আপনি পাবনায় থাকেন অথচ এই বর্ষাকালে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার,প্রিয়জন কে নিয়ে ঘোরার জায়গা খুজছেন? তাহলে দেরী না করে চলুন এখনই জেনে নেই এই বর্ষায় একটু অবসর সময় কোথায় কাটাতে পারেন।
বর্ষাকালে বাংলার প্রকৃতি এক নতুন রূপ লাভ করে। যে আশ্চর্য রূপের একটি অংশ পাবনা জেলাকেও নতুন সৌন্দর্য দান করে। আমরা সবাই জানি পাবনা জেলায় অসংখ্য নদী-নালা,বিল বয়ে গেছে। এর মধ্যে পদ্মা,যমুনা,ইছা
১.বাউনজানি রেলব্রিজ,দিলপাশ
২.গাজনার বিলঃ গাজনার বিল (Gajnar Bil)
গাজনার বিল (Gajnar Bil) পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ও দর্শনীয় স্থান। সরু একটা পাকা রোড একে বেকে চলে গেছে বিলটাকে দুভাগ করে, রাস্তার দু পাশে যতদুর চোখ যায় বিস্তৃর্ণ পানি আর পানি। বর্ষায় রাস্তা ছুঁইছুঁই করছে পানির ঢেউ। বিলের মাঝ দিয়ে উড়ে চলেছে অজস্র নাম না জানা পাখি। জেলেরা মাছ ধরে চলেছে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে। কখনো বা এক ঝাক বক উড়ে যায় আকাশ সাদা করে।খুব সকালে যেতে পারলে বিলের তাজা মাছ কেনা যাবে, খেয়া নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে ঘোরাঘুরি করা যাবে। পিওর প্রকৃতি প্রেমি হলে একটা দিন অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারেন এই অপরুপ বিলের মাঝে। এই বর্ষাই উত্তম সময় বিল দর্শনের।
৩.খয়রান ব্রিজঃ খয়রান ব্রীজ,পাবনা
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের খয়রান ব্রীজ(Khayran Bridge) প্রতিবছর বর্ষাকালে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ।গাজনার বিলের মাঝ দিয়ে চলে গেছে উপজেলার সাতবাড়ীয়া-চিনাখড়া প্রধান সড়ক। আর ওই সড়কের মাঝে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ।একসময়ে ব্রীজটি পানি প্রবাহ এবং মানুষ ও যানবাহন তথা নৌকা চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হলেও সময়ের পরিক্রমায় ব্রিজটি পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। এখানে আসা পর্যটকরা ব্রিজটির ওপরে মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজিয়ে হৈ চৈ করে গাজনার বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তা ছাড়া পর্যটকদের বিল ভ্রমণের জন্য ব্রিজের পাশেই রাখা হয়েছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পীডবোট। ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা বাণিজ্যিকভাবে চালানো ওই সকল নৌকা ও স্পীডবোড ভাড়া করে ইচ্ছামত বিল ঘুরে দেখেন।অনেকে আবার পরিবার পরিজন নিয়ে বিলের স্বচ্ছ পানিতে নেমে সাঁতার কেটেও আনন্দ করেন। বিলপাড়ের মানুষও বিল ভ্রমণ থেকে পিছিয়ে নেই। তারা বিকাল হলেই নিজস্ব নৌকা নিয়ে বিলে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন। তারা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত বিলে আনন্দ ভ্রমণ করেন।
৪.হার্ডিঞ্জ ব্রিজঃ হার্ডিঞ্জ ব্রীজ বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী থেকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা পর্যন্ত যুক্তকারী একটি রেলসেতু। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত। পাবনা জেলার পাকশী রেলস্টেশনের দক্ষিণে পদ্মা নদীর উপর এই সেতুটি অবস্থিত। বর্ষাকালে প্রমত্তা পদ্মা যখন তার নিজের রূপ ফিরে পায় তখন সে এই ব্রিজটিকেও তার সৌন্দর্যের কিছুটা দান করে। যার টানে বহু দর্শনার্থী প্রতিদিন ছুটে যায়। মুক্ত বাতাস,খোলা জায়গায় শহুরে জীবন ক্ষনিকের জন্য ভুলে যেতে পথ্য হিসেবে কাজ করে।
