জাতিসংঘে বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত ২০টি পদ বরাদ্দ

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সেনাপ্রধানের সফরের ফল । জাতিসংঘ সদর দফতরে চীফ অব স্টাফ অফিসারসহ মিলিটারি অবজারভার ও স্টাফ অফিসারের ২০টি অতিরিক্ত পদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্ব এই সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ সদর দফতরের অফিস অব মিলিটারি এ্যাফেয়ার্সের চীফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক। শুক্রবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘ সদর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এই সাক্ষাতে তিনি জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কন্টিনজেন্ট প্রেরণ এবং জাতিসংঘ সদর দফতরের বিভিন্ন উচ্চতর এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আরও অফিসার নিয়োগের ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলেন।

তখন জাতিসংঘের সিনিয়র নেতৃত্ব এ ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং এরই ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ সদর দফতরে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পদটির জন্য এর আগে বাংলাদেশ থেকে কোন অফিসার নিযুক্তির সুযোগ বা কোন অনুরোধ ছিল না, যা কেবলমাত্র সেনাবাহিনী প্রধানের অনুরোধের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অর্জন করেছে।

আইএসপিআর জানায়, জাতিসংঘ সদর দফতরে অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় এই নিয়োগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সম্মানের বিষয়। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে কঠোর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই পদের জন্য যোগ্য সামরিক অফিসারকে নির্বাচন করা হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল প্রথম বাংলাদেশী সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জাতিসংঘ সদর দফতরে এমন উচ্চতর এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেলেন। সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর পরই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে (মিনুসমা) সেক্টর কমান্ডার পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুরকে নিয়োগ দেয়া হয়।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে (সিএআর) বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের জনবল আরও বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব রাখেন এবং তাদের মোতায়েনের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যেই সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স কোম্পানি (ব্যানএসএফসি) এবং লাইট কুইক রিএ্যাকশন ফোর্সের (এলকিউআরএফ) ৫০ জনবল বৃদ্ধিসহ ব্যানব্যাটের লেভেল-১ হসপিটালকে লেভেল-২ হসপিটালে উন্নীত করার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাওয়া গেছে।

এই একই মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কুইক রিএ্যাকশন ফোর্স (কিউআরএফ) এবং ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি মোতায়েনের সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সমন্বিত স্পেশাল ফোর্স সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ। সেনাপ্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে একটি শক্তিশালী কুইক রিএ্যাকশন ফোর্স এবং একটি এভিয়েশন ইউনিট মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা শিগগিরই মোতায়েন করা হবে। ইতোমধ্যেই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক (ডিআর) অব কঙ্গোতে ৬ সদস্যের এ্যারোমেটিক ইভাকুয়েশন টিম (এএমইটি) এবং ১৩ অতিরিক্ত মিলিটারি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫টি কন্টিনজেন্টকে ইউনাইটেড নেশনস ক্যাপাবিলিটি রেডিনেস সিস্টেমের (ইউএনপিসিআরএ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নতুন কন্টিনজেন্টগুলো মোতায়েনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের এই কন্টিনজেন্টগুলোর মূল্যায়ন এবং এ্যাডভাইজরি পরিদর্শন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতোমধ্যেই ২টি কন্টিনজেন্ট ইউএনপিসিআরএস, র‌্যাপিডলি ডেপ্লয়েবল লেভেল (আরডিএল) হিসেবে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে এবং বাংলাদেশে অবস্থানকারীদের মধ্য থেকেই ২৫% রক্ষণাবেক্ষণ রিইমবার্সমেন্ট গ্রহণ করছে।

সেনাবাহিনী প্রধান চলতি বছরের মধ্যেই জাতিসংঘে নারী শান্তিরক্ষীদের জনবল ১ দশমিক ৯১ ভাগ থেকে ৮ ভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য, দক্ষিণ সুদানে ব্যানব্যাট-এর ফিমেল এঙ্গেজমেন্ট টিম তাদের অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য ফোর্স কমান্ডারের প্রশংসা অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সফরে সেনাবাহিনী প্রধান দীর্ঘমেয়াদি বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধের ব্যাপারেও জাতিসংঘের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর ফলে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট জাতিসংঘ কর্তৃক পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি মালিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের চারটি কন্টিনজেন্ট রিস্ক প্রিমিয়াম পাচ্ছে।

সেনাবাহিনী প্রধানের একান্ত উদ্যোগের কারণেই প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে মোতায়েনের পূর্বেই সকল শান্তিরক্ষীর করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ নিশ্চিত করেছে এবং ইতোপূর্বেই যারা বিভিন্ন মিশনে মোতায়েন হয়েছেন, তাদের জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে টিকা দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে জাতিসংঘের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছে।

আইএসপিআরজাতিসংঘজাতিসংঘ সদর দফতরবাংলাদেশ সেনাবাহিনী
Comments (0)
Add Comment