বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সহিংস তাণ্ডবের অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় দায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হারুন ইজাহার। বুধবার (১২ মে) চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন্নাহার রুমীর আদালতে হারুন ইজাহার জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবদুল্লাহ আল মাসুম জানিয়েছেন।
এর আগে, গত ২৮ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে নগরীর খুলশী থানার লালখানবাজারে জামেয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া লালখান বাজার মাদরাসা থেকে হারুন ইজাহারকে আটক করে র্যাবের একটি দল। এরপর তাকে নগরীর পতেঙ্গায় র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর হারুন ইজাহারকে হাটহাজারী থানায় হস্তান্তর করা হয়। ২৯ এপ্রিল রাতে তাকে আদালতে হাজিরের পর কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ৩ মে হাটহাজারীতে সহিংসতার অভিযোগে দায়ের হওয়া তিন মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেছিল পুলিশ। আদালত তিন দিন করে ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। ১১ মে আরেক মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমরা আজ (বুধবার) হারুন ইজাহারকে আদালতে হাজির করেছিলাম। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।’
হারুন ইজাহারের (৪৬) বাবা ইজাহারুল ইসলাম লালখান বাজার মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা। জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বরাবর আলোচিত বাবা-ছেলে উভয়ই হেফাজতে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। হারুন ইজাহার হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক ছিলেন।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন গত ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় ভাঙচুর, স্থানীয় ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে লিপ্ত হয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে হেফাজতে ইসলামের চার কর্মী নিহত হন। এর জেরে তিন দিন ধরে হাটহাজারী থানার অদূরে হেফাজতের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ইটের দেওয়াল তুলে অবরোধ তৈরি করে রাখে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একই ঘটনার জেরে চট্টগ্রামের পটিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় প্রথমে সাতটি মামলা দায়ের করা হয়, যাতে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। গত ২২ এপ্রিল আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে দু’টিতে প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে। আরেক মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলালসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, সংঘাতের পর থেকে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক হারুন ইজাহার, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জীসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষপর্যায়ের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতার নামে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল হেফাজতে ইসলাম, যাতে ইন্ধন দিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত।
তবে হেফাজতের সাবেক আমির জুনায়েদ বাবুনগরী কয়েকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তা ও গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না। এমনকি হেফাজতে ইসলাম ‘সরকারবিরোধী’ নয় বা বর্তমান সরকারকে হটিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসানোর কোনো এজেন্ডা হেফাজতের ছিল না বলে বাবুনগরী দাবি করেন। এ অবস্থায় হেফাজত নেতাদের একটি দল দুই দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে বৈঠকও করেন। তবে হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে।
গত ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে আকস্মিকভাবে জুনায়েদ বাবুনগরী ফেসবুকে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। আবার এ ঘোষণার রেশ না কাটতেই রাত সাড়ে ৩টার দিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ফেসবুক পেজ থেকে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথাও প্রচার করা হয়। পরে আরও দু’জনকে ওই কমিটির সদস্য হিসেবে সংযুক্ত করার কথাও জানানো হয়।