বিধিনিষেধের মধ্যেও এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের কাজ

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনার প্রকাপ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের মধ্যে সরকারী-বেসরকারী সব ধরনের অফিস বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে মেগা প্রকল্প মেট্রোরেলের কাজ। সরকারী নানা বিধিনিষেধের মধ্যে রাজধানীতে সমান তালে এগিয়ে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর পল্টনের মেহেরবা প্লাজা মেট্রোরেলের একটি পিলারের নির্মাণ কাজ চলছে। মাটির নিচ থেকে উঠে আসা একটি পিলারের চারপাশ ঘিরে আট থেকে দশ ফুট রড মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর উঠে সেফটি ক্যাপসহ সুরক্ষা সামগ্রী পরিহিত চার নির্মাণশ্রমিক পিলারটিকে আরও উঁচু করে তুলতে রডের সঙ্গে রড মেলাচ্ছেন। এরই ঠিক নিচে কাজ করছেন আরও দুই শ্রমিক। তারা পিলারে থাকা নির্মাণশ্রমিকদের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জোগান দিচ্ছেন।

কঠোর লকডাউনের স্থবিরতার মধ্যও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মেট্রোরেল রুট-৬ এর নির্মাণশ্রমিকেরা। করোনাঝুঁকি মাথায় নিয়ে চলছে বিরতিহীন কাজ। তবে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কাজের চেষ্টা দেখা গেছে। নিরাপত্তাসামগ্রী পরিধানের পাশাপাশি শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার করতেও দেখা গেছে।

মেট্রোরেলের আগারগাঁও, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, মতিঝিল অংশসহ অন্য অংশেও এখন পুরোদমে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে রুট-৬-এর পুরো প্রকল্পের চার ভাগের প্রায় তিন ভাগ কাজ। সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর কাজ কঠোর লকডাউনেও চালিয়ে নেয়ার নির্দেশনা গত রবিবার আগাম জারি করে এ প্রকল্পগুলোর মনিটরিং টাস্ক ফোর্স। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকেও এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়। বলা হয়, প্রকল্পের কর্মীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করে মেট্রোরেলের কাজ চালু রাখতে হবে।

এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কঠোর লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে অবকাঠামো নির্মাণ খাত। অর্থাৎ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ দেশের আটটি ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের নির্মাণকাজে কোন ছেদ পড়বে না।

সেভাবেই কাজ করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এম এ এন সিদ্দিক বলেন, লকডাউন মেট্রোরেলের চলমান কাজে কোন বাধা হচ্ছে না। ফলে লকডাউনের আগে কাজের যে সিডিউল, তাতে আমরা কোন পরিবর্তন আনিনি। নির্মাণশ্রমিক ও প্রকৌশলীরা আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালাক্রমে বিরামহীন কাজ করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের শ্রমিক ও প্রকৌশলীরাও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ’ ব্যক্তি আক্রান্ত হলেও কেউ মারা যাননি। তিনি বলেন, প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক। প্রতি মাসে এর বাস্তবায়ন অগ্রগতির বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। চলতি মাস শেষে সর্বশেষ অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হবে।

সার্বিক কাজের অগ্রগতি ॥ প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ রয়েছে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে। সে অনুযায়ী শ্রমিকরা দিনরাত শ্রম দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন মেট্রোরেলের কাজ। ডিএমটিসিএল-এর সর্বশেষ তথ্যমতে, রাজধানীর প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের (এমআরটি লাইন-৬) নির্মাণকাজের অগ্রগতি এসেছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম ভাগ উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

ডিএমটিসিএল সূত্র আরও জানিয়েছে, ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৩ দশমিক ২৭৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এখন দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে ডিপোর ভেতরে ১৬ দশমিক ৯০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া ভায়াডাক্টের ওপরে ১০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক প্লেট কাস্টিং সম্পন্ন হয়েছে। রোড কাম রেল ভেহিক্যাল ব্যবহার করে ডিপোর অভ্যন্তরে এবং ভায়াডাক্টের ওপরে ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ডিপোর ভেতরে ৬ কিলোমিটার ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপন হয়ে গেছে।

ডিএমটিসিএল-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন মতে, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ। উত্তরা উত্তর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশন কাজ চলমান। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণকাজও চলমান। এ ছাড়া উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। মেট্রোরেল নির্মাণে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই বিবেচনায় পাঁচটি লং স্প্যান ব্যালান্স ক্যান্টিলিভারের মধ্যে তিনটির কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

ঢাকার যানজট নিরসনসহ নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘœ করতে এই মেট্রোরেল প্রকল্পের মাধ্যমে সব কটি পয়েন্টে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার বা কামরা। এই ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় একশ’ কিলোমিটার। প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। চলাচল শুরু হলে উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।

প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০১৯ সালের মধ্যে এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল ২০২০ সালের মধ্যে চালু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মে মাসে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে জানানো হয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে। গত ৩ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ২০২২ সালের জুনের মধ্যেই শেষ হবে মেট্রোরেলের সার্বিক কাজ।

মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দূরত্ব ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হতে পারে ২ টাকা ৪০ পয়সা। ডিএমটিসিএল প্রাথমিকভাবে এই হারে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করছে। এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দূরত্বে যেতে ভাড়া আসবে ৪০ টাকা ২৫ পয়সা।

মেট্রোরেল
Comments (0)
Add Comment