বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আগে কোরবানির পশুর হাড়, শিংসহ, নাড়িভুড়ি বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হতো। তবে, এখন সেগুলো আর ফেলনা নয়। রাজধানীতে কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্টাংশের (হাড়, শিং, অণ্ডকোষ, নাড়ি-ভুড়ি, মূত্রথলি, পাকস্থলি, চর্বি) রমরমা ব্যবসা চলছে। কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে এসব দ্রব্যের।
সংশ্লিষ্ট্র সূত্রে জানা গেছে, বর্হিবিশ্বে বেড়েই চলছে দেশের গরু-মহিষের নাড়ি ভুঁড়ি (ওমাসম) ও পেনিসের (পিজল) চাহিদা। এ থেকে তৈরি হয় উন্নত মানের স্যুপ ও সালাদ যা চীনাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় খাবার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা মূল্যের ও ওমাসম রফতানি হয়। অবশ্য ওমাসম রফতানি সমিতির দাবি হচ্ছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে বিশ্বে ৩২ হাজার কোটি টাকার ওমাসমের বাজার রয়েছে বলে সমিতির কাছে তথ্য রয়েছে। তারপরও করোনা সঙ্কটেও ৩২০ কোটি টাকার ওমাসম বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে। করোনা সঙ্কট না থাকলে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ছাড়াতো এর রফতানি আয়। এসব পণ্যের সিংহভাগই রফতানি হচ্ছে প্রধানত চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে। রফতানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ খাতের রফতানিকারকরা মিলে বাংলাদেশ নাড়িভুঁড়ি ও জনকেন্দ্রিয় রফতানিকারক সমিতি নামে নতুন একটি সমিতি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কোরবানির পর সংশ্লিষ্টরা ওমাসম ও পিজল সংগ্রহ করে থাকে।
গরুর তৃতীয় পাকস্থলীর স্থানীয় নাম সাতপাল্লা। যার ইংরেজি নাম ওমাসম। আর পেনিসকে বলা হয় পিজল। গরু জবাইয়ের পর এক সময় নদী খালে ফেলে দেয়া হতো এসব উচ্ছিষ্ট। যা পরিবেশও দূষণ করতো। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব পণ্যের কদর রয়েছে জেনে এখন নিয়মিত এ পণ্য রফতানি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোরবানির ঈদের ওমাসম সংগ্রহের অন্যতম সময়। বর্তমানে এক টন ওমাসম আট হাজার ডলারে রফতানি হচ্ছে। ফলে প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে এক টন ওমাসম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার। এক কনটেইনারে ২৮ টন ওমাসম বিদেশে রফতানি হয়। গড়ে প্রতি মাসে ১৪ কনটেইনার ওমসাম বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এর ফলে বছরে এখন ১৬৮ কনটেইনার ওমাসম বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ফলে ১৬৮টি কনটেইনার ওমাসমের মূল্য ৩১৯ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।
আড়ৎদাররা কসাই বাক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতি পিস কাঁচা (লবণযুক্ত) পিজল কিনেন ৫০ থেকে ৭০ টাকা দামে। যা প্রক্রিয়াজাত শেষে প্রতিকেজি রফতানিকারকের কাছে বিক্রি করেন ৫৫০-৬৫০ টাকা দামে। আড়ৎদার থেকে রফতানিকারক পর্যায়ে প্রতিকেজি প্রক্রিয়াজাত ওমাসম বিক্রি হয় ৫০০-৬৫০ টাকা। প্রক্রিয়াজাত ছাড় প্রতিকেজি কাঁচা (লবণেযুক্ত) ওমাসম বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
রফতানির পর বিশ্ব বাজারে প্রতি টন ওমাসম বিক্রি হয় আট হাজার ডলার। রফতানি শেষে প্রতি টন পিজল বিক্রি হয় আট থেকে সাড়ে আট হাজার ডলার। বাংলাদেশ ওমাসম এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, করোনা সঙ্কটের কারণে ওমাসম রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন গড়ে প্রতি মাসে ১৪টি কনটেইনার ওমাসম বিদেশে রফতানি হয়। দেশের ওমাসমের চাহিদা অনেক। আমার পরামর্শ, গরু-মহিষ জবাইয়ের পরে ওমাসম ও পিজল লবণ দিয়ে সংগ্রহ করা দরকার। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়বে।
জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রামের ১০ জনসহ সারাদেশের ৪০ জন ব্যবসায়ী গরুর ওমাসম ও পিজল রফতানি করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোক ঠিক করে বছরজুড়েই তারা ওমাসম ও পিজল সংগ্রহ করেন। কোরবানির সময় ওমাসম ও পিজল সংগ্রহ করা হয় বছরের মোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশ। তারপর প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে নাড়ি ভুঁড়ি থেকে চর্বি বের করে ফেলা হয়। করোনা সঙ্কটে এখন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাসে ১৪টি কনটেইনার ওমাসম রফতানি হয় এবং একেকটি কনটেইনারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার পিস ওমাসম থাকে বলে জানান প্রস্তাবিত সমিতির সদস্যরা। ইংরেজিতে এই নাড়ি ভুঁড়ির নাম ‘ওমাসম’, যা পশুর তৃতীয় পাকস্থলী নামেও পরিচিত। এক সময় উচ্ছিষ্ট হিসেবে তা খালে ও ডোবায় ফেলে দেয়া হতো।
এক টন (এক হাজার কেজি) প্রক্রিয়াজাত করার পর ৭০০ কেজি ওমাসম পাওয়া যায়। ওমাসম দিয়ে উন্নত মানের স্যুপ ও সালাদ তৈরি হয়। যা চীনাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় খাবার। দেশের ওমাসম রফতানিকারকদের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম অঞ্চলের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্কাই নেট সি ফুডস কোম্পানি, কনফারেন্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ক্যামরিজ সি ফুড ইন্টারন্যাশনাল, আরএসএম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্যান্ডার্ড অ্যালাইড ফুড ইন্টারন্যাশনাল, জিআর এক্সপো ইন্টারন্যাশনাল, ভিভিড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ইত্যাদি।