বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি জীবনযাত্রায় করোনার ব্যাপক প্রভাব ছিল। জীবন ও জীবিকা ছিল সংকটে। এমন ক্রান্তিলগ্নের বছরটিতে বড় একটি সুখবরও মিলেছে। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশ পুরোপুরি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ পুরোপুরি উন্নয়নশীল দেশ হয়ে যাবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন সুখবর বাংলাদেশকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
এর আগে ২০১৫ সালে আরেকটি সুখবর পেয়েছিল এ দেশের মানুষ। ওই বছর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ করে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের নাম সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। সিডিপির নিয়ম অনুযায়ী, পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে নির্দিষ্ট মান অর্জন করতে হয়। ২০১৮ সালের পর এবার দ্বিতীয় মূল্যায়নেও মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—এই তিন সূচক দিয়ে একটি দেশ এলডিসি থেকে বের হতে পারবে কি না, তা ঠিক করা হয়। অন্তত দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছে, যা এর আগে কোনো দেশ পারেনি। মান অর্জন করায় বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও লাওসকে সুপারিশ করেছে সিডিপি। যোগ্যতা অর্জন করা সত্ত্বেও মিয়ানমার ও তিমুর লেসেথোকে সুপারিশ করা হয়নি। কোনো দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য সিডিপি প্রথমে জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে (ইকোসক) সুপারিশ পাঠায়।
তারপর ইকোসক তা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে উঠবে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ। কিন্তু করোনা প্রেক্ষাপটসহ নানা বিবেচনায় বাংলাদেশকে বাড়তি দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংকটের মধ্যে এটি একটি সুখবর। আবার এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। করোনার কারণে সেই চ্যালেঞ্জ আরও বাড়ল। কোন প্রেক্ষাপটে এলডিসি তালিকা করতে হলো, তা জানা যাক। সদস্যদেশগুলোকে উন্নয়নশীল ও উন্নত—দুই শ্রেণিতে ভাগ করে জাতিসংঘ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যেগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল, সেগুলো নিয়ে ১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা করা হয়। এলডিসিগুলো যাতে অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও আর্থসামাজিক মর্যাদা বাড়াতে পারে, সে জন্য তারা শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধাসহ নানা সুবিধা পায়।
১৯৭৩ সাল থেকে এলডিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য দর-কষাকষি চালিয়ে যায় বাংলাদেশ। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এই দর-কষাকষিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্রায় অর্ধশতাব্দী এলডিসি হিসেবে নানা ধরনের বাণিজ্যসুবিধা পেয়ে আসছে। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশ এসব সুবিধা হারাতে থাকবে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) হিসাবে এলডিসি থেকে বের হলে বাড়তি শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বছরে ৫৩৭ কোটি ডলার বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।
এবার দেখা যাক বাংলাদেশ এই মুহূর্তে কোন কোন দেশের কাতারে আছে। উগান্ডা, কিরিবাতি, হাইতি, টুভালু, জিবুতি, গিনি, নেপাল, মিয়ানমারের মতো দেশের সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশের কাতারে থাকবে বাংলাদেশ। তখন বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।