বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন প্রতিবেশী পাঁচ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানগণ। সফরকালে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল, ভুটানের আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এরমধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগে ভারতীয় ভূখ- ব্যবহারে জোর দিয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে পারলে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় আয় ১৭ শতাংশ বেড়ে যাবে। পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের বন্দর, আকাশ, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করতে আগ্রহ দেখিয়েছে নেপাল ও ভুটান। এর ফলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের (বিবিআইএন) মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য, ট্রানজিটসহ অন্যান্য বাণিজ্য সহায়ক কাঠামো উন্নত করে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তির কেন্দ্র হতে পারে।
জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ১৭ মার্চ বাংলাদেশে আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। ১৯ মার্চ বাংলাদেশে আসেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। ২২ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভা-ারী। ২৪ মার্চ বাংলাদেশে আসেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডাঃ লোটে শেরিং। সর্বশেষ ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাঁচ নেতার এই সফরে সর্বমোট সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তি হয়েছে ১৩টি। সফরকালে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ বিশ্বনেতা। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে তথা মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি হাবে রূপান্তরিত করতে রাষ্ট্রনেতাদের প্রতি সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবারের সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে আঞ্চলিক যোগাযোগ। নেপাল ও ভুটানের পাশাপাশি সড়কপথে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতা চেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিবিআইএন মোটর ভেহিকেলস চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ‘ত্রিদেশীয় এনাবলিং এমওইউ’ দ্রুত স্বাক্ষরের বিষয়ে দুই নেতা বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেন। ভারতীয় ভূখ- ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে আরও বৃহত্তর পরিসরে অভিগম্যতা চায় বাংলাদেশ। এজন্য বাংলাদেশ নতুন কিছু রুট অনুমোদনের জন্য ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে।
ইতোমধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নৌ ও সড়কপথে ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ। পণ্য আনা-নেয়া করতে ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দরও খুলে দেয়া হয়েছে। মূলত বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরই ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধির আলোচনা শুরু হয়। ২০১১ সাল থেকে আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে বিশেষ সুবিধায় ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুতকেন্দ্রের ভারি যন্ত্র নেয়ার পর এই পথে নিয়মিতভাবে ট্রানজিট নিতে আগ্রহ দেখায় ভারত। মাসুল নিয়ে ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পথ চালু করা হয়। পরে নৌ, সড়ক, সমুদ্রপথে দুই দেশের মধ্যে নতুন নতুন বাণিজ্যপথ চালু হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে অবাধ যান চলাচল চুক্তিও হয়ে গেছে।
সরাসরি যাত্রী পরিবহনেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কয়েকটি পথ চালু হয়েছে। যেমন রেলে খুলনা-কলকাতা, বাসে ঢাকা-আগরতলা, ঢাকা-গুয়াহাটি বিমান চলাচল। নতুন করে ঢাকা-শিলিগুড়ির মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি পণ্য ও যাত্রী পরিবহন যোগাযোগ চালুর আলোচনাও চূড়ান্ত পর্যায়ে। ঢাকা-শিলিগুড়ি-গ্যাংটক এবং ঢাকা-কাঠমান্ডু পথে বাস পরীক্ষামূলক চলাচলও হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বাড়ানো হলে কোন্ দেশ কতটা উপকার পাবে, তা নিয়ে গবেষণা করেছে বিশ্বব্যাংক। গত ৯ মার্চ প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে পারলে বাংলাদেশের জাতীয় আয় ১৭ শতাংশ বেড়ে যাবে। আর ভারতের জাতীয় আয় বাড়বে ৮ শতাংশ। ঢাকা জেলায় প্রকৃত আয় ৬৭ এবং চট্টগ্রাম জেলায় ৫৯ শতাংশ বাড়বে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা এবং পশ্চিমের কিছু জেলার প্রকৃত আয় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়বে। দুই দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল নিশ্চিত করতে পারলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি প্রায় ৩০০ শতাংশ বাড়তে পারে।
বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত এক দশকে ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর আন্তঃযোগাযোগ সংক্রান্ত কিছু চুক্তি ও অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে। এগুলো ইতিবাচক পদক্ষেপ। পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। তাঁর মত হলো, পরিবহন যোগাযোগের সমান্তরালে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর করে বাণিজ্য সহজ করতে হবে। তাহলে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টসহ আঞ্চলিক যোগাযোগের পূর্ণ সফলতা পাওয়া যাবে। তিনি আরও মনে করেন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে সহজেই সীমান্ত পার হয়ে নির্বিঘেœ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করতে পারলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বদিকের ‘গেটওয়ে’ মৈত্রী সেতু ॥ এর আগে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম এলাকায় সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেতুকে এখন দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বদিকের ‘গেটওয়ে’ হিসেবে বলা হচ্ছে। কারণ, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে সহজে অসম, ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে সহজে পণ্য আনা-নেয়া করা হবে। ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার বরাবর সীমান্তের ওপারে অসমের করিমগঞ্জের ধর্মনগর পর্যন্ত রেলপথ ছিল। ২০১৫ সালের দিকে অসমের করিমগঞ্জের ধর্মনগর থেকে ত্রিপুরার আগরতলা পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এখন আগরতলা থেকে আরও দক্ষিণে সাবরুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এই রেলপথ চালু হলে ত্রিপুরার সাবরুম থেকে আগরতলা হয়ে অসমের গুয়াহাটি রেলপথ পর্যন্ত রেলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। সেখান থেকে একটি রেলপথ নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে কলকাতা এসেছে। আরেকটি রেলপথ গুয়াহাটি থেকে অরুণাচলের নিকটবর্তী সীমান্ত শহর ডিব্রুগড় পর্যন্ত গেছে। এই রেলপথই এখন অসম, ত্রিপুরা, অরুণাচল, মিজোরামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের অর্থনৈতিক করিডর বা প্রাণশক্তি (লাইফলাইন) হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাশাপাশি সড়কপথ তো আছেই। খাগড়াছড়ির রামগড় মৈত্রী সেতু দিয়ে সাবরুমের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সীতাকু-, মিরসরাই হয়ে মাত্র ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে ত্রিপুরার সাবরুম চলে যাবে পণ্যের চালান।
১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চারটি নতুন নৌপথ চালু ॥ গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অন্তত চারটি নতুন নৌপথ চালু হয়েছে। এর মধ্যে একটি ট্রানজিট এবং তিনটি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পথ। কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে এবং আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আখাউড়া হয়ে আগরতলা পর্যন্ত পথটি মূলত ট্রানজিট পথ। এ পথে গেছে ত্রিপুরায় রেলপথ নির্মাণের পাথর ও লোহার চালান।
গত নবেম্বর মাসে আরেকটি পথে ট্রানজিট পণ্য আনা-নেয়া শুরু হয়েছে। সেটি হলো অসমের করিমগঞ্জ থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে এবং পরে সড়কপথে আগরতলা। আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে এই পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার টন পণ্য ভারতে গেছে। ইতোমধ্যে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে জেটি ও গুদামঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতীয় ঋণে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার সড়কপথ চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। নৌপথে দাউদকান্দি থেকে গোমতী নদী দিয়ে কুমিল্লা হয়ে ত্রিপুরার সিপাইজলা জেলার সোনামুড়া পর্যন্ত নৌপথে; পরে সেখান থেকে সড়কপথে আগরতলা। এই পথ গত আগস্ট মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে।
এটি করা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য। এই পথে নাব্যসঙ্কট আছে। বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এখন সমীক্ষা করছে, কোথায় কেমন নাব্য সঙ্কট আছে। শীঘ্রই নাব্য সঙ্কট দূর করতে খননকাজ শুরু করবে বিআইডব্লিউটিএ। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে কুড়িগ্রাম ও অসমের ধুবড়ির মধ্যে নৌপথে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এই পথে বড় বড় পাথর আনা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্য চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এখন শুল্ক বিভাগের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছে।
