বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রেলওয়ে ট্র্যাকে বসেছে দেশে প্রথম স্বপ্নের মেট্রোরেলের কোচ। অনেক সতর্কতার সঙ্গে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের ডিপোর রেলওয়ে ট্র্যাকে বসানো হয়েছে প্রথম মেট্রোরেলের কোচ। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে সিস্টেমেটিক ওয়েতে এটা বসানো হয়েছে। এখন সবকিছু চেক করা হচ্ছে। এদিকে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৬১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি শতকরা ৮৩ দশমিক ৫২ ভাগ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত কাজের অগ্রগতি শতকরা ৫২ দশমিক ২২ ভাগ।
বৃহস্পতিবার তাঁর সরকারী বাসভবনে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের এসব তথ্য জানান। প্রথম উড়াল মেট্রোরেল ছয় কোচ বিশিষ্ট ২৪ সেট মেট্রোরেলে মোট কোচের সংখ্যা ১৪৪টি জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তার মধ্যে বুধবার ছয় কোচ বিশিষ্ট প্রথম মেট্রোরেল সেট ঢাকার উত্তরায় ডিপোর নবনির্মিত ডিএমটিসিএল জেটিতে পৌঁছেছে। দ্বিতীয় মেট্রোরেল সেটের জাহাজীকরণ জাপানের কোবে সমুদ্রবন্দরে গত বুধবার সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, আশা করা হচ্ছে আগামী ১৬ জুনের মধ্যে দ্বিতীয় সেটটি দেশের মোংলাবন্দর হয়ে উত্তরায় ডিপোতে পৌঁছবে। তৃতীয় ও চতুর্থ মেট্রোরেল সেটের শিপমেন্টটি আগামী ১১ জুন ও ১৩ আগস্টের মধ্যে মোংলাবন্দর হয়ে উত্তরায় ডিপোতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করছেন তিনি।
সেতুমন্ত্রী জানান, পঞ্চম ট্রেন সেটের জাপান থেকে শিপমেন্টের সম্ভাব্য তারিখ আগামী ১৬ জুলাই ও বাংলাদেশে পৌঁছানোর সম্ভাব্য তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর। পরে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গোপালগঞ্জ সড়ক জোন, বিআরটিসি ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় সভায় যুক্ত হন। এ সময় ওবায়দুল কাদের গোপালগঞ্জ জোনের প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা-যাওয়া করে। তাই জোনের অধীন সড়কগুলোকে সারা বছরই মেইনটেইন ও মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে।
বিআরটিএর সেবা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার ওপর গুরুত্বারোপ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড সংগ্রহ করে লাইসেন্স প্রদান করা এখন জরুরী। প্রয়োজনে ধাপে ধাপে কার্ডের সরবরাহ করতে হবে। মন্ত্রী গোপালগঞ্জ বিআরটিএতে অনিয়মের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখানে দালাল চক্র সক্রিয়। এসব অনিয়মের বৃত্ত ভাঙ্গতে হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সবুর, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) মনির হোসেন পাঠান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আবদুল মালেক, গোপালগঞ্জ সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিআরটিএ ও বিআরটিসির কর্মকর্তারা সভায় অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন।
ট্র্যাকে বসল স্বপ্নের মেট্রোরেল ॥ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে অনেক সতর্কতার সঙ্গে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের ডিপোর রেলওয়ে ট্র্যাকে বসানো হয়েছে প্রথম মেট্রোরেল কোচ। এখন সবকিছু চেক করা হচ্ছে। এর আগে ঢাকায় চালানোর জন্য মেট্রোরেলের এক সেট ট্রেনের কোচ সকাল ৮টা থেকে ডিপোতে নেয়া শুরু হয়। ক্রেন দিয়ে কোচ লরিতে তোলা হয়। এরপর একটি দিয়াবাড়ির ডিপোর রেলওয়ে ট্রাকে বসানো হয়।
বৃধবার বিকেলে দুটি বার্জ দিয়ে এক সেট ট্রেনের মোট ছয়টি কোচ ঢাকায় এসেছে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মোট চারটি কোচ ডিপোতে নিয়ে যাওয়া হয়। জেটিতে অবস্থানরত বাকি দুটি কোচ আজ শুক্রবার সকালে ডিপোতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অধীন ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প (লাইন-৬) বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ডিএমটিসিএলের দায়িত্বরত উর্ধতন কর্মকর্তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, আজকে (বৃহস্পতিবার) আমাদের আনন্দের খবর। বেলা ১২টার পর পরই প্রথম মেট্রোরেলের কোচ ডিপোর রেলওয়ে ট্র্যাকে বসিয়েছি। খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজগুলো করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার চারটি রেলকোচ ডিপোতে আনা হয়েছে। বাকি দুটি আজ শুক্রবার আসবে। তাঁরা আরও জানান, এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্ব অভিজ্ঞতা তাদের খুব কম, সেহেতু প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে। রেলওয়ে ট্র্যাকে বা রেলপথে কোচগুলো বসানোর পর অনেক কাজ আছে সেগুলো করা হবে। অনেক কিছু পরীক্ষা করতে হবে, বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ করতে হবে।
কর্মকর্তারা জানান, মেট্রোরেলের প্রথম সেটের ছয়টি কোচ ডিপোর এম্বেডেড ট্র্যাকে বসানোর পর ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মূল ট্র্যাকে তোলা হবে। এরপর চূড়ান্ত ট্রায়াল শুরু হবে। এর আগে আনুষঙ্গিক কিছু প্রক্রিয়া শেষে কোচগুলো জোড়া লাগানো হবে। যাচাই-বাছাই ও ফিটিংস শেষ করে মূল ট্রাকে তোলার জন্য মাস খানেক সময় লাগতে পারে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, সব মিলিয়ে ২৪ সেট ট্রেনের মোট ব্যয় হচ্ছে চার হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১৫০০ ভোল্টেজ বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা থাকবে। স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোয় থাকবে লম্বালম্বি সিট। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দুটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির পাশে থাকবে চারটি করে দরজা। জাপানি স্ট্যান্ডার্ডের নিরাপত্তাব্যবস্থা সংবলিত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে দুই হাজার ৩০৮ জন। ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্টকার্ড টিকেটিং ব্যবস্থা।
জানা গেছে, মেট্রোরেলে ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় আপ ও ডাউন রুটে ৬০ হাজার যাত্রী আনা-নেয়া করতে সক্ষম হবে। কারণ অধিকাংশ মানুষ বসার থেকে দাঁড়িয়ে ভ্রমণে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে বলে দাবি ডিএমটিসিএলের। উল্লেখ্য, এমআরটি-৬ নামের মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার অংশ পর্যন্ত ২০২১ সাল এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। জাপানের কাওয়াসাকি-মিৎসুবিসি কনসোর্টিয়াম মেট্রোরেলের জন্য মোট ২৪ সেট কোচ তৈরি করছে।