পর্বঃ ১৯
(২৯ নভেম্বর)
তারপর মনে সাহস নিয়ে বড় ভাইয়ার কাছে খুব করে আকুতি জানিয়েছিলাম, জীবনের সুখ শান্তির জন্য একটা নিয়ম ভাঙলে হয়তো অনেক বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবেনা, হয়তো সময়ের সাথে সমাজের এই সাময়িক গ্লানি থেকে আমরা একদিন ঠিক বেরোতে পারবো, এই আশায় মিনতি করেছিলাম বড় ভাইয়ার কাছে কিন্তু আমার এই মিনতি বড় ভাইয়ার কাছে সমাজের বিপক্ষে বড়সড় কোনো ব্যাভিচার বলে মনে হয়েছে।তার কাছে এটি জঘন্য থেকে জঘন্যতম সিদ্ধান্ত।
তারপর এলো সেই নিষ্ঠুর সময়,, এলো সেই সিদ্ধান্ত যেটার জন্য আমি কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলামনা। জীবনে কেমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা গুলোই দুমদাম ঘটে চলেছে, অবশেষে জীবনও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পিছপা হলোনা।
ড্রয়িং রুমে আমি আর বড় ভাইয়া মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, বড় ভাবি সোফার একটা চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছে, আমি বড় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে তার সিদ্ধান্ত শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে চেয়ে আছি, মনেমনে শুধু এটাই ভাবছিলাম এই বুঝি বড় ভাইয়া বললো তোর সুখের জন্য আমরা সমাজের নিয়ম ভাঙতেও রাজি আছি অপ্সরা।
কিন্তু না! আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাইয়া জানালো;
অনেক কথা হয়ে গিয়েছে, আমার অগোচরে, আমার আড়ালে আবডালে অনেক কিছু ঘটিয়েছো তুমি আর তোমাকে সঙ্গ দিয়েছে তোমার বড় ভাবি, এটা খুব অন্যায় করেছো তুমি সালমা।
তুমি বিশ্বাস করো আমি ছেলেটার কথা জানতাম কিন্তু ছেলেটা যে হিন্দু এটা আমি জানতামনা, জানলে অপ্সরা কে নিশ্চয়ই বাঁধা দিতাম।বড় ভাবির কথা ভাইয়া কানে না তুলে আবারও বলতে শুরু করলো ;
শোনো অপ্সরা… আমি অনেক ভেবেচিন্তে দেখেছি তোমার পছন্দ নিয়ে এগোলে ঝামেলা বাড়বে বৈ কমবেনা, তুমি ইমাদ এর সাথে কি রকম ঝামেলায় নিজেকে জড়িয়েছো আমি জানিনা, তবে তার কথায় খুব বড়সড় ঝামেলার গন্ধ আমি পেয়েছি, ছেলেটাকে আমি ভীষণভাবে অপছন্দ করি তারপর ও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওর সাথেই তোমার বিয়ে দেবো। ছোটবেলা থেকে তোমাকে বাবা মায়ের অভাব টা বুঝতে দেইনি, কিন্তু আজ তুমি আমাকে বাবা মায়ের সম্মান টা দিতে পারলেনা। আমি চাইলে এখন তোমার বিয়ে অন্য জায়গায় আমার পছন্দ মতো অন্য কোনো ভালো ছেলের সাথে দিতে পারবো কিন্তু তাতে করে আমার মান সম্মান সবকিছু জলাঞ্জলি দিতে হবে,লোক জানাজানি হবে, সেটা আমি করতে পারবোনা।
তাই ইমাদ এর সাথেই তোমার আগামী সাতদিনের মধ্যে বিয়ে হবে, এটাই ফাইনাল…
বড় ভাইয়া চলে গেলো..
তার এই সিদ্ধান্তে যেনো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো, এই ছিলো তবে আমার ভবিতব্য? তবে কি ওপরওয়ালা এরকম টাই চেয়েছিলেন?
আজ সেই কথাটি মনে পরছে, কোথায় যেনো পড়েছিলাম ঠিক মনে নেই;
বিরহ ঠিক এমন..
সবচেয়ে ভালো স্বপ্ন দেখার পরে;
সবচেয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখার মতোন!!
আমার কাছে সবটা কেমন স্বপ্নের মতোনই লাগছে, কি থেকে যেনো কি হয়ে গেলো জীবনে!
নিজের ঘরে এসে দোর দিয়ে সেই যে বসেছি…তারপর আর কেউ ডাকতে আসেনি একবারের জন্য, এমনকি রাতের খাবার এর জন্য ও নয়, এর মানে হলো এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে, এর পরিবর্তন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বড় ভাইয়া যখন বলেছে তখন সেটা হবেনা এমনটা ভাবা টাও অবশ্য আমারই বোকামী।
নীড় কে আর জানালামনা এই খবর খানা। আর জানিয়েই বা কি হবে? সেও তো একটা
বিশাল বড় কথা বেমালুম লুকিয়ে গিয়েছে আমার কাছে, তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ার খবর টা তাকে নাই বা জানালাম আর…
কেমন লাগছে ঝিলি তোর? আমার কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে, শেষে কিনা যাকে পছন্দ নয় তাকেই বিয়ে করতে হবে? ধুর কিছুই ভালো লাগছেনা। আর পড়বোনা…
আহ্ কুমু…কথায় কথায় এতো সেন্টি খাস কেনো বলতো? চুপচাপ পড়, অনেক আগ্রহ নিয়ে বসে আছি কিভাবে শেষ পর্যন্ত ওই অসভ্য লোকটার সাথে বিয়ে টা হয় সেটা জানবার জন্য। জলদি পরের পাতা টা শুরু কর।
চলবে….❤️