বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মামলার রায়গুলো ইংরেজিতে দেয়া হয়, এতে রায়টা অনেকে বুঝতে পারেন না। রায় যদি ইংরেজিতে লেখা হয়, তাতে আপত্তি নেই কিন্তু বাংলায় অনুবাদ করে ঘোষণার ব্যবস্থা করা যায়। এখন অনুবাদ করা কঠিন কোনো কাজ না। প্রফেশনাল ট্রান্সলেটর থাকে, তাদেরকে আপনারা ট্রেনিং দিতে পারেন। যেটাই লেখা হোক সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় লেখা হলে সেটা সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে পারবে।’
গত বছরের ৪ নভেম্বর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধনীতে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জন্য কোনো চাওয়া-পাওয়া রাখেননি। তার জীবন উৎসর্গ করেছেন এ দেশের মানুষের জন্য। ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এর পরবর্তী ৯ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আমাদের একটা সংবিধান দেন। এতে দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে মানুষ ন্যায়বিচার পায়।’
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ পাকিস্তান আমলে নিষিদ্ধ ছিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তা সংশোধন করে নারীদের সেখানে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। উচ্চ আদালতে আমাদের নারীরা যেন অংশ নিতে পারেন, সেটা আমরা করে দিয়েছি। আমরা আওয়ামী লীগ সরকার শুধু জাতির জন্য। সবাই যেন বিচার পায়, তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আইনের দৃষ্টিতে যাতে সবাই সমান সুযোগ পায়।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি। তখন আমাদের কিন্তু বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। বিচার চাইতে পারিনি। জাতির পিতাসহ পরিবারের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহায় দিয়ে অর্ডিনেন্স দেয়া হয়। আমরা কিন্তু বিচার থেকে বঞ্চিত থাকলাম। বিচারের সুযোগটা করতে হলো, যখন ১৯৯৬ সালে সরকারে আসতে পারলাম। তখন বিচারের দাবি উঠল। বিচারের রায়ে খুনিদের সাজা হয়। দুর্ভাগ্য হলো বিচারের রায়ের সময়ও বাধা দেয়া হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিচারের প্রতি আমাদের আন্তরিকতা রয়েছে। আইনের জন্য বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিয়েছি। উচ্চ আদালত থেকে শুরু বিভিন্ন জেলার আদালতে বিচারকের সংখ্যা কম ছিল। আমরা তা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। আইন সংস্কারের জন্য আইন কমিশন, বিচারের জন্য বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। বিচারপ্রার্থীরা যেন ন্যায়বিচার পায় সেদিকে লক্ষ রেখে আইন, ২০০০ প্রণয়ন করি। বিচারকদের জন্য বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, নারী ও শিশু ধর্ষণ একটা জঘণ্য অপরাধ। ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি দিতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ২০২০ সংশোধনী করেছি। মাদক একটা বড় সমস্যা। এটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদকে যারা জড়িত তারা যেন সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি পায় এবং মাদক থেকে সবাই যেন রক্ষা পায়, আমরা সেটা চাই।’
বিচারকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিচারের সঙ্গে জড়িত সবার জন্য যা করা দরকার, আমরা তা-ই করেছি। বিচারক ও আইনজীবীদের আবাসনের ব্যবস্থা ও গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ আমরা দিয়েছি, সেটা যাতে বিচার বিভাগ ব্যবহার করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বিচারপ্রার্থী ও জনগণের সুবিধার্থে ১৩টি জেলায় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। বোর্ডের দিকে তাকালে মানুষ সব বিষয়ে জানতে পারবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ল অব বাংলাদেশ ওয়েবসাইটে সব আইন হালনাগাদ করে প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে সবাই আইন বিষয়ে সহজেই জানতে পারবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনো অনেক বিচার বাকি রয়েছে। সেগুলো ধীরে ধীরে শেষ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ করে দিয়েছে। অনেকে ব্যঙ্গ করেছে। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা সেটা প্রমাণ করে দিয়েছি। করোনাভাইরাসের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হচ্ছে। সেই ডিজিটাল ব্যবস্থা আমাদের সুযোগ করে দিচ্ছে। ডিজিটাল ব্যবস্থায় ভার্চ্যুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। নতুন কিছু নিয়ে আসলে প্রথমে অনেকের ভেতর কৌতূহল থাকে। প্রতিটি কারাগারে আসামিদের বসিয়ে ভার্চ্যুয়ালি বিচারকাজ করা যায়, সে ব্যবস্থা আমরা করে দিতে চাই। ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতির কারণেই আইনজীবীদের জন্য সুবিধা হয়েছে। দ্রুত সময়ে অল্প খরচে যদি বিচারের ব্যবস্থা করে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনায় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হচ্ছে, ততক্ষণ এটার সমাধান কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাই সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে- যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায়। মাস্ক ব্যবহার করার বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’