বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আয় রোজগার কমেছে সাধারণ মানুষের। দেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। এই অবস্থায় আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনকে প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা ও পরিধি কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে। এ ছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতি এড়াতে আগামী ১ জুলাই থেকে এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হবে। এজন্য আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এ সংক্রান্ত একটি ডাটাবেজ প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ বিভাগের উপসচিব মেহেদী মাসুদুজ্জামান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের নগদ অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে সরাসরি উপকারভোগীর ব্যাংক হিসাবে গভর্নমেন্ট টু পারসন (জিটুপি) পদ্ধতিতে বিতরণ করা হবে। ইতিমধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের নগদ অর্থ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে বিতরণের জন্য অভিন্ন ক্যাশ আউট চার্জ শূন্য দশমিক সাত শতাংশ নির্ধারণ করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় চলমান নগদ অর্থ প্রদান সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম/কর্মসূচিসমূহের মধ্যে যেসব কার্যক্রম/কর্মসূচির বরাদ্দকৃত অর্থ জিটুপি পদ্ধতির আওতায় আনা হয়নি, তা আগামী ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সিস্টেমে আনার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ১ জুলাই থেকে নগদ অর্থ প্রদান সংশ্লিষ্ট সব নতুন কার্যক্রম/কর্মসূচি আবশ্যিকভাবে জিটুপির আওতায় আনতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর টাকা নিয়ে নয়-ছয় রোধে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এর ফলে যোগ্য ব্যক্তির হাতে এই টাকা পৌঁছাবে। দুর্নীতির সুযোগ কমে আসবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড মহামারীতে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধিসহ কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়লেও এ কর্মসূচিতে বরাদ্দ সে তুলনায় বাড়ছে না। তবে দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ ১৫০ উপজেলার সব বয়স্ক, বিধবা ও নিঃস্ব নারীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হচ্ছে। এতে প্রায় ১৩ লাখ বয়স্ক ও বিধবা নারী নতুন করে আগামী জুলাই থেকে প্রতি মাসে সরকার থেকে নগদ ৫০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। এতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর ঘোষণার পর তা আগামী অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এতে বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এটি বেড়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সাধারণত প্রতি বছর বিভিন্ন খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩০টি মন্ত্রণালয়ের অধীন ১২৩টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর আওতায় বিভিন্ন প্রকারের ভাতা, সম্মানী, বৃত্তি, উপবৃত্তি বাবদ নগদ অর্থ সুবিধাভোগীদের দেওয়া হয়।
চলতি অর্থবছর দারিদ্র্যপ্রবণ ১১২টি উপজেলার সব বিধবা, বঞ্চিত ও নিঃস্ব নারীদের ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের ২ লাখ ৫ হাজার নারী মাসে ৫০০ টাকা হারে এ ভাতা পাচ্ছেন। আগামী বছর নতুন করে ১৫০ উপজেলার এ ধরনের সব নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখের মতো বাড়তে পারে।
এছাড়া ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বের পুরুষ ও ৬২ বছরের বেশি বয়সের নারীদের বয়স্ক ভাতা দিচ্ছে সরকার। এ কর্মসূচির আওতায়ও দেশের ১১২ উপজেলার সব বয়স্ককে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে নতুন করে ১৫০ উপজেলার সব বয়স্ককে এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এতে প্রায় ৮ লাখ উপকারভোগী যুক্ত হতে পারে। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৪৯ লাখ বয়স্ক নাগরিক এ সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া কভিড সংক্রান্ত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেটেও ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। মহামারীতে সামাজিক সুরক্ষায় কোথাও তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজন হলে এ তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।