বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : শিল্প-কলকারখানায় বিনিয়োগ হলে সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। উৎপাদনও বাড়ে। বছর শেষে যার প্রতিফলন দেখা যায় মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে। এসব দিক মাথায় রেখেই প্রস্তাবিত বাজেটে বড় ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এতে একদিকে দেশের বিনিয়োগ বাড়বে, অন্যদিকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফামের জরিপে উঠে এসেছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ কর্ম হারিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্য বলছে, করোনায় নতুন করে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে জীবিকা উজ্জীবিত করার বাজেট, যেখানে প্রবৃদ্ধির চেয়ে জীবন রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ওপর বেশ জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
কর্মসংস্থান বাড়াতে অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবনায় ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা করার দিশা দিয়েছেন। বিপর্যস্ত শিল্প খাত বাঁচাতে একগুচ্ছ প্রণোদনা আর কর সুবিধার প্রস্তাব করেছেন। শিল্প খাতে এই প্রণোদনা নতুন উদ্যোক্তারা যদি বিনিয়োগ নিয়ে আসেন, তবে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, এসব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারাই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন।
অন্যদিকে নতুন কর্মহীন ও বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব রয়েছে সরকারের। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে একটি রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, স্বল্পসুদে ঋণ সহায়তা সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে, বিশেষ করে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে। গ্রামের দরিদ্র কৃষক, প্রবাসী শ্রমিক এবং প্রশিক্ষিত ও বেকার যুবকদের কৃষিক্ষেত্রে, কৃষিসংশ্লিষ্ট উৎপাদন ও সেবা, গ্রামীণ অঞ্চলে ক্ষুদ্র ব্যবসায় এবং আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিসংশ্লিষ্ট ঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, আনসার ভিডিপি ব্যাংক এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই ঋণ বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে এবং পল্লী অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে আরও ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশন ও এনজিও ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এসব ঋণ কর্মহীনদের মধ্যে কর্ম সৃষ্টির জন্য বিতরণ করা হবে।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, দেশের বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির জন্য দুটি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১২ লাখ ৬৮ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বেকার তরুণ, বিদেশফেরত কর্মহীন এবং নিম্নআয়ের মানুষকে আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হবে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। প্রবাসে কর্মসংস্থান বাড়াতে নতুন উৎসও খোঁজা হবে। বাড়ানো হবে প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক কর্মবাজারে প্রবেশ করেন। চলতি বছরের মধ্যে আরও ১০ লাখ মানুষের আইটি খাতে কর্মসংস্থান হবে। সরকারি বড় বিনিয়োগ এবং শিল্প ও বাণিজ্যে বড় প্রণোদনার মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে।
নীতি বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সরকার দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, যার মাধ্যমে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর দক্ষতা, শ্রমের উৎপাদনশীলতা ও মজুরি বৃদ্ধি করা অন্যতম লক্ষ্য। এর মধ্যে অর্থ বিভাগের ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৪১ হাজার ৬৮০ জন যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যেটি দেশে ও বিদেশে কর্মহীন মানুষদের কাজ পেতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মধ্যমেয়াদি সংস্কার/কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী রাজস্ব বাজেটের আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৪৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নতুন নতুন দেশে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ খোঁজা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সরকারের মধ্যমেয়াদি নীতি বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে ১ দশমিক ২ কোটিরও বেশি অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশির বিদেশে কর্মসংস্থান হয়। এটি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন, প্রবাসীদের কল্যাণে গৃহীত নানা পদক্ষেপ, যেমন- স্মার্টকার্ড প্রবর্তন, মোবাইল অ্যাপে ভিসা চেকিং ও মাইগ্রেশন আইনের সংস্কার করা হচ্ছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে পরোক্ষ যেসব উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিকই আছে। তবে সে কর্মস্থান তৈরি হতে হতে বছর শেষ হয়ে যাবে। আমাদের তরফ থেকে এক কোটি মানুষকে ১২ মাসে অন্তত ২ হাজার টাকা দেওয়া দাবি ছিল। যাতে তারা অন্তত খেয়ে বাঁচতে পারে। কিন্তু সে বিষয়ে বাজেটে প্রতিফলন দেখা যায়নি।