পাবনা প্রতিনিধি : বর্ষা আসার সাথে সাথে পাবনার নদনদীগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে পানি। ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে। ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে সবজিসহ ফসলি ক্ষেত। ভাঙ্গন হুমকির মুখে বেশ কয়েকটি গ্রামসহ মসজিদ আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বেশ তৎপর আর পাবনা-২ আসনের সাংসদ আহমেদ ফিরোজ কবির ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শণসহ প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ও যমুনা নদী পাবনার প্রধান নদ। এই দুই নদীতে পানি বৃদ্ধিসহ আত্রাই, গোমতি, চিকনাই, হুরাসাগর, চলনবিলে পানি বাড়তে শুরু করেছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির কারনে নদীপাড়, তীরবর্তী এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিতসহ ফসলী জমির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে পাবনার সুজানগর, বেড়া ও ঈশ্বরদী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম।
বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব মতে যমুনা নদীর নগরবাড়ি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ০৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, পদ্মা নদীর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ২৫৭ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো সংশ্লিষ্টদের দাবী, এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে অল্প সময়ের মধ্যেই নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়াসহ নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করবে।
জেলার ঈশ্বরদী, সুজানগর ও বেড়া অংশে যমুনা এবং পদ্মা নদীর ভাঙ্গন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শণকালে কথা হয় সুজানগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন,স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী, রজব আলী, আব্দুল করিম, নারায়ন চন্দ্র সাহা, আওয়ামী লীগ নেতা,মোক্তার হোসের ফজলে এলাহী মারুফসহ বেশ কয়েকজনের সাথে। তারা বলেন, বষা শুরু হলেই নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে ফসলী জমিসহ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র ভাঙ্গন। ভাঙ্গনের ফলে গ্রাম, পাড়া, বনাড়িঘর এমনকি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চলে যায় নদী গর্ভে। তাদের অভিযোগ, নদী ভাঙ্গন রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর তীর সংরক্ষণে সিসি ব্লক ও জিওবি ব্যাগ ফেললেও বিআইডাব্লিউটিএর অপরিকল্পিত নদী ড্রেজিংয়ের ফলে সিসি ব্লকের নীচে ফাঁকা হয়ে ধ্বসে যাচ্ছে। ফলে এই ভাঙ্গন আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। নদীতীরের মানুষ আতংক আর উৎকণ্ঠার মধ্যে বসবাস করছেন। তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দাবী করেন।
এদিকে যমুনা ও পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি ও ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো প্রতিনিয়ত পরিদর্শণ এবং খোঁজখবর নিচ্ছেন পাবনা-২(সুজানগর-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির। বুধবার পরিদর্শণকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্রুত ওই স্থানগুলো রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নদী পাড়ের মানুষগুলোকে রক্ষা করতে হবে। ভাঙ্গন কবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন রক্ষায় নদীর তীরে সিসি ব্লক ও জিওবি ব্যাগ ফেললেও বিআইডাব্লিউটিএ অপরিকল্পিতভাবে নদী খননের ফলে নদীর তীর রক্ষা সিসি ব্লকের নীচে গলন দেখা দিয়েছে। অল্পতেই জরুরী ভিত্তিত্বে ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরী বলে মনে করেন নদীপাড়ের মানুষ।