বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নোয়াখালীর ভাসানচরে ২৮০০ রোহিঙ্গাকে ঈদ উপহার হিসেবে ১৩ ধরনের জীবিকার সামগ্রী পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁদের জীবিকার পথ সুগম করতে এ উপহার পাঠানো হয়। প্রথমবারের মতো জীবিকার এসব সামগ্রী পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নানা বয়সের নারী-পুরুষ। কারণ, নিরাপদ আশ্রয় পেলেও জীবিকা নির্বাহ নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন তাঁরা।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের ওপর চাপ কমাতে সাত মাস আগে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে নোয়াখালীর ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে আট ধাপে যাওয়া ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাস করছে নোয়াখালীর ওই দ্বীপে।
জীবিকা সামগ্রী হিসেবে জাল পেয়েছেন রোহিঙ্গা জিয়াউর রহমান। ওই জাল জিয়ার হাত থেকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁর সাত বছর বয়সের ছেলে। ভাসানচর, ১৬ জুলাই।
উপহারসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে মাছ ধরার ৮০০ জাল, ১০০টি সেলাই মেশিন, ৫০টি রিকশা ভ্যান, দেশি পাঁচ হাজার হাঁস, দেশি পাঁচ হাজার মুরগি, চুল কাটার ৪৫ সেট সরঞ্জাম, জুতা সেলাইয়ের ২৮ সেট সরঞ্জাম, রিকশা ভ্যান মেরামতের ২৫ সেট সরঞ্জাম, ইলেকট্রিশিয়ানের মেশিনপত্র ৭ সেট, কাঠমিস্ত্রির যন্ত্রপাতি ৫০ সেট, মুদিদোকানের জিনিসপত্র দেওয়া হয় ১০০ জনকে, দেশি ছাগল ১০০টি ও ২০০ জনকে দেওয়া হয় মাছের পোনা।
জীবিকার নানা সামগ্রী পেয়ে এসব রোহিঙ্গা আপাতত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে আসা এসব মানুষ বলছেন, রাখাইনের আদিনিবাসে ফিরে যাওয়াটাই তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। যদিও মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থান তাঁদের যাওয়াটা আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। নিজেদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটিতে ফিরতে ভাসানচরের রোহিঙ্গারা সহায়তা চান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।
১০০টি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। এখন সেলাই মেশিন হাতে পাওয়ায় আবার কাজ করতে পারবেন রোহিঙ্গা নারীরা।
প্রচণ্ড রোদ মাথায় নিয়ে আজ শুক্রবার সকালে ভাসানচরের ওয়্যারহাউসের সামনে জড়ো হন রোহিঙ্গারা। ঘণ্টা দুয়েক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের হাতে উপহারসামগ্রীগুলো তুলে দেওয়া হয়।
কক্সবাজারের বালুখালীর রোহিঙ্গা শিবিরে থাকার সময় ফাতেমা খাতুন, নুর জাহান, পারভীন আক্তার—তিনজনেরই সেলাই মেশিন ছিল। সপ্তাহে সাত দিন না হলেও তিন থেকে চার দিন হাতে কাজ থাকত। দিনে রোজগারের পরিমাণ ছিল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। ভাসানচরে আসার সময় কেউ কেউ সেই সেলাই মেশিন রেখে এসেছেন, কেউবা বিক্রি করে এসেছেন। এখানে এসে তাঁদের ঘর-সংসার সামলানো ছাড়া কোনো কাজ ছিল না। ছিল না রোজগারের উপায়। তাই কাল সকাল থেকে মেশিন বুঝে নিয়ে প্রচণ্ড রোদে বসেও তাঁদের মুখে বিরক্তি ছিল না। উল্টো ছিল স্বস্তি।
দেওয়া হয় ৫০টি রিকশা ভ্যান নুর জাহান বলেন, গত ছয় মাস তো কোনো কাজ ছিল না। স্বামীর কোনো কাজ নেই। কোনোরকমে দিন চলে গেছে। এখন সেলাই মেশিন হাতে পাওয়ায় আবার কাজ করতে পারবেন। তাই আজ তাঁর খুশি হওয়ারই কথা।
আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের পরিচালক কমোডর এম রাশেদ সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে ভাসানচরে নিয়ে আসা প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গার খাবারসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। এটি বিবেচনায় নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁদের মধ্যে নানা ধরনের সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মূলত যে কাজে রোহিঙ্গারা পারদর্শী এবং তাঁদের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, এমন সব জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তাদের দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এখানকার ৩৮টি পুকুরে এক লাখের বেশি মাছের পোনা ছাড়া হলো। আশা করি, এ সামগ্রীগুলো যে রোহিঙ্গারা পেলেন, তাতে তাঁদের জীবিকার চাহিদা পূরণ হবে।
সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো রিকশা ভ্যানের একটিতে বসে ছিলেন কক্সবাজারের কুতুপালং শিবির থেকে আসা রুবেল। তিনি জানালেন, তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর পরিবার। কক্সবাজারে ভ্যান চালিয়ে আয় করলেও সেই সুযোগ গত সাত মাসে পাননি। মাছ ধরার জাল দেওয়া হয় ৮০০ জনকে মাছ ধরার জাল নিয়ে ওয়্যারহাউস এলাকা ছাড়ার সময় কথা হয় কক্সবাজারের বালুখালী শিবিরের এক রোহিঙ্গা মাঝি জিয়া রহমানের সঙ্গে। রাখাইনে কৃষিকাজ করলেও তিনি ভাসানচরে এখন মাছ ধরবেন।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের ওপর চাপ কমাতে সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে আনতে ভাসানচরের প্রকল্পটি তৈরি করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে সরানোর সময়ও বিরোধিতা করেছে জাতিসংঘ। তবে সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার দুই সহকারী হাইকমিশনার ভাসানচর ঘুরে গেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বর্ষা শেষে বাকি ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার আগেই ভাসানচরের কাজে যুক্ত হবে জাতিসংঘ।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত আট দফায় কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। এ মুহূর্তে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত ওই দ্বীপে ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নারী, শিশু ও পুরুষের সংখ্যা যথাক্রমে ৫ হাজার ৩১৯, ৮ হাজার ৭৯০ ও ৪ হাজার ৪০৯।