ফেইসবুক বিচরণে একটা লাভ আছে। সেটা হলো, মনে পাইয়ে দেওয়া। তো দুপুরে শুইয়ে শুইয়ে ফেইসবুক ঘাঁটছিলাম। একজনের স্ট্যাটাসে দেখলাম আগামীকাল, ২৭ আগস্ট, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। সাথে সাথে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। এই মহৎ কবির প্রয়ান দিবস উপলক্ষে আমার কিছু লিখতে ইচ্ছে হলো, যদিও জানি যে ফেইসবুক স্ট্যাটাসে see more দেখলে বাকিটা কেউ একটা খুব পড়ে না। বা পড়ার মতো হয় না বলেই পড়ে না। see more অনেকের কাছে don’t see more. (গোপনে বলে রাখি, আমিও প্রায় ঐ না-পড়ার দলে। একটা লেখা সময় না থাকলে বা টেনে নিয়ে না গেলে, আমার পড়া see more-এ গিয়েই থেমে যায়।)
ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলের জন্মদিন (২৫ মে) এবং মৃত্যুদিন (২৭ আগস্ট), আমি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন খুব ঘটা করে পালিত হতো। (এখনো নিশ্চয় হয়)। ২৪-এ মে সন্ধ্যায় নজরুল সম্মেলনের উপক্রমণিকা হিসেবে অনুষ্ঠিত হতো “কবিতা উৎসব”, যেটির অনুষ্ঠানস্থল ছিলো মনোরম ভাসমান তরী “সিন্ধু-সারস”। একবার পূর্ণিমা পড়েছিলো। কবিতা অনুষ্ঠানটা হয়েছিলো একশতে একশ। কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, কামাল-বিন-নাসের, আসাদ মাননান, নুরুল করিম নাসিম, শামীম রেজা, মাহবুবা ফারুখ ঢাকা থেকে আর ময়মনসিংহ থেকে অনিকেত শামীম সহ অনেকে যোগ দিতেন। ২৫ মে দিনব্যাপী নজুরল স্মরণে বক্তৃতা আর সেমিনার, আর সন্ধ্যায় জলসা। ২৬ শে মে হতো সমাপনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেলা। এই তিনদিন এত বড় উৎসবের আমেজ হতো যে দেখেছি ত্রিশাল গ্রামের বিবাহিত মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থেকে সস্বামী-পুত্রকন্যা নিয়ে পিতৃগৃহে নাইয়র আসতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানগুলি উপভোগ করার জন্য। মেলা বসতো খেলার মাঠে বা ”গাহি সাম্যের গান” মঞ্চের পাশে। বক্তৃতা অনুষ্ঠানে জাতীয়ভাবে পরিচিত কোন নজরুল বিশেষজ্ঞ বা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন, আর কোন শ্রদ্ধেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকতেন প্রধান অতিথি, কিংবা কোন কেন্দ্রিয় সচিবও উপস্থিত থাকতেন। ইউজিসির মাননীয় চেয়্যারম্যান সাহেবও সাগ্রহে যোগ দিতেন। আলোচনা সভাগুলো যেমন সমৃদ্ধ ছিল, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত স্মরণিকাও যথেষ্ট মানসম্পন্ন ছিলো। তবে সবচেয়ে বেশি জমতো সান্ধ্য জলসা, যেখানে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের গুণী শিক্ষকেরাতো গান পরিবেশন করতেনই, শিক্ষার্থীরাও করতো, আর ঢাকা থেকে আসতেন নামী-দামী নজরুল-সংগীত শিল্পী ফাতেমাতুজ জোহরা, শাহীন সামাদ, ফেরদৌস আরা, খাইরুল আনাম শাকিল, সুজিত মুস্তাফা, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। নজরুল সম্মাননা পুরষ্কার দেওয়া হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে দু’জন মনোনীত ব্যক্তিকে—একজন গবেষক এবং একজন সংগীতশিল্পীকে, যে অনুষ্ঠানটিও খুব জমতো। নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষকদের নির্দেশনায় নজরুলের লেখা নাটক, কিংবা তাঁর ওপর রচিত নাটক হতো। বাংলাদেশের একটি প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে নজরুলের জন্মোৎসব প্রকৃতই “সৃষ্টি সুখের উল্লাসে”-র প্রাণটা ধরে রাখতে পারতো। মৃত্যুর দিনও আলোচনা সভা হতো, আর একটা ভাবগম্ভীর পরিবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। এ দুটো অনুষ্ঠানেই পুরো বিশ্ববিদ্যালয়-পরিবার এককাট্টা হয়ে অনুষ্ঠানগুলি যাতে সর্বোত সফল হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতো আন্তরিকভাবে। (ওপরের অংশটি স্মৃতি থেকে লিখেছি, নামটামে ভুলভাল হতে পারে। ভ্রম সংশোধনযোগ্য।)
কিন্তু নজরুলকে নিয়ে এ মৌতাতের পাশাপাশি একটি কথা মন থেকে কখনো সরে যেতো না যে নজরুল ছিলেন চির দুখী। রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে বলেছিলেন যে ‘তোর জীবনে শেলীর মতো, কিটসের মতো দু:খ আছে।’ তো একদিন নজরুল যেখানে জায়গির থাকতেন ত্রিশালে সে বেচুতিয়া বেপারীর বাড়িটা ঘুরতে গেলাম। নামাপাড়া নামক গ্রামে, যেখানে সরকার একটি নজরুল যাদুঘর করেছেন। সে যাদুঘরের সঙ্গে লাগোয়া বাড়িটা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পায়ে হেঁটে পনের মিনিট। বাড়িটার এখনো সেই দারিদ্রক্লিষ্ট চেহারা, তবে নজর পড়ল, নজরুল যে ঘরে জায়গির থাকতেন সে ঘরটাতে। আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। মনের চাকা ঘুরিয়ে দিলাম একশত বছর আগে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটি তের/চৌদ্দ বছরের কিশোর বালক কী করে ত্রিশালের মতো অজ পাড়াগাঁতে একটি বছর থেকেছিলেন (মতান্তরে দেড়টি বছর, ১৯১৩-এর জুন থেকে ১৯১৪-র ডিসেম্বর) সেটি ভাবতেই গা শিউরে উঠল। তবে নজরুলের স্বাভাবিক চারিত্রিক সাহসের একটি পরিচয় পাই তাঁর “বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী” শীর্ষক রচনাতে। নিজের অজান্তে পন্ডিত মহাশয়ের স্ত্রী রাধার নামে ফোঁড়ন কাটাতে পন্ডিত মশাই তাঁর ওপর “আরে রে, দুর্বত্ত পামর” বলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। যদিও আজকে তাঁর মৃত্যুর দিন, তবে তাঁর রসবোধের উল্লেখ না করে পারছি না। বলছেন, “ক্রমে যখন দেখলুম, তাঁর এ প্রহারের কবিতায় আদৌ যতি বা বিরামের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না, তখন আর বরদাস্ত হ’ল না ! জানোতো, ‘পুরুষের রাগ আনাগোণা ক’রে’ আমিও তাই, ঐখানেই একটা হেস্তনেস্ত ক’রে দেবার অভিপ্রায়ে তার খাঁড়ার মত নাকটায় বেশ মাঝারি গোছের একটা ঘুষি বাগিয়ে দিয়ে বীরের মত সটান স্বগৃহাভিমুখে হাওয়া দিলুম।”
আমরা হয়তো অনেক বিখ্যাত লেখকের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস বা গল্প পড়েছি, কিন্তু পন্ডিত মশাইয়ের খাঁড়া-সম নাকে ঘুষি বাগিয়ে দিতে পারে সে কিশোরই, যে দূরদেশ ত্রিশালে এসেও একটি সময় অসম সাহসে থেকে যেতে পারে। পন্ডিত মশাই তাঁর বাপজানকে এসে নালিশ লাগালেন, তারপর তাঁর ওপর বাপের মাইর শুরু হলো। নজরুল লিখছেন, “চপেটাঘাত, মুষ্ট্যাঘাত, পদাঘাত ইত্যাদি চার হাত-পায়ের যত রকম আঘাত আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়েছে, সব যেন রবিবাবুর গানের ভাষায় ‘শ্রাবণের ধারার মত’ পড়তে লাগল আমার মুখের ’পরে—পিঠের ‘পরে। সেদিনকার পিটুনি খেয়ে আমার পৃষ্ঠদেশ বেশ বুঝতে পেরেছিল যে তার ‘পিঠ’ নাম সার্থক হয়েছে। একেই আমাদের ভাষায় বলে, ‘পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেওয়া’।”
নজরুলের “দারিদ্র” কবিতাটি একদিক থেকে “মানুষ” কবিতার পরিপূরক, আরেক দিক থেকে মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসটির পরিপূরক। মানুষ কবিতার সারাংশ হলো ধর্মীয় মতাদর্শ দিয়ে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করা যায় না, যে ক্ষুধা নিবৃত্তির ভার অর্থনীতির জটিল আবর্তের মধ্যে নিহিত। তেমনি মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসটির সারমর্ম হলো, ধর্মীয় পরিচয়টা ক্ষুধার অনলের কাছে ধর্ত্যেবের বিষয় নয়। ”মানুষ” কবিতার ভুখারি যেমনি বলছে, “তব মসজিদ-মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি, / মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!”, তেমনি মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের মূল চরিত্র মেজ-বৌ দারিদ্রের কারণে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে, আবার মৃত ছেলের শ্রাদ্ধের সময় মুসলমান ছেলেরা ভাত খাবে না সে খ্রিষ্টান বলে সেটা জেনে সে আবার নিজের ধর্ম ইসলামে ফিরে আসে। উপন্যাসটাতে নজরুল এ কথাটা উহ্য রেখেছেন বলে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে মেজ-বৌ কোন অনুশাচনা থেকে নিজ ধর্মে ফেরত আসেনি, এসেছে ভাত গ্রহণই হলো মুখ্য সে জন্য, তার সঙ্গে ধর্মীয় পরিচয়টা এদিক থেকে সেদিক, সেদিক থেকে এদিক করানোতে অসুবিধা নেই। নজরুলের দারিদ্র তত্ত্বের মূল সূত্রটা রয়ে গেছে “দারিদ্র” শীর্ষক কবিতাটিতে। ”হে দারিদ্র, তুমি মোরে করেছে মহান!” মহান কীসের মতো? মহান খ্রিষ্টের মতো, যার শোভা হচ্ছে “কণ্টক-মুকুট”। অর্থাৎ, একেবারে কণ্টকসম ত্যাজ্য বস্তুর সমতায় নিজেকে নিয়ে যেতে না পারলে দারিদ্রের মহিমা বোঝা সম্ভব নয়। এই স্তরে গেলেই, নজরুল বলছেন, তখন আয়ত্ত হয় “অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;” আর “উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি” আর “বাণী হয় ক্ষুরধার,” আর “বীণা” দারিদ্রের অভিশাপে পরিণত হয় “তরবার”। ”বিদ্রোহী কবি” সালংকারটিতো তাঁর এমনিতে জোটেনি। “দরিদ্র মোর পরমাত্মীয়” শীর্ষক কবিতাটিতে বলছেন, “দরিদ্র মোর ব্যথার সঙ্গী, দরিদ্র মোর ভাই।”
কিন্তু আজকে আমি যে কথাটি সামনে নিয়ে আসতে চাই, সেটি হলো, নজরুল দারিদ্রকে তাত্ত্বিক দিক থেকে তার জীবনদর্শনের মূল ভিত্তি হিসেবে দেখেছিলেন। ওপরের ছোট্ট তালিকাটি দেখিয়ে দিচ্ছে নজরুলের বিদ্রোহের আগুনের চুলাটি ছিল দারিদ্র। কিন্তু এ স্বত:সিদ্ধ কথাটিতে আমি আটকে থাকতে চাই না, আমি দেখছি, নজরুল ব্যক্তিগতভাবে পারিবারিক দিক থেকে একেবারে সহায়সম্বলহীন না হলেও, বরঞ্চ মধ্য-মধ্যবিত্ত পরিবারের অর্থনীতির মোড়কে তাঁদের দারিদ্র ঢাকা থাকলেও, নজরুল ভিতরের সত্তা থেকে নিজের সঙ্গে দারিদ্রের একটি গ্রন্থি বাঁধতে পেরেছিলেন। কবিদের এই ধরনের পর-অস্তিত্বে সজাগ ও সক্রিয় থাকার ক্ষমতা থাকে। নজরুলের সেটি ছিল। কিন্তু সাথে সাথে তাঁর শ্রেণি চরিত্র তাঁর দারিদ্রকে “কণ্টক-শোভা” হিসেবে মেনে নিতে পারে না, তা না পেরে নজরুলের কাব্যিক মানসিক-অস্তিত্বে একটি অর্ন্তগত সংঘর্ষ তৈরি হয়, যে সংঘর্ষের প্রকাশ হয়তো তিনি নিজের অজান্তে একটিমাত্র সর্বব্যাপী অনুভূতি দিয়ে প্রকাশ করেছিলেন। আর সেটি হলো, অভিমান। নজরুল দারিদ্রকে অভিমানের সঙ্গে তুল্যমূল্য করেন নি, কিন্তু অভিমানকে দারিদ্রের সঙ্গে তাঁর যে শ্রেণিগত সংঘর্ষ চলেছিলো, তারই প্রকাশ হিসেবে, অথবা সে সংঘর্ষের পরিণতি হিসেবে দেখেছিলেন।
নিষ্করুণ দারিদ্র থেকে উঠে আসা কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে দ্রোহ থাকে, কিংবা আপোস থাকে, কিন্তু অভিমান থাকে না। অভিমানের সঙ্গে তার পরিচয়ও থাকে না। অভিমান হবে তখন, যখন একটা জিনিষ পাওয়া যেতে পারতো, কিন্তু পাওয়া হয়নি, তখন হবে অভিমান। নজরুলের শ্রেণিচরিত্রই তাঁর অভিমানী চারিত্রের সাংগঠনিক ক্ষেত্র।
নজরুল চরমভাবে বিদ্রোহী ছিলেন, কথাটি সত্য, তবে একটা পর্যায়ে গিয়ে তিনি তাঁর বিদ্রোহী সত্তাকে শোক ও বিরহের বিস্তৃত নহরে মিশে যেতে দিয়েছিলেন; এবং শোকের ব্যাপারে কিছু করার না থাকলেও বিরহের ব্যাপারে তিনি অণুক্ষণ অভিমান প্রকাশ করেছেন। “আমার কৈফিয়ত” শীর্ষক কবিতাটি প্রাথমিকভাবে তীব্র তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা মনে হলেও এটার পারদের স্তর ঘন হয়েছে ঐ অভিমানের অভিব্যক্তি দিয়ে। এখানে কবি প্রায় সকল দিক থেকে আক্রমণের শিকার: অভিযোগগুলো হলো: তিনি চিরকালের ‘নবি’ নন, বর্তমানের কবি; তিনি পলিটিক্স করেন, পড়াশুনা করেন না; তাঁর বিদ্রোহ দেখে রবীন্দ্রনাথ যে তাঁকে তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছছেন বলেছেন, সে কথাও আছে; ’মৌ-লোভী’ মৌলবীরা যে তাঁকে ‘কাফের কাজী’ ডাকে সে-কথার পাশাপাশি হিন্দুরা যে তিনি ‘পার্শী শব্দে কবিতা লেখে’ বলে ‘পাত-নেড়ে’ ডাকে সে-কথাও আছে। ইত্যাদি বহুতর বিরুদ্ধ-অভিযোগগুলো চটুল ভাষায় প্রকাশ করে কিন্তু কবি অভিমানের জায়গায় হাত দেন; বলেন, বড় অভিমানভরে বলেন, “অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!’ তার আগে বললেন, ‘রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা, / তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা।’
তাঁর মুখের কথা বন্ধ হয়ে যাবার বছর খানিক আগে কবি একটি ভবিষ্যতদর্শী স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দেন, যে ভাষণটির শিরোনাম, “যদি আর বাঁশি না বাজে”। সে ঘনিষ্ঠ রক্ত-লেখাটিতে বললেন, “যদি আর বাঁশি না বাজে—আমি কবি বলে বলছিনে—আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি—আমায় ক্ষমা করবেন—আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি—আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম—সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।”
এ জায়গায় এসে আমাদের চোখের পানি অনিবারিত, এবং সেটি আরো অজস্র হয়, যখন কবি গেয়ে ওঠেন, “আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে।” হায়, হায়, কোথায় রাখি আমরা এই কবিকে, কে আমাদের কান্না রুখবে এই কবির জন্য। রবীন্দ্রনাথ গেয়েছিলেন, “আমার অভিমানের বদলে আজ নেব তোমার মালা।” আমরা নজরুলের অভিমানের বদলে দিলাম এক বাংলাদেশ, আর আরেকটু প্রাসঙ্গিক করে দিলাম ত্রিশালস্থ, তাঁর কৈশোরিক জীবনের ডেরায় অবস্থিত, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়’-কে। জয়তু নজরুল।
লেখক : সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ,ত্রিশাল,ময়মনসিংহ ।
(নজরুলের যাবতীয় উদ্ধৃতির সূত্র আবদুল মান্নান সৈয়দ কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত শ্রেষ্ঠ নজরুল। )