উন্নয়নে ঝলক দেখাচ্ছে বাংলাদেশ

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নয়াদিল্লিভিত্তিক নীতিনির্ধারণীবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের (আরআইএস) অধ্যাপক প্রবীর দে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জেনেরালাইজড স্কিম অফ প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহতভাবে পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণেই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বাড়তির দিকে।’

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতকে চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ এবং শ্রীলঙ্কাকে সংকটের মুহূর্তে আর্থিক সহায়তা দেয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বকে নিজেদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বার্তাও দিচ্ছে দেশটি।

কূটনৈতিক বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার সোয়াপের (সাময়িক সময়ের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ) আওতায় শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। ধারণা করা হচ্ছে, এ উদ্যোগ উভয় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি টেনে তুলতে এ পদক্ষেপ সহায়ক হবে।

সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার ওই সফরের সময়ই ২০ কোটি ডলারের চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

সোয়াপের বিষয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ রিজার্ভ থেকে সোয়াপের আওতায় শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ বা ঋণসুবিধা দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগের আন্তর্জাতিক উপকরণ সোয়াপের আওতায় এ ঋণ সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার দিক থেকে অতি দুর্বল দেশের পাশে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে সোয়াপ তহবিল গঠন করা হয়।

সোয়াপের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ভুগলে এর আওতায় অন্য দেশ থেকে ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেদের রিজার্ভের অর্থ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করে থাকে। এই প্রথম বাংলাদেশ কোনো দেশকে এই ধরনের সহায়তা দিতে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা এর আগে ২০১৫ সালে ভারত থেকে সোয়াপের আওতায় সে দেশের রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ সুবিধা নিয়েছিল।

২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর তিনটি গির্জা ও তিনটি বিলাসবহুল হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর থেকে দেশটির অর্থনীতি নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর ওপর গত বছর করোনা মহামারির আঘাতে শ্রীলঙ্কার পর্যটন শিল্পসহ অন্যান্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দৈন্য দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি।

শ্রীলঙ্কাকে ঋণ সহায়তা ছাড়াও করোনায় বিধ্বস্ত ভারতের স্বাস্থ্যখাতের সহায়তায় সম্প্রতি পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। পরপর দুইবার বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিকে সহায়তা দিয়েছে ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশটি। ১৮ মে ভারতে ২ হাজার ৬৭২ বাক্স অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ থেকে শুরু করে নানা ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী পাঠায় বাংলাদেশ। এর আগে ৬ মে ৩৩৪ কার্টন চিকিৎসা সামগ্রী পাঠায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে ছিল ১০ হাজার ভায়াল রেমিসিভিরসহ অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৫.৮ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে কৌশলগত অবস্থানের কারণে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নজর পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে উন্নত দেশগুলোও। চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য পরিষদের কার্যক্রম শুরু করে ইউএস চেম্বার অফ কমার্স। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি ওই পরিষদ গঠনের লক্ষ্য।

অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগত শক্তিশালী হওয়ায় পাকিস্তানেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান বলেন, ‘বর্তমানসহ পাকিস্তানের সব সরকার ভিক্ষার থালা হাতে বিশ্বব্যাপী ঘুরে বেড়ায়। ২০ বছর আগে এটা চিন্তাই করা যেত না যে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের জিডিপি মাথাপিছু পাকিস্তানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে।

‘এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ অর্থনৈতিক পাওয়ারহাউজে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ। আর পাকিস্তানের অর্থনীতি যদি এমন ভঙ্গুর থাকে, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক সহায়তা জন্য পাকিস্তানকে বাংলাদেশের দরজায় কড়া নাড়তে হতে পারে।’

এশিয়ার নতুন রয়েল বেঙ্গল টাইগার নয়াদিল্লিভিত্তিক নীতিনির্ধারণীবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের (আরআইএস) অধ্যাপক প্রবীর দে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জেনেরালাইজড স্কিম অফ প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহতভাবে পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণেই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বাড়তির দিকে।’

তিনি বলেন, ‘ইইউর জিএসপি স্কিমের মাধ্যমে প্রাপ্ত সহায়তার কারণে কৌশলগত রপ্তানি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রাজস্ব পায় ঢাকা। এ ছাড়া দেশটি প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে। ‘বাংলাদেশ এখন এশিয়ার নতুন রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তাদের শাসনব্যবস্থা বেশ সুসংগঠিত।’

উন্নয়নে ঝলক দেখাচ্ছে বাংলাদেশপদ্মা সেতুরিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজে
Comments (0)
Add Comment