পর্বঃ ০৬
আনমনে কিসব ভাবছে কুমু; তার মনে হচ্ছে সব কাজ ফেলে আগে ডায়েরির বাকি অংশ টা পড়ে সবটা জানতে, কিন্তু তা তো করা যাবেনা, কাকি আবার কিছু বুঝে যেতে পারে।
কিন্তু আজ আর কুমু-র ইচ্ছে টা পুরন হলোনা।রান্নাঘরে তরকারি নাড়তে নাড়তেই ছোট ফুপু কে নিয়ে মা আর বড় ফুপু চলে এলো!
উফফ কি যে রাগ হচ্ছে কুমু-র। সময় টা আজ বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলো, যা কিছু তবুও পড়তে পেরেছে কিন্তু এখনও সবটাই বোঝার বাকি রয়ে গেলো। এখন তো রাতে ছাড়া বোধহয় আর পড়াই হবেনা।
কুমু মায়ের হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলো;
সব ঠিক আছে তো মা? ডক্টর কি বলেছে?
হ্যা সব ঠিক আছে।
তাহলে কিছুদিন পর পরই ছোট ফুপু অসুস্থ কেনো হয়ে যায় মা? ডক্টর কে জিজ্ঞেস করোনি?
সবেমাত্র ফিরেছি এখনই এতো প্রশ্ন করোনা কুমু, যাও গিয়ে দুই ফুপু কে একটু শরবত করে দাও আর কিছু লাগবে কিনা জিগ্যেস করো।
মায়ের কথামতো শরবত বানিয়ে ছোট ফুপু-র ঘরে গেলো কুমু। ছোট ফুপু বিছানায় বসে দেয়ালের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছে, বড় ফুপু বোধহয় ওয়াসরুমে, ঘর ফাঁকা! এই সুযোগে কুমু গিয়ে ছোট ফুপু-র সামনে বসলো।ছোট ফুপু-র হাত দুটো ধরে ফুপু কে কিছু জিগ্যেস করতে চাইছে কিন্তু ছোট ফুপু-র কোনোদিকেই খেয়াল নেই। যেনো সে কিছুই দেখছেনা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
ছোট ফুপু… কি হয়েছে তোমার?
কেনো এমন চুপচাপ থাকো সবসময়?
ও ছোট ফুপু বলোনা তোমার কি হয়েছে?
কুমু…..
দেখতো বোধহয় তোর বাবা এলো,দরজা টা খুলে দে।
মায়ের ডাক শুনে কুমু গিয়ে দরজা খুলে দিলো।এরপর আর না ডায়েরি পড়া হলো,না ছোট ফুপু-র সাথে কথা হলো সেদিন….
রাতের বেলা সবাই ফিরলে ছোট ফুপু-র এখনকার অবস্থা নিয়ে বড়রা ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছিলো। আজও কুমু-র ঘর থেকে কথাগুলো শোনা যাচ্ছে।
মেজো কাকা জিজ্ঞেস করছে মা কে;
ডক্টর কি বলেছে বড় ভাবি? সব ঠিকঠাক তো?
সব ঠিকঠাক হলে তো ভালোই হতো তোমার বোন কে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া যেতো, অন্তত পাগল বলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন এখানে ফেলে রাখতে পারতোনা।
রুবিনা…এখানে বড় ভাইয়া ভাবি সবাই রয়েছে দয়া করে অপ্সরা কে নিয়ে এমন কথাবার্তা বলোনা, অপ্সরা আমার বোন হয় এ বাড়ির মেয়ে ও। ওর জীবনে অনেক বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে যেটার ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারেনি বলেই ওর আজ এই অবস্থা, বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ। তুমি আমার ওয়াইফ, আমার বোনের প্রতি তোমার এই ব্যাবহার তোমার সাথে সাথে আমাকেও ছোট করে সেই সাথে কষ্ট ও দেয়।
মেজো কাকার কথা শুনে মেজো কাকি ড্রয়িং রুম থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো। কুমু আর ঝিলি সবটাই শুনতে পেয়েছে তাদের ঘর থেকে। বড় দুর্ঘটনা টা কি হতে পারে ছোট ফুপু-র জীবনে সেটা জানার জন্য এখন তারা আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
বাইরের কথায় খেয়াল না করে এবার তারা আবারও ডায়েরি পড়ায় মন দিলো।
(১২ অক্টোবর)
আগের দিনের সেই গোলাপের তোরা টি হাতে নিয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম ইমাদ এর কথা। যদি ইমাদ একবারটি আমায় ভালোবেসে কখনও বলতো তোমার দিক দিয়ে তুমি স্বাধীন, তুমি চাকরি করতে পারবে, তাহলে বোধহয় আমি নিজে থেকেই আর চাকরি টা করতামনা। যদি ইমাদ একবার আমাকে আমার মতো করে বুঝতো তাহলে হয়তো ওর প্রতি আমার ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা টা দ্বিগুণ বেড়ে যেতো। মানুষ টা সবসময় শাসনের সুরে নিজের ইচ্ছে গুলো আমার ওপরে চাপিয়ে দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে।দিনদিন তার ওপর কেমন জানি অনুভূতি-র পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে আমার। এখন আমি নিজের সাথে সাথে ইমাদ এর ওপরও বিরক্ত হতে শুরু করেছি।
হ্যা আমার জীবনে আমি অন্য কারো তদারকি আর নিতে পারছিনা। কি করবো আমি? কি করলে একটু স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করা যাবে, কিভাবে তার সাথে একটু ভালো থাকা যাবে সেটাই আজ-কাল আমার চিন্তা-র প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরইমধ্যে বড় ভাবি এসে বললো আজ ভাইয়া আগেই বেড়িয়ে গিয়েছে আমি যেনো কুমু কে স্কুলে দিয়ে আসি। ঝটপট রেডি হয়ে বেড়োলাম কুমু কে নিয়ে;
ওকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে, স্যার ম্যাম দের সঙ্গে একটু কথাবার্তা বলে বেড়িয়ে এলাম।
বাইরের জগতে ঘুরে বেড়াতে আমার বড্ড ভালোলাগে বরাবরই, কিন্তু এখন কেমন বাইরে বেড়োতে আর ভালো লাগেনা। তবে কি ঘরের কোনে নিজেকে বন্ধ করে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমি?
সন্ধেবেলা কুমু কে পড়তে দিয়ে রান্নাঘরে ভাবি কে একটু কাজ এগিয়ে দিচ্ছিলাম…
ছোট ফুপু… তোমার ফোন টা একটু দাওনা গো..
কেনো কি করবি?
ওই যে আমার বান্ধবী মহুয়া কে একটা কল করবো…
ঝিলি দেখ…
আমার বান্ধবী মহুয়া-র কথাও লিখেছে ছোট ফুপু। ওর কথা কেনো লিখেছে বলতো? মহুয়া কে ফোন করার কথা ডায়েরি তে লেখার কি কারণ থাকতে পারে বুজতে পারছি না কিছু ??
চলবে…♥️