বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : লকডাউন শিথিলের খবরে হাসি ফুটেছে গরু-ছাগলের খামারিদের মুখে। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকায় ট্রাকে ট্রাকে কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন খামারি ও পাইকাররা। নগরীর অলিগলিতে থামছে গরুর ট্রাক। রাজধানীর স্থায়ী গাবতলী পশুর হাটে গরু বিক্রি হচ্ছে। রংপুর থেকে ঢাকার গাবতলী হাটে এসেছেন সুলতান, তার দাম ১২ লাখ। নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে এসেছেন রাজা, তার দাম ১৯ লাখ। এরই মধ্যে মানিকগঞ্জ থেকে এসেছেন বাদশা, তার দাম ১৫ লাখ। নাটোর থেকে এসেছেন সম্রাট (গাবতলী হাটে) তার দাম ১০ লাখ হাঁকা হচ্ছে। পাবনা, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির গরু আসছে। বড় গরুর পাশাপাশি এবার ছোট গরুও আসছে বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আসতে পথে পথে বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে। দিতে হচ্ছে বখরা। অনেক এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। ছিনতাই করা হচ্ছে গরুর ট্রাক।
শুক্রবার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় ডাকাতদের কথায় গরুবাহী ট্রাক না থামানোয় চালককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সড়ক পথ ও নৌ-পথেও আসছে গরু-ছাগল। পাড়া-মহলস্নায় দুয়েকটি করে গরু বিক্রিও হচ্ছে। মানিকগঞ্জের সিংড়া থেকে ট্রাকে করে ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন সিরাজ মিয়া। গরু নিয়ে পলস্নবীর হাটে যাওয়ার কথা তার। শুক্রবার দুপুরে পর সেই ট্রাক থামায় মিরপুর কালসী এলাকা গরু ব্যবসায়ীরা। তারা পাইকার হিসেবে পরিচিত। তারা গরুর মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে সবগুলো গরু কিনে নেন। মাঝারি মানের গরুগুলো ৬০ হাজার টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। পাইকার সালমান জানান, তারা গরুগুলো ভালো খাবার খাইয়ে গোসল করিয়ে প্রতিটি গরু হাটে ৮০ হাজার টাকা করে বিক্রি করবেন। ঈদের মৌসুমে এটাই তাদের ব্যবসা। শুক্রবারে মিরপুর ছয় নম্বর কাঁচা বাজারের আশপাশে বেপারীরা গরু নিয়ে আসেন। এক ঘণ্টায় ছয়টি গরু বিক্রি হয়। এখন থেকে গরুর কিনলেন মিজান মোলস্না।
তিনি জানান, তার মাঝারি মানের গরুর কেনার ইচ্ছে ছিল, নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে পছন্দমতো গরু পেয়ে তিনি কিনে নেন। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডিজিটাল পশুর হাটে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। তবে ঢাকার বাইরে অনলাইনে গরু বিক্রিতে মন্দা যাচ্ছে। মহামারি করোনার কারণে হাটের ঝক্কি ঝামেলা কমাতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে গরু কিনছেন। ঢাকার পাশে সাভার, বিরুলিয়া, মধুমতি মডেল টাউন, টঙ্গী, শ্রীপুর, নরসিংদী, কেরানিগঞ্জ ও আশুলিয়ায় বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নামে গরু বিক্রি চলছে। গতকাল ঢাকার এক সরকারি চাকরিজীবী ওয়াহিদুজ্জামান গাবতলীর পাশে বিরুলিয়া গ্রামের একটি খামারি পরিবারের কাছ থেকে একটি বড় গরু কিনেছেন এক লাখ ১৮ হাজার টাকায়। ওয়াহিদুজ্জামান জানান, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সকালে নিজের গাড়িতে গিয়ে একেবারে দেশীয় গরু কিনেছেন। ঝামেলাবিহীন গরু কেনায় তিনি খুব খুশি। বিক্রেতারা তার বাসায় গরু পৌঁছে দিয়েছেন। আজ (শনিবার) থেকে বুধবার (২১ জুলাই) পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশুর হাট বসবে। আনুষ্ঠানিকভাবে হাট চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত।
অন্যান্য বছরের মতো শেষ সময়ে পুরোঢাকা হয়ে ওঠতে পারে গরুর হাট। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মোট ২১টি গরুর হাট প্রস্তুত রয়েছে। কোরবানির পশুবাহী যানবাহনের নিরাপত্তা বিধান ও যানবাহনগুলোকে ফেরি পারাপারে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ ওর্ যাবকে সহযোগিতার জন্য চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য মোট এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি হৃষ্টপুষ্ট গবাদি পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষ রয়েছে ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার। ছাগল-ভেড়া আছে ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার। এ ছাড়াও দুম্বা, উট, হরিণসহ অন্যান্য পশু রয়েছে ৪ হাজার ৭৬৫টি। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই বলছেন এবার দেশি পশুতেই মিটবে কোরবানির চাহিদা। গত বছর ঈদুল আজহায় গরু-ছাগল মিলিয়ে প্রায় এক কোটি ১১ লাখ পশু কোরবানি হয়। এর আগের বছর ২০১৯ সালের ঈদুল আজহায় ৪২ লাখ গরুসহ প্রায় এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল। তার আগের বছর ২০১৮ সালের ঈদুল আজহায় ৩৮ লাখ গরুসহ প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে।
সরকারের নানা উদ্যোগে গরু ও ছাগল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গত এক বছরে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পাঁচ লাখ। দেশে সারা বছর মাংসের জোগান ও কোরবানির চাহিদা মেটানোর পর বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে গরু-ছাগলের মাংস। গত এক বছরে গরুর উৎপাদন বেড়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার। আর ছাগলের উৎপাদন বেড়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার। গবাদিপশু উৎপাদনে নীরব বিপস্নব ঘটেছে দেশে। অথচ কোরবানির ঈদে বৈধ-অবৈধ পথে ভারত, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ গরু আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো হতো। সারা বছরে এই সংখ্যা ছাড়িয়ে যেত প্রায় পঞ্চাশ লাখে। ২০১৪ সালে হঠাৎ প্রতিবেশী একটি দেশ গরু আসা বন্ধ করে দেয়। এর চার বছর পর ২০১৮ সালে গরু-ছাগলে স্বয়ংসম্পূর্ণতার ঘোষণা দেয় সরকার।
এখন কোরবানির জন্য দেশীয় গরুতে হাট ভরা থাকে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান যায়যাযদিনকে বলেন, বর্তমানে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়ছে। ছোট-বড় মিলিয়ে এখন খামারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এখন কারবানির ঈদের হাটে চাহিদা মিটিয়েও আট থেকে দশ লাখ গরু-ছাগল অবিক্রীত থাকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, গবাদিপশু উৎপাদনে বিশ্বে দ্বাদশ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এককভাবে ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। ছাগলকে গরিবের গাভী বলা হয়। বস্ন্যাক বেঙ্গল ছাগল বিশ্বের অন্যতম সেরা জাত। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের যমুনাপারি ছাগলকেও বিশ্বের অন্যতম বিশেষ জাত হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে।