বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জন্মদিনে সকলকে মাস্ক পরার আহ্বান জানালেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। শুক্রবার তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে তিনি জন্মদিনে তাকে যারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘নিজের কাছের মানুষকে রক্ষা করতে আপনাকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ এর আগেও বিভিন্ন সময় দেয়া ফেসবুক পোস্টে মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দেন তিনি।
এই পোস্টে জন্মদিনের ভিন্ন আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘বাচ্চারা দুর্দান্ত এক আইডিয়া প্রকাশ করেছে। তারা সকল খাবারের বদলে কেক এর ব্যবস্থা করেছে।’ এদিকে করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘(একজন ইতিবাচক মানুষ হিসেবে) এক বছর আগে আমি ভেবেছিলাম বর্তমান সময়ের আগেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু ভাইরাস থেকে সকলকে নিরাপদে রাখতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের। এই অন্ধকার পথের শেষ প্রান্তে আলো দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তারপরও আমাদের সুরক্ষা নিয়েই চলতে হবে।’
সৃজনশীল ও বিশ্লেষণাত্মক কাজের জন্য পরিচিত রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’, ডকুড্রামা ‘হাসিনা: এ ডটারস টেল’ এবং তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় জয় বাংলা কনসার্ট চারবার আয়োজনের পাশাপাশি হোয়াইট বোর্ডের মতো নীতি নির্ধারণীমূলক ম্যাগাজিন প্রকাশ করছেন।
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি ভিত্তি করে শিশুদের জন্য প্রকাশিত হচ্ছে গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’। দেশে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুকে শিশুদের উপযোগী করে উপস্থাপন করা হচ্ছ এই কমিকসের মাধ্যমে। মাঝে মাঝে তরুণদের সঙ্গে আলোচনার জন্যে উপস্থিত থাকেন তিনি। লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে রাজনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভকারী রাদওয়ান মুজিব হোয়াইট বোর্ড ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক। এই ম্যাগাজিন প্রতি চার মাসে একবার প্রকাশিত হয়। স্বাধীনতার আগে থেকে এবং স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসারে রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়।
রাদওয়ান মুজিব ২০১৩ সালে তার ফুফু অর্থাৎ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি ডকুড্রামা নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। শেখ হাসিনার বাবা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যা এবং তার পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জীবন সংগ্রামের কথা নিয়ে এই ডকুড্রামাটি নির্মিত।
দীর্ঘ ৫ বছর পরিচালক পিপলু খানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে এই ডকুড্রামাটি নির্মাণ করা হয়েছে যা দেশে ও বিদেশে প্রশংসা লাভ করেছে। তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘যখন দেশের অধিকাংশ ইতিহাস ভিত্তিক ডকুড্রামা দাফতরিক ভাষায় নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে ‘হাসিনা: এ ডটারস টেল’ গল্পের আকারে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে সাবলীল কথা বলার ধরণ থেকে গল্পটি উঠে এসেছে এবং অজানা সব কথা দর্শককে এই ডকুড্রামার সঙ্গে যুক্ত করে রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫ বছর লেগেছে গল্পের এই বর্ণনাকে চিত্রপটে ফুটিয়ে তুলতে। জাতির পিতার দেখিয়ে যাওয়া পথে, স্মৃতিকুঠরি থেকে এমনকি এমন যে কোন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে যা মানুষের কাছে ছিলো অজানা। আর এই চেষ্টা সফল হয়েছে তা এখন বলা যায়।’ তার সৃজনশীল চিন্তার কারণেই আজ ইতিহাস, গল্প, চলচ্চিত্র এবং কনসার্টের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে তথ্য পৌঁছাচ্ছে এবং তারাও বিষয়টি সাদরে গ্রহণ করছে।
চলচ্চিত্রটির শুরু হয় বেলজিয়ামে কর্কশ এক ফোনের আওয়াজ থেকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই ফোনেই জানানো হয় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকলকে বাংলাদেশে তাদের বাস ভবনে হত্যা করা হয়েছে। বাস্তব ঘটনা নির্ভর এই ডকুড্রামায় শেখ হাসিনা ও তার বোনের জীবনের সেই ৬ বছরের কথাও উঠে এসেছে যখন তাদের বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। শুধু তাই নয়, ইনডেমনিটি বিলের মত কুখ্যাত এক আইনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থা বন্ধের কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল তৎকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সেই সঙ্গে তখন বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও নীতি আদর্শকেও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি ঢাকায় ফিরে আসি ১৯৮৬ সালে এবং বনানীতে এক কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে ভর্তি হই। কিন্তু আমাকে সেই স্কুল পরিবর্তন করতে হয়। আমি বিষয়টি নিয়ে খুব বিরক্ত ছিলাম এবং জানতে চাইলাম মায়ের কাছে, কেনো আমাকে স্কুল পরিবর্তন করতে হবে। তখন তিনি জানান, খুনিদের ছেলেরাও এই স্কুলে পড়ছে। তখন আমি জানতে চাইলাম, কিভাবে খুনিরা এখনো মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে? তখন আমাকে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স প্রসঙ্গে জানানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবার কখনো আমাদের কাছ থেকে ইতিহাস লুকিয়ে রাখেনি। তাই এই নৃশংস ঘটনা সম্পর্কে আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়।’ সে সময় তার সঙ্গে থাকা শিশুরা বঙ্গবন্ধুর এই ঘটনাগুলোর কিছুই জানতো না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠতম কন্যা শেখ রেহানার বড় ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। তার বাবা শিক্ষাবিদ শফিক আহমেদ সিদ্দিক। ১৯৮০ সালের ২১ মে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের জন্ম। তার বোন টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে তিনবার বিজয়ী ব্রিটিশ এমপি। তাদের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।