পর্বঃ ১৮
ভাইয়ার এই চড় মারা টাই বলে দিচ্ছিলো আমি সবকিছুর সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি, সেই সাথে ভাইয়ার ধৈর্যের ও বাধ ভেঙে গিয়েছে আজ, মা বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাইয়া বড় ভাবি ই আমার বাবা মায়ের ভুমিকা পালন করে এসেছে, আজ আমি সেই বাবা সমতুল্য বড় ভাই কে অপমান করে ফেলেছি বোধহয় যার কারনে সে আমার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হয়েছে।
আমি আর বড় ভাইয়ার চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারছিলামনা, তাকে বলতে পারলামনা বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি পুরো ব্যাপারটা জানলে কখনওই এমন করতামনা।
বড় ভাইয়া মেজো ভাইয়া সবাই যার যার ঘরে চলে গেলো। আমি আমার ঘরে, আজ যেনো মনে হচ্ছে দুনিয়ায় সবথেকে বড় হতভাগিনী আমি,আজ কেনো জানি বাবা মায়ের কথা ভীষণ মনে হচ্ছে, কি হয়ে গেলো এসব? আমার জীবন টা তো সুন্দর হলেও পারতো, কি এমন হতো আমি একটু ভালো থাকলে?
কেনো যেনো আমি চাইলেও নীড় এর ওপর রাগ করে থাকতে পারছিনা, ও যেটা করেছে সেটা অন্যায় তারপর ও আমি ওর ওপর রাগ নামক বস্তু টা চাপিয়ে দিতে পারছিনা।
আমি নীড় কে ফোন করলাম;
ফোন রিসিভ হলো…
আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলামনা, নিজের ভেতরের সব আক্ষেপ তার কাছে প্রকাশ করতে আপনাআপনি কেমন পাগলের মতো হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেছি আমি। ওপাশ থেকে নীড় বলেই চলেছে,, কি হয়েছে অপ্সরা তুমি কাঁদছ কেনো?
নীড়… সবকিছু শেষ হয়ে যাবে নীড়। এই বিয়ে টা হলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে, তুমি কি পারবেনা সবকিছু ভেঙেচুরে আমাকে বিয়ে করতে?
কিসের বিয়ের কথা বলছো অপ্সরা? কোন বিয়ের কথা বলছো তুমি?
ইমাদ এসেছিলো,, বলেছে আগামী সাতদিনের মধ্যে সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।এমনটাও বলেছে যে এই বিয়ে টা না হলে ও খুব খারাপ কিছু করবে।
নীড় এর কথায় আজ আমি খুব একটা ভরসা দেখতে পাইনি, হয়তো ও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল, হয়তো এই সময় টা ওর আমার জন্য কিছু করার মতো উপযুক্ত সময় নয় বলেই ও জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছেনা।
আর কিছু না বলেই ফোন টা কেটে দিলাম, পায়ের তলার মাটি টা আজ বড্ড নড়বড়ে লাগছে.…
রাত নয়টা বেজে তেইশ মিনিট… দরজায় বেল বাজছে। কে আসবে কোনো আইডিয়া নেই। যে আসে আসুক তাতে আমার কি, আমার জন্য তো আর কেউ আসবেনা।
দু মিনিট বাদে বড় ভাবি ডেকে পাঠালো আবার; বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাৎ করে উঠলো, আবার কি হলো? নাকি আবারও ইমাদ এলো?
ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই দেখলাম নীড় দাঁড়িয়ে আছে, আর কেউ নেই, বোধহয় ভাবি বাকি সবাইকে ডাকতে গিয়েছে, এতোক্ষণে বোধহয় নীড় এর কথাও বড় ভাইয়া কে বলেছে বড় ভাবি।
এই মানুষ টা কে যে কখন এতো ভালোবেসে ফেলেছি আমি,ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ভীষণ ভাবে মানসিক বিপর্যস্ততার মধ্যে রয়েছে ছেলেটা। কিছু বলার সুযোগ পেলামনা তার আগেই বড় ভাইয়া বড় ভাবি চলে এলো;
নমস্কার… আমি নীড়ম্বর রয়। অপ্সরার বন্ধু।
বড় ভাইয়া বেশ রাগী দৃষ্টিতে নীড় এর দিকে তাকিয়ে বললো;
বন্ধু? কেমন বন্ধু?এ বাড়িতে কি প্রয়োজন?
ভাইয়া… আমি কিছু কথা বলতে এসেছি।
কি কথা বলতে এসেছো? আমার এই বোকাসোকা সাদাসিধে বোন টার জীবন কিভাবে তোমরা তুরি মেরে নষ্ট করে দিতে পারো সেই হুমকি দিতে এসেছো?
না না ভাইয়া.. ওরকম কিছু বলতে আসিনি আমি, আপনি মাথা ঠান্ডা করে আমার কথাগুলো শুনুন প্লিজ। আপনি আমাকে দু’টো বছর সময় দিন আমি একটা চাকরি পেলেই অপ্সরা কে বিয়ে করবো, আপনি ইমাদ সাহেবের কথায় ভয় পাবেননা।
নীড় এর কথা শুনে বড় ভাইয়া মারাত্মক রেগে গিয়েছিল আজ;
তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমাকে শেখাতে আসো কার কথায় আমি ভয় পাবো আর কার কথায় ভয় পাবোনা? তোমার সাহস কি করে হয় একজন হিন্দু ছেলে হয়ে একজন মুসলিম মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব জানানোর? সমাজ,ধর্ম, মান সম্মান-এর কোনো মুল্য নেই তোমাদের কাছে? এক্ষুনি বেরিয়ে যাও এখান থেকে…
নীড় চলে গেলো। ওর চলে যাওয়ার সাথে সাথে যেনো আমাদের সব বন্ধন ও ছিঁড়ে চলে গেলো আজ, কেনো যেনো নীড় আর বড় ভাইয়ার মুখের ওপর কথা বলতে পারলোনা, কোনো এক সীমাবদ্ধতায় আটকে গিয়ে ও আজ আর কোনো আকুতি মিনতি জানাতে পারলোনা ভাইয়ার কাছে, যদিও তাতে লাভের লাভ কিছুই হতোনা, বড় ভাইয়ার ব্যাবহারে যেটুকু আশা ছিলো তাও বিলিন হয়ে গেলো….
দেখ ঝিলি, সাজানো গোছানো সম্পর্ক টা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো না রে? আবার এলোমেলো একটা সম্পর্ক গুছিয়ে নিতে কারো অন্যায় প্রচেষ্টা শুরু হলো, কি হবে বলতো?
কি আর হবে, যেভাবেই হোক ইমাদ এর সাথেই অপ্সরা-র বিয়ে টা হবে, আমাদের বর্তমান তো তাই বলে যে অতীতে এমনটাই হয়েছিল, এখন কিভাবে হয়েছিল সেটাই জানার, জানতে হলে ডায়েরির বাকি অংশ টা পড়তে হবে….
চলবে❤️