৫.হাটগ্রাম সোনালী সৈকতঃ গরিবের কক্সবাজার খ্যাত এই হাটগ্রাম সোনালী সৈকত। পাবনার ভাঙ্গুড়া-ফরিদপু
৬.সাতবাড়িয়া পদ্মার পাড়ঃ সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া পদ্মার পাড় সকলেরই পরিচিত একটি জায়গা। অপরূপ পদ্মার কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া সুবিশাল রাস্তা আপনাকে কক্সবাজারের মেরিনড্রাইভের অনুভূতি দান করবে।শুধু তাই নয় ঘাটে থাকা মেশিনের বোটে চড়ে আপনি নদীর বুকে জাগা চরে গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতে পারেন। এছাড়াও পাড়ের পাশেই কাঞ্চনপার্ক নামক জায়গাটি থেকেও খুব সহজেই আরও কিছু প্রাকৃতিক উপহার লাভ করতে পারেন।
৭.বেড়া পোর্টঃ ক্ষণিকের কালো মেঘ সরে আবারও নীলাকাশের দেখা পেতে হলে আজই আপনার যাওয়া উচিৎ পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার অবস্থিত বেড়া পোর্টে। এখানে একই সাথে পাবেন নীল আকাশে নানা ধরনের পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখার সুযোগ,সাথে এক জনকোলাহল মূক্ত একটি ঘাট দেখার সুযোগ।
৮.নগরবাড়ি ঘাটঃ ভিনদেশ জাহাজ বোঝাই মাল এসেছে সেই জাহাজ থেকে দলে দলে মানুষ মাল নামাচ্ছে। এটি চাদ সওদাগরের সপ্তডিঙার কথা বলছি না। পাবনা জেলার নগরবাড়ি ঘাটে গেলে এমন দৃশ্যই দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। ঘাটে থরে থরে জাহাজ দাড়িয়ে আছে ঠাই এবং সেখান থেকে বস্তা বস্তা বালু,ইট, পাথর নামানো হচ্ছে।এছাড়াও প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি এই নগরবাড়ি ঘাট যা দেখতে প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছে।
৯.ঢালারচর পদ্মা-যমুনা পয়েন্ট,কাশেম বাজারঃ
কখনো মিঠামইন গিয়েছেন? যদি না যান তাহলে আর টাকা খরচ করে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার প্ল্যান করবেন না। আপনার ঘরের পাশেই মিঠামইন আছে দেখুন।পাবনা জেলার আমিনপুর থানার ঢালারচর ইউনিয়নের কাশিম মোড়ে পদ্মা আর যমুনা নদীর মেলবন্ধনে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের দেখা পেতে চাইলে আপনার আজই এই কাশেম মোড় নদীর ঘাটে যাওয়া উচিৎ। আর যাওয়ার পথে একবারের জন্য আকাশের দিকে তাকালে মনে হবে আকাশের মেঘগুলো আপনার ছোয়া পাওয়ার জন্য নিজেকে সপে দিয়েছে। এছাড়া রাস্তার দুপাশে খোলা জায়গা আপনার মনকে ভালো করবেই করবে।
১০. শিলাইদহ ঘাটঃবিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই ঘাটটি পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার মেলবন্ধন।এটি মূলত খেয়া ঘাট হলেও পাবনার মানুষের কাছে এটি একটি পছন্দের জায়গা। তাই তো পাবনার মানুষ একটু অবসর পেলেই বলে,”এ ছ্যাড়া চল শিলাইদাহ ঘুড়ি আসি।”এই ঘাটের খোলা বাতাস আর পদ্মার কোল ঘেষে থাকা প্রাকৃতিক দৃশ্য সকলের মন কাড়ে। এছাড়া এই ঘাটে পাওয়া ইলিশ মাছ ভাজা অনেকের কাছে অমৃৎস্বরূপ।
পাবনা জেলায় এই ১০ টি দর্শনীয় স্থান ব্যতীতও আরও অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলো এখনো আমাদের অজানাই রয়ে গেছে৷ কিন্তু পাবনাবাসী হিসেবে আমাদের সকলের উচিৎ সেইসব স্থান গুলো সকলের সামনে তুলে ধরা। যাতে করে ভ্রমণপিপাসু মানুষ সেসকল জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। কেননা ‘ট্রাভেলার্স অব পাবনা ‘বিশ্বাস করে কোনো একদিন পাবনা জেলা দেশের একটি অন্যতম পর্যটন জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবে এবং দেশ-বিদেশের বহু পর্যটকের পদচারণায় পাবনা জেলা মুখরিত হবে।
সম্পাদনায়ঃ মেহেদী হাসান হিমেল, সমন্বয়ক, টাভেলার্স অফ পাবনা।