সৌমিত্র সুমন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পৌর শহরের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন। নেই পাকা সড়ক। বর্ষাকালে ট্রলারই একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। কলাপাড়া উপজেলার ১নং চাকামইয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কাঁঠালপাড়া গ্রাম। কাঁঠালপাড়া স্লূউজ ভিতর এবং বাহির পাশে সারিবদ্ধ হয়ে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে বরশি ফেলে মাছ শিকার করেন একদল মৎস্য শিকারী। সারাদিনের প্রাপ্ত মাছ ডোলের মধ্যে রেখে সকাল বেলা কলাপাড়া শহরে বিক্রি করতে নিয়ে যান তারা। আগে এখানে বড় বড় মাছ উঠলেও এখন তেমন একটা পাওয়া যায়না। তাই সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে খেয়ে পড়ে বাচঁতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাঠালপাড়া গ্রামের রশিদ মুন্সি, হামিদ সরদার, হানিফ হাওলাদার, নুরসায়েদ খান, মঞ্জুরুল হক, ইউসুফ সিকদার, কালাম আকন, নূর ইসালাম হাওলাদার, জাকির আকান, ফারুক আকন, শহীদুল গাজী, কামাল গাজী, সালেহাবাদ এলাকার প্রতিবন্ধী নজরুল, বাবুল ব্যাপারী, বারেক ব্যাপারী, শামসুদ্দিন, চুন্নু সিকদার, কড়ইবাড়িয়া এলাকার দুই পা বিহীন প্রতিবন্ধী জালাল ফকির, আফজাল সহ গান্ধাপাড়া, আনিপাড়া এবং চাউলাপাড়া এলাকার ৩৪ জন মাছ শিকারী এখানে মাছ ধরতে আসে। পানির জোঁ বুঝে চব্বিশ ঘন্টাই কেউ না কেউ এখানে থাকে।
কাঁঠালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৎস্যজীবী আবদুল হামিদ সরদার জানান, বয়স হয়ে গেছে তাই নদীতে মাছ শিকার করতে পারিনা। তিন বছর ধরে এখানে বরশি দিয়ে মাছ শিকার করছি। এক কেজি মাছ পেলে চারশো থেকে পাঁচশো টাকায় বেচতে পারি। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত কোনো জেলে কার্ড পাইনি। গত বছর মৎস্য কর্মকর্তা এসে নাম নিয়ে গেছে আর কোন খবর নেই।
মাছ শিকারে আসা দুই পা বিহীন প্রতিবন্ধী জালাল ফকির জানান, সংসার চালাতে নৌকায় বসে বরশি দিয়ে মাছ শিকার করছি। অন্য কোন কাজ করতে পারিনা। সকাল হলে কড়ইবাড়িয়া থেকে আমার স্ত্রী নৌকায় উঠিয়ে দেয়, আবার বড়িতে গেলে তুলে নেয়।
গলদা চিংড়ি, গুলসা, বগনি, কোড়াল, গাগঁড়া, পাঙ্গাশ, রুই, কাউন, পোয়া, বাইলা, কাঁকড়া সহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় এখানে। সারাদিন মাছ শিকার করে তারা চারশত থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে। কোন দিন কোন মাছ পাননা, আবার বড় মাছ পেলেতো কথাই নেই।
চাকামইয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির কেরামত হাওলাদার জানান, আমার ইউনিয়নে এই সকল মৎস্যজীবীদের সম্পর্কে আমি অবগত আছি। এরা যাতে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করে জীবীকা নির্বাহ করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা সহযোগিতা করছি। তিনি আরও জানান, সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা আসলে এদের পূনর্বাসন সহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহার কাছে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.মিজানুর রহমান জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বর্তমানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী (কাঁসারি, বাঁশ ও বেত শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত, কামার, কুমার, তাতী, নাপিত, বাউল শিল্পী) ১০টি পেশার মানুষের জরিপ চলছে। এদের মধ্যে এইসব পেশার মানুষের জন্য তালিকাভূক্ত করা যাবে। তিনি আরও জানান এদের মধ্যে উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে যারা প্রতিবন্ধী আছে তাদের সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হবে।