বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এবার বিলুপ্তপ্রায় বাতাসী মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন। এই সাফল্য বিলুপ্তপ্রায় বাতাসী মাছ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। এই গবেষক দলে ছিলেন ড. ডেবিড রিন্টু দাশ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা খানম। ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংস্থ সদর দফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আইইউসিএন (২০১৫)-এর তথ্য মতে বাংলাদেশের সুস্বাদু পানির ২৬০টি মাছের মধ্যে ৬৪টি প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায়। এর মধ্যে ৯টি অতি বিপন্ন, ৩০টি বিপন্ন, এবং ২৫টি শঙ্কাগ্রস্ত। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ২৫ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল ইতোমধ্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে। এবার সর্বশেষ সংযোজন হলো বাতাসী মাছ। দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে গত ১৯ মে এ সফলতা অর্জিত হয়।
বাতাসী মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ঘবড়ঃৎড়ঢ়রঁংধঃযবৎরহড়রফবং। এই প্রজাতির মাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও মিয়ানমারে পাওয়া যায়। সুস্বাদু এ মাছটি বর্তমানে বাজারে খুব কম দেখা যায়। এ মাছটি দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর দেহ চ্যাপ্টা ও এর ওপরের চোয়াল নিচের চোয়ালের চেয়ে কিছুটা লম্বা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বগুড়াস্থ সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র থেকে যমুনা ও আত্রাই নদীসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বাতাসী মাছের পোনা সংগ্রহ করে প্রথমে পুকুরে তা নিবিড়ভাবে প্রতি পালন করা হয়। প্রতি পালনকালে বাতাসী মাছের খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি পরিপক্ব বাতাসী মাছের খাদ্যনালিতে শতকরা ৮৬ ভাগপ্লাংটন ও ১৪ শতাংশ অন্যান্য খাদ্য বস্তুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তা ছাড়া বছরব্যাপী জিএসআই ও হিস্টোলজি পরীক্ষণের মাধ্যমে বাতাসী মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করা হয়। গবেষণা ফলে দেখা যায় যে, বাতাসী মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম হচ্ছে মে-জুলাই। বাতাসী মাছের ডিম ধারণক্ষমতা আকারভেদে হচ্ছে ১২০০-২৫০০টি। গবেষণায় আরও দেখা যায়, একটি পরিপক্ব স্ত্রী বাতাসী মাছ ৪.০ থেকে ৬.০ গ্রাম ওজনের হলেই প্রজনন উপযোগী হয়। প্রজনন উপযোগী পুরুষ বাতাসী মাছ স্ত্রী বাতাসীর চেয়ে আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট (২.৫-৪.০ গ্রাম) হয়।
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায় যে, পরিবেশ বিপর্যয়সহ বিভিন্ন কারণে এসব মাছ জলাশয়ে এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। ক্রমান্বয়ে মাছটি বিপন্নের তালিকায় চলে গেছে। এ প্রেক্ষিতে বিলুপ্ত প্রায় বাতাসী মাছকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে গবেষণার মাধ্যমে ইনস্টিটিউট থেকে এর প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে এ মাছটি এখন চাষ করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, বিলুপ্তপ্রায় মাছ রক্ষায় ধারাবাহিক গবেষণা চালিয়ে আসছে বিএফআরআই। ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউট থেকে ২৫ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি ১৮ মে বাতাসী মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়েছে।
গবেষক দলের প্রধান ড. ডেভিড রিন্টু দাস বলেন যে, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী বাতাসী মাছে পটাশিয়াম ৬১০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪০০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২০০ মিলিগ্রাম, জিংক ১৪.৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩৩.০ মিলিগ্রাম এবং মেঙ্গানিজ ২০০ মিলি গ্রাম রয়েছে, যা অন্যান্য দেশীয় ছোট মাছের তুলনায় অনেক বেশি। জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। করোনাকালে বাতাসী মাছ বেশি করে খাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা পরামর্শ প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন যে, বিলুপ্তপ্রায় মাছ পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম সম্প্রতি জোরদার করা হয়েছে। ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১২ বছরে পুকুরে দেশীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ (২.৫ লাখ টন)। পর্যায়ক্রমে সব দেশীয় ছোট মাছকে প্রজনন ও চাষাবাদের মাধ্যমে ভোক্তাদের পাতে ফিরিয়ে আনা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।