বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ঈদের দিনেও থেমে ছিল না কাজ। ২৪ ঘণ্টাই চলছে অগ্রগতির যাত্রা। ঈদের ছুটির দিনগুলোতে অধিকাংশই চলছে ফিনিসিংয়ে কাজ। টার্গেট নিয়েই লক্ষ্য অর্জনে ফিনিসিং কাজ এগিয়ে চলছে। করোনা, বন্যা, রোদ, বৃষ্টি তাদের থামাতে পারেনি চলছে দেশী-বিদেশী ৫ হাজার শ্রমিক, প্রকৌশলী আর কর্মকর্তার কর্মযজ্ঞ। তিন শিফটে কাজ চলমান। পূর্ণাঙ্গ সেতুর ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে ৬.১৫ কিলোমিটার বা ২০,২০০ ফুট দৈর্ঘ্য আর ১৮.১০ মিটার বা ৫৯.৪ ফুট প্রস্থ মূল সেতু বাস্তবে দৃশ্যমান হওয়ার পর মূল সেতুতে ওঠার জন্য মাওয়া প্রান্তে ১৪৭৮ মিটার আর জাজিরা প্রান্তে ১৬৭০ মিটার সংযোগ সেতুও নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। শ্রমিক, প্রকৌশলী আর কর্মকর্তার অধিকাংশই বাঙালী। তার মধ্যে বেশিরভাগই মুসলিম। তাদের বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান রমজানের ঈদকে উপেক্ষা করে বাঙালী জাতি তার দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বীরত্বগাথা ইতিহাসের অংশ হতে পেরে তারা গর্বিত। শ্রমিকরা জানান, ঈদের যাবতীয় প্রক্রিয়া তারা সেতু এরিয়ার মধ্যেই করেছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আয়োজনে ছিল উন্নত খাবার। পদ্মা সেতু নির্মাণ তাদের আবেগের জায়গা।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্ধন সৃষ্টি করেছে। মাওয়া থেকে জাজিরা প্রান্তে এখন হেঁটে যাওয়া যাবে। মূল সেতুর দুই পাশে সংযোগ সেতুসহ পদ্মা সেতু এখন পূর্ণাঙ্গ দৃশ্যমান। কাজ চলমান রোডওয়ে স্ল্যাব, রেলওয়ে স্ল্যাব, প্যারাপেড ওয়াল, রেলওয়ে স্ল্যাব বক্স, রেলিং, সুপার ওয়ান গার্ডার এবং রেলওয়ে ওয়ান গার্ডারসহ নানান আইটেম বসানোর কাজ। সেতুতে যানবাহন চলাচল করতে রোডওয়ে স্ল্যাব প্রয়োজন ২ হাজার ৯১৭টি যা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ১ হাজার ৬৭৬টি বসানোও হয়ে গেছে। আর রেল চলাচল করতে রেলওয়ে স্ল্যাব প্রয়োজন ২ হাজার ৯৫৯টি যা ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে বসানো হয়েছে ২ হাজার ২৬৬টি। সুপারটি গার্ডার বসানোর কাজ শতভাগ সম্পন্ন, রোডওয়ে স্ল্যাব ৮৪ শতাংশ আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ।
দৃশ্যমান এখন সেতুর সব কিছুই। সেতুর উপরে-নিচে চলছে স্ল্যাব বসানোর কাজ। নদী শাসনের কাজে নদীর পাড়ে ব্লকের ফাঁকে গুঁড়িপাথর দিয়ে শক্ত করতে দুরমুজের কাজ ও চলছে। ফিনিসিং কাজে সেতুতে প্রয়োজন প্যারাপেট ওয়াল ১০৩৯০টি যার মধ্যে বসানো হয়েছে ১৪০০টি। এই প্রকল্পের আওতায় ৪০০ কেভি বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ চলমান। ইতোমধ্যে ৩৬টি পাইলের সব ড্রাইভিং শেষ হয়েছে। মূল সেতুতে উঠতে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় সংযোগ সড়ক ও শরীয়তপুরের জাজিরায় সংযোগ সড়কসহ সার্ভিস এরিয়ার কাজ পুরোপুরি শেষ। নদী শাসনের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। এছাড়া পিচ ঢালাই, ল্যাম্পপোস্ট বসানো, বিদ্যুত, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ লাইনের কিছু কাজ বাকি যা চলমান রয়েছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী পার্থ সারথী বিশ্বাস জানান, শ্রমিকরা ঈদে ছুটি না কাটিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রজব আলী জানান, পদ্মায় তলিয়ে যাওয়া সমসংখ্যক স্ট্যানজার ইউরোপ থেকে নতুন করে আনার পর ১৯২টি থেকে ৫৬টি স্ট্যানজার ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। সমস্ত কিছুর কাজ চলমান আছে। পদ্মা সেততেু যান চলাচল উপযোগী নির্দিষ্ট সময়েই সম্পন্ন হবে। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের (লৌহজং-টঙ্গীবাড়ি) সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি জানান, পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হওয়ার পর আমাদের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। সারাদেশের উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ, নক্সাকার এ.ই.সি.ও.এম। সেতুটি নির্মাণে ব্যবহৃত উপাদান কংক্রিট ও স্টীল। সেতুর ওপরে চলবে যানবাহন আর নিচের অংশে ট্রেন। নদী শাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন।