বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় চা দিবস পালিত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় চা বোর্ডের উদ্যোগে নানা আয়োজন দিবসটি পালন করা হয় গতকাল শুক্রবার। ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, চা শিল্পের প্রসার’ এই প্রতিপাদ্যে প্রথমবারের মতো দিবসটি পালিত হয়। চা দিবসের আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি উৎপাদন বাড়িয়ে চা রফতানি করা হবে বলে জানান।
গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘প্রথম জাতীয় চা দিবস-২০২১’র উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।
টিপু মুনশি বলেন, প্রথম বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ ছিল একটি ঐতিহাসিক বিষয়। ১৯৫৭ সালের ৪ জুন বঙ্গবন্ধু চা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাই সরকার এদিন জাতীয় চা দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১৯৯৬ সালে দেশের উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়ে চা উৎপাদন শুরু হয়। সেখানে চা উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেখানে চা উৎপাদন করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও ও লালমনির হাটেও চা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে সমতল ভূমিতেও চা উৎপাদন হচ্ছে এবং দিন দিন চা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চা বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় রফতানি পণ্য। চায়ের নতুন উদ্ভাবন করে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে, এখন গ্রামের মানুুষও নিয়মিত চা পান করেন। চায়ের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে সরকার বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিদেশে বাংলাদেশের চায়ের বিপুল চাহিদা রয়েছে। চায়ের উৎপাদন বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। টিপু মুনশি বলেন, ২০১৯ সালে দেশের ১৬৭টি চাবাগানে চায়ের উৎপাদন ছিল ৯৬.০৭ মিলিয়ন কেজি। এর মধ্যে রফতানি হয়েছে দশমিক ৬০ মিলিয়ন কেজি চা। ২০২০ সালে উৎপাদন ছিল ৮৬.৩৯ মিলিয়ন কেজি, আর রফতানি হয়েছে ২.১৭ মিলিয়ন কেজি চা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপি বলেন, চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশে চায়ের উৎপাদনও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার দেশে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সবধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। চা শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। দেশে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির আরো সুযোগ রয়েছে। চা শিল্পের উদ্যোক্তাদের সাথে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করলে চা উৎপাদন বাড়বে। এতে চা শিল্প আরো বিকশিত হবে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সদ্য পিআরএল-এ যাওয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: জাফর উদ্দীন, বাংলাদেশ টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: জহিরুল ইসলাম, এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট মো: জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি এম শাহ আলম, টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শাহ মঈন উদ্দীন হাসান।
পঞ্চগড়ে জাতীয় চা দিবস উদযাপিত
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের আয়োজনে পঞ্চগড়ে উদযাপিত হয়েছে প্রথম জাতীয় চা দিবস। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে ছিল সমতলের চায়ের গ্যালারি উদ্বোধন, চা প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ।
সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন। আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা এবং পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটের চাচাষি ও কারখানা মালিকরা উপস্থিত ছিলেন। চাচাষিরা পঞ্চগড়ে তৃতীয় চায়ের নিলাম মার্কেট, কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা, চা বাগানে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি ও যান্ত্রিকীকরণ এবং চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের দাবি জানান।
শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো জাতীয় চা দিবস পালিত
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার চা শিল্পের প্রসার’ এই প্রতিপ্রাদ্যকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো জাতীয় চা দিবস পালিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে নতুন চায়ের জাত উন্মুক্ত, শোভাযাত্রা, চা সামগ্রী প্রদর্শনী শেষে গবেষণা কেন্দ্রের সেমিনার রুমে অনুষ্ঠিত হয় এক আলোচনা সভা ।
চা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শেফালী বুনার্জীর সঞ্চালনায় এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এই আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট শাখা চেয়ারম্যান গোলাম মো: শিবলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) মো: শহিদুল হক ভূঁইয়া, হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মাহবুবুর রহমান।