বাংলাদেশের বন্দর, আকাশ, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করতে চায় নেপাল ॥ নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভা-ারীর এবারের ঢাকা সফরে আলোচনার বড় অংশজুড়ে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহারের বিষয়গুলো ছিল। এরমধ্যে সৈয়দপুর ও বিরাটনগরের মধ্যে বিমান রুট চালুর বিষয়টি নতুন করে উঠে এসেছে এবারের আলোচনায়। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্য সহজ করতে বাংলাদেশের তিন সমুদ্র বন্দরের (চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা) পাশাপাশি আকাশ, রেল ও নৌপথ ব্যবহারের আগ্রহ দেখিয়েছে নেপাল। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ১৯৭৬ সালে সম্পাদিত নেপাল-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তির প্রটোকলের সংযোজনী হিসেবে রোহানপুর-সিংঘাবাদ রেল সংযোগ পয়েন্টকে অন্তর্ভুক্ত করে দুই দেশের বাণিজ্য সচিবদের মধ্যে একটি লেটার অব এক্সচেঞ্জ (এলওই) সই হয়েছে।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানকে ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, নেপাল চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। এক্ষেত্রে মডালিটিগুলো নির্ধারণের কাজ এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পাশাপাশি নেপাল সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট এবং নেপালের বিরাটগর বা ভদ্রপুরের মধ্যে সরাসরি বিমান সংযোগ স্থাপনেও আগ্রহী জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রস্তাব দুটিকে স্বাগত জানিয়েছে। জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নেপালের সব আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ভারতীয় বন্দরের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আবার তাদের জন্য সময় বেঁধে দেয়া থাকে। ফলে তাদের দারুণ সমস্যায় পড়তে হয়। আবার নেপাল সীমান্তেও অনেক সময় লাগে।
এসব নানা কারণে দেশটি অনেকদিন ধরেই বিকল্প রুট খুঁজছিল। তিনি বলেন, তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে তাদের পণ্য আমদানিতে সুবিধা হবে সৈয়দপুরকে ব্যবহার করতে পারলে। নেপালের জন্য তরল জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে তারা সৈয়দপুরকে ব্যবহার করতে পারবে। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে তাদের সমস্যা হয়। ফলে তারা ভারত এড়িয়ে আমদানি সচল রাখার উপায় খুঁজছে।
নৌ ও আকাশপথ ব্যবহার করতে চায় ভুটান ॥ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করে বাংলাদেশ। এটাই কোন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম পিটিএ। চুক্তির তিন মাসের মধ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডাঃ লোটে শেরিং। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভুটানের গেলেফু বিমান বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের লালমনিরহাট ও সৈয়দপুরের সঙ্গে কার্গো বিমান যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও ভুটানকে ইতোমধ্যে সৈয়দপুর বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। জানা যায়, যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্য পরিবহন সহজ করতে অন্তত ছয় বছর আগে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে একযোগে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়, যা বিবিআইএন নামে পরিচিত। বিবিআইএনের আওতায় ২০১৫ সালের জুন মাসে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চার দেশের মধ্যে অবাধ মোটরযান চলাচল চুক্তি হয়। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কায় ভুটানের সংসদের উচ্চকক্ষ এখনও চুক্তিটি অনুমোদন দেয়নি। যদিও ভুটান দীর্ঘদিন ধরে মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ চেয়ে আসছিল।
বাংলাদেশ থেকে পণ্যবাহী জাহাজ যাবে মালদ্বীপে ॥ বাংলাদেশ বছরে গড়ে ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করে মালদ্বীপে, আর আমদানি করে ৫ কোটি ডলারের পণ্য। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ। গত ১৭ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। ওই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সার্বিক সহযোগিতা জোরদারে একটি যৌথ কমিশন গঠনসহ চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। বৈঠকে দুই নেতা নৌপরিবহন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মালে এবং বাংলাদেশের তিনটি সমুদ্র বন্দরের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেন।