বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে বাস্তবায়নাধীন বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে কর্মচাঞ্চল্য ও গতির সৃষ্টি হবে, তা অব্যাহত রাখতে সরকার একটি মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করতে যাচ্ছে-যার মাধ্যমে সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলো ছাড়াও আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু ঘিরে এই মাস্টারপ্ল্যানে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বে-টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। রেলে কনটেইনার পরিবহন বাড়াতে ধীরাশ্রমে আন্তর্জাতিক ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, ভুটানের যে আঞ্চলিক বাণিজ্য গড়ে উঠবে সেটির সুফল নিতে বেনাপোল, ভোমরাসহ দেশের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে সমন্বিত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতুটি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল-ভোমরা স্থলবন্দরের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হবে। বিশেষ করে আঞ্চলিক সংযোগ বা রিজিওনাল কানেকটিভিটিতে অন্যতম ভূমিকা রাখবে এই সেতু। শুধু অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য নয়, আঞ্চলিক বাণিজ্যের গেটওয়ে হিসেবেও বিচেনা করা হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতুকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য ঢাকা সিটিকে পাশ কাটিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দ্রুত পরিবহনের সুযোগ তৈরি হবে।
স্বল্প সময়ে মোংলা বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহন করা যাবে। ফলে ব্যবসায়ীরা ওই বন্দরটি ব্যবহারে উৎসাহী হবেন এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। আর পদ্মা সেতুর সড়ক ও রেলপথে সরাসরি বেনাপোলকে সংযুক্ত করায় ভারতসহ নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান (ডব্লিউটিও) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াও আঞ্চলিক বাণিজ্যে পদ্মা সেতু এক যুগান্তকারী প্রভাব সৃষ্টি করবে। এই সেতুটি চালুর ফলে এর সঙ্গে দেশের সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলোর সংযোগ তৈরি হওয়ায় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি বাড়বে। এ কারণে পদ্মা সেতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্যান্য অবকাঠামোগুলো বিশেষ করে সমুদ্র ও স্থলবন্দরের কার্যক্রমে গতি আনার জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্প-১ এর আওতায় এরই মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠক থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটির কাছে জমা দেওয়া হবে। এরপর ওই কমিটি ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত অবকাঠামোগুলোর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
যেসব সুপারিশ এসেছে : গত ৭ জুন অনুষ্ঠিত রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের সভায় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: (১) পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বেনাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। এ জন্য বেনাপোল স্থলবন্দরের উন্নয়নে পৃথক প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে; (২) ভারত থেকে সরাসরি রেলযোগে বেনাপোল বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি হচ্ছে বাংলাদেশে। পদ্মা সেতু চালু হলে এটি আরও বাড়বে। এ জন্য বেনাপোল বন্দরে রেলের কনটেইনার রাখার জন্য কমলাপুর আইসিডির মতো একটি আইসিডি স্থাপন করা; (৩) বেনাপোল বন্দরে পর্যাপ্ত স্থাপনসহ ট্রাকস্ট্যান্ড ও ওপেন ইয়ার্ড, গোডাউন ও ল্যাবরেটরি সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ; (৪) পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বেনাপোল এবং ভোমরা স্থলবন্দরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। এ জন্য যাত্রী ও মালামাল বেনাপোল বন্দর থেকে ভোমরা বন্দরে স্থানান্তর এবং স্থলবন্দরে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা (৫) মোংলা বন্দরের কোল্ডস্টোরেজ অবকাঠামো তৈরি করা; এবং (৬) দেশের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে শুধু তাই নয়, বর্তমানে বেনাপোল বন্দর থেকে আমদানিকৃত পণ্য ঢাকায় আনতে যে সময় লাগে, সেতু চালুর পর তা অনেকাংশে কমে আসবে। একইভাবে ঢাকা থেকে রপ্তানি পণ্যও দ্রুত পরিবহন করা যাবে।
পণ্য পরিবহনে গতি আসায় দুই দেশের সীমান্ত স্থলবন্দরগুলোর কার্যক্রমেও গতি আসবে। এ কারণে বর্তমানে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরে যে ধরনের অবকাঠামো সুবিধা বিদ্যমান সেগুলো আরও উন্নত করতে হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত থাকলেও এই সেতুকে ঘিরে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে সরকারের আরও অনেক মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ সংস্থা জড়িত। সে কারণে সরকারের এই পরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, রেল মন্ত্রণালয় এবং এসব মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডা, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিয়ে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে গতি আসবে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্য অবকাঠামোগুলোর উন্নয়ন জরুরি। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে চাইলে সবার আগে দেশের বহির্বাণিজ্যের প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দরের উন্নয়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন জড়িত। দেশের অর্থনীতি যত বড় হচ্ছে-বন্দরের ওপর চাপ তত বাড়ছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব বে-টার্মিনাল, ধীরাশ্রম আইসিডিসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার।