বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সেবা সংস্থা হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসা মহানগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহে রীতিমত নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ৪ কোটি লিটার অতিরিক্ত পানি উৎপাদিত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সিস্টেম লস গড়ে ২৫ শতাংশ বিদ্যমান। অর্থাৎ সরবরাহকৃত ৭৫ শতাংশ পানির বিল পাচ্ছে সংস্থাটি। ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে মহানগরীতে সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট ছিল। ভোর রাত থেকে কলসি হাতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সাধারণ মানুষকে সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষায় থাকতে হতো। সেদিন এখন আর নেই। গত এক দশকে চট্টগ্রাম ওয়াসা একে একে ৭ হাজার কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করেছে। এর বাইরে ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। যা এই নগরীর জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে এই নগরীতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের জন্য সুপেয় পানির চাহিদা রয়েছে প্রতিদিন ৪২ কোটি লিটার। আর ওয়াসা কর্তৃপক্ষ উৎপাদন দিচ্ছে ৪৬ কোটি লিটার। অর্থাৎ ৪ কোটি লিটার বেশি। অপরদিকে, প্রতি ১ হাজার লিটারে পানি উৎপাদন ও সরবরাহ খরচ আবাসিক খাতে প্রতি লিটারে ১২ টাকা, আর বাণিজ্যিক খাতে ৩০ টাকা। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ গড়ে প্রতি লিটারে বিল পাচ্ছে ১৬ টাকা। ফলে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানির বিল বৃদ্ধির একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে অনুমতি চাইলে তা এখনও মেলেনি।
সূত্র জানায়, মূলত জাইকা ও বিশ্বব্যাংকের ঋণে ওয়াসার যাবতীয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পানি সরবরাহে উৎস যেমন রয়েছে তেমনি সমস্যাও বিদ্যমান। পানির উৎস মূলত দুটি একটি ভূগর্ভস্থ অপরটি ভূ-উপরিস্থ। আবার চট্টগ্রামে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস মূলত দুটি। একটি হালদা নদী এবং অপরটি কর্ণফুলী নদী। বর্তমানে মোহরা পানি শোধনাগার ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগারে হালদা নদী থেকে শেখ হাসিনার পানি শোধনাগারে কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করে ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে সুপেয় পানি নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২) এবং কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ভা-ালজুরী পানি সরবরাহ প্রকল্পের কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলনের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট করে সুপেয় এবং নিরাপদ পানি সরবরাহ করার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসা ৮৮ শতাংশ পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে আহরণ করে তা সরবরাহ করছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহরে ভূগর্ভস্থ পানিতে রয়েছে অতিরিক্ত পরিমাণ আয়রন এবং পানির স্তর দ্রুত নেমেও যাচ্ছে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে পাথর থাকায় গভীর নলকূপ কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল। বর্তমানে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ মাত্র ১২ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে আহরণ করে সরবরাহ করছে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে চলতি বছর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ চালু হলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন আর করা হবে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র আরও জানিয়েছে, মোহরা ও কালুরঘাট পানি শোধনাগার পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ৩০টি গভীর নলকূপ ও ২০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বিদ্যুত সঙ্কট মোকাবেলায় ১০টি গভীর নলকূপ পাম্প স্টেশনে অটোমেটিক ভোল্টেজ রেগুলেটর স্থাপন করা হয়েছে। কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ১৮শ’ ৪৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পে সরকার জাইকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার যোগান রয়েছে।
ভা-ালজুরী পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার। এই প্রকল্পে অর্থ যোগান রয়েছে ইডিসিএফ, দক্ষিণ কোরিয়া ও চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাশে অবস্থিত কাফকো, সিইউএফএল, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোনসহ প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও আবাসিক এলাকার পানির চাহিদা মেটানোর জন্য এই প্রকল্প।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর জন্য স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী মহানগরীর একটি জোনের জন্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয় প্রকল্প ব্যয় ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকারও বেশি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছেন, ১৯৬৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার ছিল একটি। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত আরও তিনটি হয়েছে। অনুরূপভাবে ৫২২ কিলোমিটারে পাইপলাইন ৭৫২ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। পাইপ লাইন প্রথমবারের মতো পুনর্বাসন হয়েছে ৫শ’ কিলোমিটার। পানি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি লিটার। বর্তমানে গ্রাহক সংযোগ ৭২ হাজার। মাসিক রাজস্ব আয় আড়াই কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তা বর্তমানে ১২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। আইএসও সনদ পেয়েছে। চলতি বছরের মতো শতভাগ সুপেয় পানি সরবরাহের টার্গেট নিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে মহানগরীতে ৭০ শতাংশ পানি সরবরাহ করছে। কিছু কিছু পকেট ও পাহাড়ী এলাকায় পানি সরবরাহের পাইপ লাইন বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। এসব নিয়ে শতভাগ পানি সরবরাহে টার্গেট নেয়া হয়েছে।