ফয়সাল বিন আশিক “মাটি হবোরে”গান দিয়ে আলোচনায় আসেন। তারপর একে একে প্রকাশ পায় ‘ফয়সাল বিন আশিক “মাটি হবোরে”গান দিয়ে আলোচনায় আসেন। তারপর একেএকে প্রকাশ পায় ”আমরা পাবনা জিলার ছাওয়াল পাল, ও গ্যাদার মা, এবা হইরে জীবন চলে না, হবো গেদির বাপ “সহ অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান। আজ ৬ জুলাই ২০২২Bd24Views’র মুখমুখি হয় এই সংগীত তারকা।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন : জাহিদ হাসান নিশান।
জাহিদ হাসান নিশান :
প্রশ্নঃ- আপনার গাওয়া”পাবনা জিলার ছাওয়ালপাল”গানটি ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে, আপনার অনুভূতি কি?
ফয়সালঃ-আমি পুরোটা তৃপ্ত নই। কারণ একটা গানে সব তুলে ধরা যায় না। বিখ্যাত মানুষ থেকে শুরু করে, দর্শনীয় অনেক স্থান, অনেককিছুর কথাই বলা হয় নি। আসলে একটা গানে সব চাইলেও বলা যায় না।
প্রশ্নঃ- আঞ্চলিক গান শেকড়ের কথা বলে, কিন্তু এই যে আজকের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি, মনে হয় না এই সময়ে তা চ্যালেঞ্জের মুখে?
ফয়সালঃ- হ্যাঁ, ইন্ডাস্ট্রিতেই আমি নতুন, এর সম্পর্কে সম্যক ধারণা আমার খুব বেশি নেই যে, সেভাবে মন্তব্য করতে পারব। তবে যেটুকু বুঝি, যুগ পাল্টে যাওয়ায়, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি এখন ব্যক্তি পর্যায়ে চলে এসেছে। শিল্পীরা এখন চাইলে নিজেরাই কষ্ট করে নিজের চ্যানেলকে দাড় করাতে পারেন। ফলে আগের মতো তাদের বঞ্চিত করা কঠিন। তবে ভাল গান ও মিউজিক ভিডিও করতে যে বাজেটের প্রয়োজন হয়, তা উঠতি শিল্পীদের পক্ষে যোগান দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বৃহৎ ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনীয়তা এখনও আগের মতোই আছে ৷ শুধু কপিরাইটের সমস্যা দূর করা গেলে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ৬০% সমস্যা দূর হয়ে যেত। আর আঞ্চলিক গানের ইন্ডাস্ট্রি এখনও বেশীরভাগ বাউল ও লোকাল শিল্পীদের বদৌলতেই টিকে আছে যারা মাঠে ঘাটে মঞ্চে নিজেরা দল গঠন করে গান করেন। তাদের গান অফিসিয়ালি রেকর্ড করার আশায় তারা বসে থাকেন না। কোনো গান তুমুল জনপ্রিয় হয়ে গেলে, তখন মেইনস্ট্রিম মিউজক ইন্ডাস্ট্রি সেই গান ও সেই শিল্পীর পিছনে ছোটেন। তার আগে আঞ্চলিক শিল্পী ও আঞ্চলিক গানের কদর কম।
প্রশ্নঃ- পাবনার আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত নাটক দেশ সেরা। কোন ভাবনা থেকে আপনি এই ভাষাকে গানে আনলেন?
ফয়সালঃ- এই প্রশ্নের মাঝেই উত্তরটা আছে। পাবনার ভাষা নাটকের ভাষা হিসেবে সমাদৃত হয়েছে, কিন্তু গানের ভাষা হিসেবে নয়, এখনও নয়। বাংলাদেশের বিখ্যাত সব গীতিকার ও কবির বাড়ি পাবনাতে। কিন্তু পাবনার ভাষায় গান সম্ভব বলে হয়তো মনে হয় নি কখনও তাঁদের কাছে । তবে গানের ভাষা হিসেবে দাড় করাতে হলে এই অঞ্চলের গীতিকারদের আগে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, পাবনার ভাষাতেও গান সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই আমি কাজ করছি।
প্রশ্নঃ – পাবনায় জন্মনেয়া কিংবদন্তী লেখক, কবি গীতিকারের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, তাঁরা কি কোন ভাবে আপনার লেখায় অনুপ্রেরনা হয়েছে?
ফয়সালঃ- না। সরাসরি নয়। তবে উপমহাদেশের বিখ্যাত গীতিকার ছিলেন আমাদের গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। তার গানের ভক্ত তো আমি অবশ্যই। আর আমাদের কবিদের কবিতাও পড়ি।
কিন্তু গানের ক্ষেত্রে একেবারে নিজের দেখা, নিজের বেড়ে ওঠা, নিজের অভিজ্ঞতার উপরেই নির্ভর করি। ওনারা ওনাদের সময়কে ওনাদের রচনায় এনেছেন। আমি আমার সময়ে আমার দেখা জীবনকে নিয়ে গান বাঁধি।এগুলো বললাম গানের ক্ষেত্রে। তবে পাবনার ভাষায় কবিতা লেখার ক্ষেত্রে নূরুজ্জামান মুসাফির স্যারের কবিতা বিশেষ করে “গাঁও গেরামে” কাব্যগ্রন্থটি আমাকে বিশেষভাবে উৎসাহ দেয়। এখনও আমি বারবারই পড়ি কাব্যগ্রন্থটি।
এই কাব্যগ্রন্থেরই একটি কবিতাকে আমি সুর করে গানও বানিয়েছি “সোয়ামী আর বৌ” শিরোনামে।
প্রশ্নঃ- আঞ্চলিক গান সামনের দিকে নিয়ে যেতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পৃষ্টপোষকতার ম্যাধমে এগিয়ে আসা দরকার বলে কী আপনি মনে করেন?
