পাবনা প্রতিনিধি : পাবনাবাসীর প্রাণের দাবী ছিল শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদীর দু’পাড়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে খননের পর নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনা। এ নিয়ে সরকারের সাথে নদীর দু’পাড়ের অবৈধ ও বৈধ দাবীদার দখলদারদের দীর্ঘদিনের আইনী লড়াইয়ের পর সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে সরকার পক্ষে রায় আসে।
রায়ের পরপরই পাবনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছুদিন সময় বেঁধে দিয়ে ইছামতি নদীর দু’পাড় থেকে অবৈধ ভাবে গড়া বসত বাড়িসহ জিনিষপত্র সড়িয়ে নিতে মাইকিং করা হয়। উক্ত প্রচারণায় ৩০ মার্চ নদীতে খনন কাজ ও ৩১ মার্চ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানানো হয়।
পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইছামতি নদীর পুন:খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। শহরের হাউজপাড়া থেকে নদী খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭.৬৭ কিমি. নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদী খনন এবং পায়ে হাটা পথ তৈরীর কাজ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা গেছে, সারা দেশের ন্যায় অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুন:খনন প্রকল্পের আওতায় পাবনার ইছামতি নদী পুন:খনন কাজের উদ্বোধন করা হলো। পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের বাংলাবাজার লঞ্চঘাট থেকে শহরের পৌর এলাকার সিংগা শ্মশানঘাট পর্যন্ত নদীর দু’পাড়ের অবৈধ দখলদার মুক্ত করে নদী খনন ও পায়ে হাটা পথ তৈরী করা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স প্রধান অতিথি হিসেবে খনন কাজের উদ্বোধন করেন। এসময় পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলি, পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান, পাবনা পৌরসভার মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: সাইফুল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বেলা ১১ টা থেকে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করে পাবনার ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি এসএম মাহবুব আলম জানান, মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক সিএস ম্যাপ অনুযায়ী ইছামতি নদী পুনঃখনন ও প্রবাহমান করার দাবী জানিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছি। কিছু স্বার্থন্বেষী মহল ইছামতি নদীর জায়গা অবৈধ ভাবে দখল নিয়ে ভুলভাল কাগজপত্র তৈরী করে মালিক সেজে ইছামতি নদীর খনন কাজ বাঁধাগ্রস্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু তারা এই কাজে সফল হতে পারেনি। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন করে ইছামতি নদীতে পূর্বের রূপে ফিরিয়ে আনা হোক।
অপরদিকে সোমবার সকাল ১০ টা থেকে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের এআর কর্ণার মার্কেটের সামনে আমরণ অনশনের ডাক দিয়ে অবস্থান নেয় ইছামতি নদীপাড়ের বৈধ বসতিদের স্বার্থসংরক্ষন কমিটি। তারা কয়েকটি ব্যানার ঝুলিয়ে নারী পুরুষরা সেখানে অবস্থান নেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪ টায় পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স উপস্থিত হয়ে বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে উপর্যুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তিনি অনশনকারীদের মুখে পানি ও জুস দিয়ে অনশন ভঙ্গ করে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। তার পরপর অনশনকারীদের সহমর্মিতা জানাতে আসেন পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, নদীটা খননের উদ্দেশ্য শহর আবর্জনা থেকে মুক্ত হওয়া। সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা। দুবেলা মানুষ সুন্দর ভাবে নদীর পাড় দিয়ে হাটতে পারবে। তিনি বলেন, অনেক মানুষ নদী পাড়ে বসবাস করছেন। হয়তো তারা ভুল করে জায়গা জমি কিনছেন। তারাই আজকে ক্ষতির সন্মুখিন হচ্ছেন। তাদের বিষয়গুলো জেলা প্রশাসককে খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু করোনা পরিস্থিতি আবার ভয়াবহ অবস্থা ধারণে পথে। তাই আপাতত তাদের উচ্ছেদ না করে আরও কিছুদিন সময় দেয়া হবে। অন্তত তারা ঈদ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারবেন বলে অনশনকারীদের আশ্বস্ত করেছেন এমপি প্রিন্স।
আর জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলছেন, করোনা পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই আমাকে এই অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এখানে দ্রুত ও আইন বহির্ভূত কোন কাজ করা হচ্ছে না। যা কিছুই হচ্ছে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে। যারা আজ কাফনের কাপড় পড়ে অনশনে বসেছেন। অথচ আমার কাছে তারা আসেননি। তারা আমার সাথে কোন কথা না বলেই বারবার হাইকোর্টে ঘুরছেন। এমনকি তারা স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সাথে করেও আমাকে বলতেন। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে নিতে পারতাম। কিন্তু তা তারা না করেই মানববন্ধন, সভা সমাবেশ বা কাফনের কাপড় পড়ে নানা কর্মসূচী দিচ্ছেন।