সকাল থেকে দুইটা মিটিং, শেষ অফিসে এসে ঘন্টাখানেক কাজ করে নিয়মিত ফাইলগুলোর রফা করতে করতে দুইটা বেজে গেল, আদিকে আরেকটা বিট পুলিশ সমাবেশ, লানচও করিনি, মুখে দুইটা খেজুর দিয়ে আর এক গ্লাস পানি খেয়ে ছুটলাম হাদল ইউনিয়ন, ফরিদপুর উপজেলার দিকে।সেখানে ঘন্টা দেড়েক বিট পুলিশ সমাবেশ সেরে, পাশেই শরৎগঞ্জ তদন্তকেন্দ্র আকস্মিক পরিদর্শন শেষ করে যখন গাড়ীতে উঠলাম তখন সূর্য মামা অস্তগামী, সকালের নাশতার ডিম পোচের মতই রঙ তার; পাবনা পুরাতন জেলা ; শহরটা ব্রিটিশ সময়কার, শহরে বা শহরপ্রান্তে গ্রামীন আবহ নেই একেবারেই, কুড়িগ্রাম যেমন নামে তেমনি চেহারায়ও এখনও গ্রামই আছে, গত দেড় পছরে ঘুরে ঘুরে দেখা সবুজ প্রকৃতি আর ষোলটি নদী মিস করি খুব।
সারাদিনের ক্লান্তিতে গাড়ীতেই একটু ঢুলছিলাম, ফরিদপুর থেকে ভাংগুড়ার দিকে চলেছি আমরা , রাস্তা ভূমি থেকে অনেক উচুতে, অনেক বাক নিয়ে সাপের মত এগিয়ে চলেছে; কিছুদুর যেতে দেখি গ্রামীন মেলার মত, চটপটি, ফুচকা আর মুড়িমুড়কির অস্থায়ী দোকানে বাচ্চাদের ভীড়, পাশে আলোকসজ্জা, গেইট আর মাইকে আরবী আওয়াজ শুনে বুঝলাম ছোটখাট মাহফিলই ( এখানকার লোকেরা বলেন জালসা) বিনোদনের মাধ্যম এখানে; এগুচ্ছিলাম; প্রকৃতির রুপ আহামরি কিছু না, আর দশটা গ্রামের মতই, কিছুদূর যেতেই চোখ কচলে তাকালাম; রাস্তা থেকে দুপাশের জমিগুলো অনেক নিচু; খোলা মাঠ যতদূর চোখ যায়,ধুধু প্রান্তর যাকে বলে; সূর্যের লালিমা, প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া সরিষা ফুলের মাঝে সবুজ ঘাসের গালিচা আর বিদ্যুতের দীর্ঘ খুটিতে ঝুলে থাকা হালকা কুয়াশার যে রুপ তা তুলে রাখতে চাইলাম মোবাইলের ক্যামেরায়, জানি সে চেষ্টা বৃথা, ছবিতে আসল রুপের কিছুই বোঝা যাবেনা, কাছাকাছি না দেখলে।জায়গাটার নাম জানিনা, পেছনের গাড়ীতে থাকা এএসপি সার্কেল সজিব গাড়ী থেকে নেমে কাছে আসতেই ওকে জিজ্ঞেস করে জানলাম এই জায়গার নাম সোনালী সৈকত, বর্ষাকালে রাস্তার দুপাশে পানি থইথই করে, মাঝখান থেকে পিচঢালা রাস্তা, রাসাতের দুইপারে নৌকাবাইচ হয় তখন, মানুষের সমারোহ বাড়ে, অনেকে বলে ঢাকার আশুলিয়া।
বর্ষায় সোনালী সৈকতের রূপ দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক : মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিপিএম- পাবনা পুলিশ সুপার,পাবনা ।