নব্বই দশকে কিশোর সালাম অভিনয় করতো চিকনাই হাইস্কুলের নাট্যমঞ্চে। চিকনাই হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে,এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাটকের হাতেখড়ি স্কুলজীবনে হলেও,পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা পেলেন “অনুশীলন নাট্যগোষ্ঠী” থেকে। এরপর বাস্তব জীবনে এই শিক্ষার প্রতিফলন ঘটালেন চিকনাই নদীর তীরে একটি থিয়েটার গড়ে তুলে।
বলছি,পাবনার চাটমোহরের মূলগ্রামের ‘চিকনাই থিয়েটার’ ও এর স্বপ্নদ্রষ্টা আব্দুস সালামের কথা। কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ও স্থানীয় নাট্যনুরাগীদের নিয়ে শুরু করেন এই গ্রাম থিয়েটার,১৯৯৪ সালে। এখন পর্যন্ত পাবনার একমাত্র সক্রিয় গ্রাম থিয়েটার। যারা পাবনার নাট্যশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নিয়মিত নাটক অনুশীলন ও মঞ্চায়ন করে যাচ্ছেন। স্থানীয় পর্যায়ে করেছেন ১২টির মতো নাট্যউৎসব,দেশে বিদেশে নিজেদের নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। গত পঁচিশ বছর নাটক প্রযোজনা করেছেন ত্রিশের অধিক,যার মধ্যে স্থান পেয়েছে নাট্যচার্য সেলিম আল দীনের ‘বাসন’, ‘দেয়াল’ ; কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিগিরি’র মতো নাটক। দলীয় নাট্যকর্মীদের নাটক লিখন ও পরিচালনে উদ্বুদ্ধ করতে সংগঠনের সদস্যদের লেখা নাটকের নাট্যরুপ দিয়েছেন,নাটক মঞ্চায়ণ করেছেন৷ সেসব নাটক হয়েছে দর্শক সমাদৃত, সমালোচকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
নাট্য দলের মূল শ্লোগান- “নাটক মােদের হাতিয়ার, শােষকেরা হুশিয়ার”। বর্তমানে গ্রামে গ্রামে যখন মাদকের করাল গ্রাসে তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে,মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে তখন প্রকৃতির এই অপ্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন তারা। চিকনাই থিয়েটার পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে,তাদের নাটকে উচ্চারিত ধ্বনিতে শোষকের বিরুদ্ধে চলছে, সংগ্রাম। পাবনার চাটমোহরে গ্রামে গ্রামে তৈরী হচ্ছে নাট্যকর্মী,মূলত সমাজকর্মী। যারা নাটকের মাধ্যমে সমাজের একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। চিকনাই থিয়েটার,পাবনার গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে পাবনাবাসীর মনে বেঁচে থাকবে তাদের কর্মে,ইতিবাচক পরিবর্তনের যে আন্দোলন সেই পথের সারথি হয়ে।
লেখকঃ আশেক মাহমুদ সোহান,সমন্বয়ক,ট্রাভেলার্স অফ পাবনা।