বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আজ পর্দা উঠছে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের। করোনার চোখ রাঙানির মধ্যেও প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ক্রীড়াবিদ, কোচ, কর্মকর্তার সম্মিলনে দেশের ক্রীড়াঙ্গন ব্যস্ত থাকবে আগামী ১০ দিন। গতকাল টুঙ্গিপাড়া থেকে রাজধানীতে চলে এসেছে গেমসের মশাল। বিওএ ভবনে কাল বিকেলের জনারণ্যে সেটি ক্রিকেট-ফুটবলের সাবেক দুই তারকা গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ও শেখ মোহাম্মদ আসলাম হস্তান্তর করেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের হাতে। আজ এটির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে স্থাপিত মশাল জ্বালবেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও সাফ গেমসের স্বর্ণজীয় সাঁতারু মাহফুজা আক্তার শীলা।
বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
গত বছরের একই সময়ে এই গেমস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। একটি বছর করোনার সঙ্গে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে মাঠে গড়াচ্ছে গেমস। তবে বাজেট কাটছাঁট হয়েছে অনেকটাই। শুরুর বাজেট ছিল ৩৮ কোটি টাকা। সেটা ২০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। বাজেট কমলেও গত কয়েক দিন ধরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামকে যেভাবে সাজানো হয়েছে, তাতে ধরে নেওয়াই যায় রোশনাইয়ের খুব একটা কমতি থাকবে না উদ্বোধনীতে। উদ্বোধন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গেট দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত হবে বিকেল ৩টায়। সাড়ে ৫টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পর অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীর মাধ্যমে পর্দায় তুলে ধরা হবে বাংলাদেশের খেলাধুলার উল্লেখযোগ্য সাফল্যগাথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন পৌনে ৭টায়।
এরপর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হবে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীর মাধ্যমে একঝলকে তুলে ধরা হবে দেশের খেলাধুলা। এরপর খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা মাঠে প্রবেশ করবেন সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে। মার্চপাস্টের পর শপথবাক্য পাঠ করাবেন তীরন্দাজ রোমান সানা। ৭টা ৮ মিনিটে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বিওএ সভাপতি ও গেমসের সাংগঠনিক কমিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান জেনারেল আজিজ আহমেদ। এ ছাড়া বক্তব্য দেবেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। সোয়া ৭টায় গেমসের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মশাল প্রজ্বালন করবেন গলফার সিদ্দিকুর ও সাঁতারু শীলা। ক্রীড়াবিদরা মাঠ ত্যাগ করার পর মাসকট শান্তির পায়রা প্যারেড করবে মাঠময়। এরপর বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে নিয়ে হবে প্রদর্শনী। স্টেজ শোতে অংশ নেবেন দেশের আলোচিত বেশ কজন শিল্পী। এরপর রাত সাড়ে ৮টায় লেজার শো, আতশবাজি প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
মশাল পৌঁছেছে ঢাকায়
গতকাল বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বেলা ১১টায় মশাল প্রজ্বালন করেন সেনাপ্রধান ও বিওএ সভাপতি জেনারেল আজিজ আহমেদ। টুঙ্গিপাড়া থেকে ১০টি ভাগে ভাগ হয়ে মশাল বহন করে ঢাকায় বিওএ ভবনে নিয়ে আসেন বিভিন্ন খেলার ১৮ জন ক্রীড়াবিদ। টুঙ্গিপাড়ায় বিওএ সভাপতি মশাল হস্তান্তর করেন সাবেক ফুটবলার ইলিয়াস হোসেন ও সাবেক ভলিবল খেলোয়াড় জেসমিন খান পপির হাতে। এরপর কয়েক হাত ঘুরে পদ্মা পার হয়ে মশাল আসে সাবেক ক্রিকেটার লিপু ও সাবেক ফুটবলার আসলামের কাছে। তাদের কাছ থেকে বিওএ ভবনে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা মশাল গ্রহণ করেন। এরপর সেটা তুলে দেওয়া হয় শুটার শারমিন আক্তার রতœা ও বক্সার জুয়েল আহমেদ জনির হাতে। যারা আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মশাল প্রজ্বলনের জন্য তুলে দেবেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলার হাতে। মাওয়া ঘাট থেকে বিওএ ভবনে মশাল নিয়ে আসা সাবেক ক্রিকেটার লিপু বলেন, ‘বাংলাদেশ গেমসের মশাল বহনের জন্য মনোনীত করায় নিজেকে গর্বিত মনে করছি। এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যে কিছু অবদান আছে, সেটা এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে আরেকবার বুঝতে পারলাম।’ শুটার শারমিন আক্তার রতœা বলেন, ‘১৫ বছরের ক্যারিয়ারে একবারই বাংলাদেশ গেমসে অংশ নিয়েছি। এবার দ্বিতীয়বারের মতো খেলব। তার আগে আজ যে সম্মান দেওয়া হয়েছে সেটা সারা জীবন মনে থাকবে।’
আজ থেকে একই সঙ্গে খেলাও শুরু হয়ে যাবে আট বিভাগের ২৯টি ভেন্যুতে। ৩১টি খেলায় ইভেন্ট সংখ্যা ৩৭৮টি। লড়াই হবে ১২৭১টি পদকের জন্য। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই কিছু কিছু খেলা শুরু হয়ে গেছে। মেয়েদের ক্রিকেট তো শেষই হয়ে গেছে মার্চের শুরুতে। চলছে পুরুষ ও মহিলা ফুটবল। গতকাল শুরু হয়েছে হকি ও ফেন্সিং।
২০১৩ সালে অষ্টম আসরের পর প্রায় ৮ বছর বিরতির শেষ হবে আজ। করোনার ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে বাংলাদেশ গেমস কতটা সফলভাবে শেষ হয় সেটা সময়ই বলে দেবে। গতকাল বিওএ ভবনে মশাল গ্রহণ করে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্রীড়াবিদরা যাতে নিরাপদে খেলায় অংশ নিতে পারে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আছে। আশা করছি সফলভাবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে উৎসর্গকৃত এই আসরটি আমরা আয়োজন করতে পারব।