ফয়সালঃ- পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে যেকোনো কাজই সহজ হয়। তবে আঞ্চলিক গানে ইনভেস্ট করতে হলে পৃষ্ঠপোষকদের সাময়িক লসের ঝুঁকি নেবার মানসিকতাও থাকতে হবে।
প্রশ্নঃ-গান নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলেন
ফয়সাল :- ৬০০-৭০০ গান করতে চাই। তার মধ্যে ৪০০-৫০০ ই হবে পাবনার ভাষায়। বাকিটা আধ্যাত্মিক ও জীবন ঘনিষ্ট গান। নিজে কিছু করব। আর সেখান থেকে অর্থ আসলে কিছু শিল্পীকে দিয়ে গান করাব।
শেষ জীবনে আমি দেখতে চাই, দেশের একদম সীমান্তে থাকা অন্য জেলার সাধারণ মানুষও যাতে পাবনার ভাষার ৬-৭ টা বিখ্যাত গানের কথা উল্লেখ করতে পারে। আর চাইব, গীতিকাররা যেন পাবনার ভাষায় গান লিখতে উদবুদ্ধ হয়।
প্রশ্নঃ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত নাটকে নিজেস্ব আঞ্চলিক ভাষার গান ব্যাবহার করা হয়,যেমনটা পাবনার নাটকে দেখা যায়না।কোনদিন যদি সুযোগ হয় নাটকে নিজের ভাষায় গান করার কেমন অনুভূতি হবে?
ফয়সালঃ- সেটি অনেক বড় একটি স্বপ্নপূরণের মতো ব্যাপার হবে। আমাদের পাবনার ভাষা বৃন্দাবন দাস, চঞ্চল চৌধুরী, খুশি ম্যাম, সালাউদ্দিন লাভলু স্যারের কল্যাণে নাটকের ভাষা হিসেবে খুব ভাল একটা জায়গায় পৌছে গেছে। কিন্তু গানের ভাষা হিসেবে এখনও তেমন প্রতিষ্ঠিত হয় নি। মানসম্মত সেইসব নাটকের উপযোগী গান হয়তো এখনও তেমন রচিত হয়নি তাই এখনও তেমন ব্যবহৃত হয় নি।
তবে ভবিষ্যতে একদিন তা হবে বলে আমরা স্বপ্ন তো দেখতেই পারি।
প্রশ্নঃ-আমরাতো এদানিং বিভিন্ন- নাটক, সিনেমা বা গানের পার্ট দেখতে পাই, আপনার ‘পাবনা জিলার ছাওয়ালপাল ‘ গানের কি কোন দ্বিতীয় পার্ট করার ইচ্ছে আছে?
ফয়সালঃ- হ্যা, পরিকল্পনা আছে। তবে এবার হয়তো বিভিন্ন থানা ধরে বর্ণনা হবে না গানে। ভিন্নভাবেই হবে। একটু সিক্রেটই রাখছি আপাতত।
প্রশ্নঃ- পাবনা জিলার ছাওয়ালপাল ‘ গান দিয়েই তো আপনার টাইম লাইনে আসা, পাবনার মানুষের কেমন ভালোবাসা পেয়েছেন গানটার মাধ্যমে।
ফয়সালঃ এটি আমার প্রথম প্রকাশিত গান নয়। জি সিরিজে প্রকাশিত “মাটি হবোরে” আমার প্রথম প্রকাশিত গান। গানটি শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া আমার নিজের চ্যানেলের প্রথম গান “এবা হইরে জীবন চলে না” গানটিও যারা শুনেছেন তাদের কাছেও ভালবাসা পেয়েছি৷
তবে এটি ঠিক যে, ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি সমাদৃত হয়ে “পাবনা জিলার ছাওয়াল পাল।”এর মাধ্যমে পাবনার কিছু মানুষ আমার গানকে ভালবাসতে পেরেছে হয়তো। আমি পাবনায় এর মাঝে একবার গিয়েছিলাম। দেখলাম যে, মানুষ আমাকে তেমন কেউই চেনে না। তবে আমার গান শোনে বা শুনেছে। আমার এতেই বেশি আনন্দ লেগেছে। আমাকে চিনে কী হবে? আমার গান যদি মানুষের কাছে আপন লাগে তাহলেই আমার আনন্দ।ফেসবুক মেসেঞ্জারে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা পাই। বিশেষ করে কেউ যখন বলে যে, ভাই, আপনার গান আমার আব্বা শোনে, আমার মা নিয়মিত শোনে। তখন বেশি ভাল লাগে। পরিবারের সবাই যদি একসাথে শুনতে পারে তার মানে হলো ঘরোয়া পরিবেশের উপযুক্ত হচ্ছে গান। কিছু ভালবাসা বলে প্রকাশ করা যাবেনা।