং ব্যয়বহুল। কিন্তু আফসানাকে ডাক্তারী পড়াতে আমাদের তেমন কষ্ট হয়নি। মেয়েটা পড়াশুনায় ভালো হওয়ায় নিজের চেষ্টা বলেই সবসময় ভালো ফল করেছে। এমনকি স্কলারশীপও পেয়েছে। আমরা শুধু গাইড দিয়েছি। তিনি বলেন, সন্তানদের সঠিক সময়ে সঠিক গাইড লাইন দেয়াটাই আভিভাবকদের প্রথম ও প্রধান কাজ।
বাবা আমিনুর রহমান রুবেল বলেন, আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কন্যা আফসানার কাছে প্রত্যাশা সে তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে আমেরিকানদের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষদেরও সেবা দিয়ে সবার স্বপ্ন পূরণ করবে। বিশেষ করে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটির পাশে থেকে আফসানা কাজ করবে। পাশাপাশি কন্যার যেকোন ভালো উদ্যোগে তিনি সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মানতার সেবার জন্য নববিবাহিত স্ত্রী ডা. আফসানার আগ্রহ ও উৎসাহে গর্র্বিত তার স্বামী মঈন উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আফসানার মতো স্ত্রী পেয়ে আমি হ্যাপী। মানবতার সেবায় সে ভালো করুক, অবসন রাখুন এটাই আমার কামনা।
ডা. আফসানা রহমান ভবিষ্যতে কার্ডিওলোজী বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা দিতে চান। চান আমেরিকার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে। এজন্য জন্মস্থান শরীয়তপুরে গড়তে চান ক্লিনিক বা হাসপাতাল।