বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বঙ্গবন্ধুর মূল জায়গায় বরাবরই মেহনতি মানুষের কথা ছিল বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, আমি গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি, প্রায় ৯০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কৃষকের সন্তান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কৃষিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি সবসময় সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। তিনি বারবারই বলেছেন, কৃষক-শ্রমিকরা দুর্নীতি করে না।
স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। রবিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে গ্রামীণ ব্যাংকের নিজস্ব ভবনে অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক-১ মো. মইনুদ্দিন মোনেম।
ড. আতিউর রহমান আরও বলেন, এমন একটি সময়ে বঙ্গবন্ধু কৃষকদের ওপর জোর দিতেন যখন বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো ছিল না। ১৯৭২ সালে শেষদিকে অর্থনীতির আকার ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। যা বর্তমানে ৩৩০ বিলিয়ন ডলার। কোন রিজার্ভ ছিল না। সঞ্চয় ছিল মাত্র ৩ শতাংশ জিডিপি। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের মাত্র সাড়ে তিন বছরে অর্থনীতিকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা দেশের ইতিহাস নিয়ে ছক্কা-পাঞ্জা খেলেছি।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উজ্জতকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন।
সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের মো. মনিরুল হক এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মানব সম্পদ ও সেবা ব্যবস্থাপনার উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আজ খাদ্যে আমরা স্বংসম্পূর্ণ। বস্ত্র উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর বাসস্থানেও ইতিমধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছি। দেশের উন্নয়ণ কর্মকাণ্ড হচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজ আমাদের দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, ড. ইউনূসুর রহমান সঠিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলেই গ্রামীণ ব্যাংক আজকের এ অবস্থানে আসতে পেরেছে। ড. রুবাইয়াত বলেন, এ বছর গ্রামীণ ব্যাংক অনেক ভালো করেছে। এ ব্যাংকের গতি যেন আরো দ্বিগুন বেগে এগিয়ে যায় সেভাবে কাজ করতে হবে।
শ্যামল দত্ত বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অন্যতম চালিকাশক্তি। আজকে বাংলাদেশ যে জায়গায় দাড়িয়ে আছে, সেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, এ বাংলাদেশ কৃষকের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ দরিদ্রের বাংলাদেশ ছিল একসময়। সেই বাংলাদেশে অর্থনীতিতে যে অর্জন সেই অর্জনে যে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে তাতে গ্রামীণ ব্যাংকের অনেক অবদান রয়েছে। শ্যামল দত্ত বলেন, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ আর ২০২১ সালের বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য অনেক। তবে এ ৫০ বছরের পথপরিক্রমায় বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়েনি, তা কিন্তু নয়। এর মাঝে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ মোটামুটি আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় চলে গিয়েছিল। এত কিছুর পরেও আজ মাথা তুলে দাড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার এক বিস্ময়কর অগ্রগতির নাম বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সমাজে সবচেয়ে অবহেলিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প হিসেবে ১৯৭৬ সালে জোবরা গ্রাম থেকে জামানতবিহীন ক্সুদ্র ঋণের কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ২ অক্টোবর ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮২ হাজার গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম বিস্তৃত এবং সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯৪ লাখ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণসহ অন্যান্য কার্যক্রমের অবদান দেশে বিদেশে প্রশংসিত এবং গ্রামীণ ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছে। সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষে গ্রামীণ ব্যাংক গত ১৭ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে। রবিবার আলোচনা সভার পাশাপাশি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, পায়রা ওড়ানো, বৃক্ষ রোপণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।