বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনাকালীন সময়ে সকল ধরণের পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি কৃষিজাত পণ্য ও পার্সেল মালামাল পরিবহণের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে সবজিবাহী ট্রেন চলাচল চালু করা করেছে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশনে জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন আনুষ্ঠানিকভাবে এই সবজি ট্রেনের উদ্বোধন করেন। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত, রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেন ও সবজি ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চগড়ে উৎপাদিত শসা, টমেটো, বেগুন, মরিচ, লাউ, সীম, মিস্টি কুমড়া সহ বিভিন্ন শাকসবজি ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তর করা হয়। প্রথম দিনেই পঞ্চগড়ের চারজন ব্যবসায়ী ২ টন শসা, ৭৪০ কেজি টমেটো, ১৮৭ কেজি বেগুন ও ১০০ কেজি শুকনো মরিচ সহ তিন মেট্রিক টন সবজি পাঠান। এর আগে গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ ট্রেনটি চলাচল করলেও সেদিন পন্য পরিবহন হয়নি। তবে গত শনিবার ৫টি বস্তায় করে ১০০ কেজি শুকনো মরিচ নিয়ে দুপুর ২.০৫ মিনিটে পঞ্চগড় স্টেশন ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
এর আগে মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে কৃষিজ পন্য সারা দেশে পরিবহনের জন্য গত বছরের ৯ মে পার্সেল ট্রেন চালু হয়। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কৃষিপণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে সপ্তাহে তিনদিন চলবে ট্রেনটি। পার্সেল ট্রেন সপ্তাহে শনিবার, সোমবার ও বুধবার পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম-ঢাকা রুটে চলবে। ট্রেনটি বুধবার পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন থেকে ছাড়বে দুপুর ০১:০০ টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে ভোর ০৩:০০ টায়। আবার ‘ঢাকা-বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম’রুটে সপ্তাহে রবিবার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার পার্শ্বেল ট্রেনটি চলবে। ঢাকা স্টেশন থেকে ছাড়বে সকাল ০৬:০০ টায় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ০৮:৩০ টায়।
বিশেষ পার্শ্বেল ট্রেনটিতে কৃষিজাত পণ্য যেমন, শাক-সবজী, দেশীয় ফলমূলসহ অন্যান্য কৃষি পণ্যাদি পরিবহনের ক্ষেত্রে মূল ভাড়ার উপর ২৫% রেয়তী ও অন্যান্য সকল প্রকার চার্জ রহিত থাকবে। তবে পঞ্চগড় থেকে পার্বতীপুরে কাঁচামাল পাঠানোর ভাড়া ১ টাকা ৪৬ পয়সা প্রতি কেজি, পঞ্চগড় থেকে জয়দেবপুরে ১ টাকা ৫৩ পয়সা ও পঞ্চগড় থেকে ঢাকা বিমানবন্দর ষ্টেশনে ১ টাকা ৫৬ পয়সা প্রতি কেজি হারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনার মধ্যে জীবন এবং জীবিকা চালু রাখতে হবে। লকডাউনে কৃষক যাতে কৃষি পণ্য সহজে পরিবহণ করতে পারে সে জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ পার্শ্বেল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। রেলওয়ে অতীতে বিভিন্ন সময় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন, ক্যাটল ট্রেনসহ পার্শ্বেল ট্রেন পরিচালনা করেছে। রেলওয়ে বর্তমানে তেল, সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহন করছে। কৃষিপণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে সারা দেশে আটটি পার্শ্বেল ট্রেন চলাচল করছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার পানিমাছপুকুরী এলাকার মো রশিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, আমি আজকে ১ টন শসা পঞ্চগড় থেকে জয়দেবপুর ষ্টেশনে পাঠালাম। ট্রেনে পন্য পরিবহন করা সহজ ও লাভজনক। তবে বারবার লোড-আনলোড করতে হয়। আজকে প্রথম ট্রেনে মালামাল পাঠালাম যদি সুবিধাজনক মনে হয় তবে আগামীতে আরো পাঠাবো। রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ জানান, করোনার মধ্যে জীবন এবং জীবিকা চালু রাখতে এবং লকডাউনে কৃষক যাতে কৃষি পণ্য সহজে পরিবহণ করতে পারে সে জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ পার্শ্বেল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেলওয়ে অতীতে বিভিন্ন সময় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন, ক্যাটল ট্রেনসহ পার্শ্বেল ট্রেন পরিচালনা করেছে। রেলওয়ে বর্তমানে তেল, সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহন করছে। প্রতিটিতে ৪০ মেট্রিক টন সবজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি ওয়াগন সংযুক্ত থাকছে।
জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন জানান, রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশনায় পঞ্চগড় থেকে পার্সেল ট্রেন চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সকলের মাঝে পন্য পরিবহনের বিষয়টি জানানোর জন্য আমরা জেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করেছি। ব্যবসায়ীদের সাড়াও পাচ্ছি। ১ টাকা ৫৬ পয়সা দরে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পন্য পরিবহন করতে পারবেন। ব্যবসায়ীরা চাইলে যে কোন স্থানের ষ্টেশনে পন্য ওঠাতে ও নামাতে পারবেন।