মোঃ সুজন বিশ্বাস ,কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬ তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দিনটিকে সরকার জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ বছর সরকারীভাবে ‘বঙ্গবন্ধুর’ ছবি সম্বলিত একটি নির্ধারিত লোগো তৈরি করে সকল দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগ নিজের ইচ্ছেমত ‘ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় শ্লোগানকে বিকৃত করে, জয় বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা, লিখে কার্যালয়ের প্রধান ফাটকে ঝুলিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধুর চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের মনে দারুন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধায় কুষ্টিয়া চৌড়হাস সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে সড়ক বিভাগের মেইন সাইনবোর্ডের নিচে এই ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। সরজমিনে সেখানে উপস্থিত হয়ে ব্যানারে দেখা যায়, কোন লোগো ছাড়াই কালো ব্যানারের টপে, জয় বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা, লেখা রয়েছে, ১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস, আল্লাহ সর্বশক্তিমান, হলুদ সাদা অক্ষরে আরও লেখা রয়েছে জাতীয় শোক দিবস ৪৬ তম শাহাদৎ বার্ষিকীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলী, সড়ক বিভাগ কুষ্টিয়া । এমন একটি দায়িত্বশীল সরকারী দপ্তরে শোকের মাসে নির্ধারিত লোগো ছাড়া, জাতীয় শ্লোগানকে বিকৃত করে ব্যানার ঝুলানোয় দপ্তরের দায়িত্ববোধ, সচেতনতা, আদর্শগত চেতনা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। মহানমুক্তিযুদ্ধে পরাজয় হওয়ায় পাকিস্তানী শাসক গোষ্টি চেয়েছিল যে ভাবেই হউক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলে বাংলাদেশকে চিরতরে শেষ করে দেয়া যাবে। এরই সুত্র ধরে পাকিস্তানী দোসররা ১৯৭৫’র ১৫ আগষ্টে কালো রাতে ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ীতে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারের নিশৃংসভাবে হত্যা করে। সেই থেকে জাতির কাছে ১৫ আগষ্ট একটি শোকাবহ দিন। পরবর্তিতে দিনটিকে সরকারীভাবে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি বছর আগষ্ট আসলেই সরকারী, বে-সরকারী, শায়ত্বশাসিত, এনজিও, সকল প্রতিষ্ঠানেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানো, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে আলোচনাসহ নানা কর্মসুচী পালিত হয়ে আসছে।
শোক দিবস উদযাপন যথাযথভাবে পালনের জন্য দলীয় নেতা কর্মিদের প্রতি নির্দেশনার পাশাপাশি প্রতিটি সরকারী দপ্তরের প্রধানদেরও নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার এত বছর পরেও তাঁর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আলোচনা সভা, ব্যানার, ফেষ্টুনে নানা অসঙ্গতি দেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষের চেতনায় নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। শোকের মাসে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের এমন কর্মকান্ড দেখে রীতিমত আওয়ামীলীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মিরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে তারা কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ স্বীকৃত প্রাপ্ত বাংলাদেশের জাতীয় শ্লোগান, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। যে শ্লোগানে ১৯৭১ সালে মহানমুক্তিযুদ্ধে বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা পাকসেনাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। সেই শ্লোগান ছাড়া বাংলাদেশীদের জন্য আর শ্লোগান হতে পারে সে জন্য এ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, শ্লোগান আজকে জাতীয় শ্লোগানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সেই জাতীয় শ্লোগানকে বিকৃত করে একটি খোদ সরকারী প্রতিষ্ঠান শোকের মাসে রিতিমত জনসম্মুখে ব্যানার ঝুলিয়ে রেখেছে কি ভাবে তা কারো বোধগোম্য নয়। একটি সুত্র জানিয়েছে, কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চেতনার পরিপন্থির ভুত আছড় করেছে, সেই ভুতে গোটা জেলাবাসিকে বিভ্রান্ত করছে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বানোয়াট, ফেক মনোবৃত্তি সৃষ্টিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সুত্রটি দাবী করেছে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ সদর উদ্দিন খান বলেন, আসলে সড়ক বিভাগের মত একটি বিভাগের এহেন কান্ডে আমাদের মন্তব্য করার অর্থ হলো তাদেরকে হাইলাইটস করা, তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় শ্লোগান সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারণা নেই, তারা কি হতে পারে তা স্পষ্ট। তাই নিজ বিবেচনায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
শোক দিবসের কর্মসুচী ঘোষণা করতে যেয়ে ব্যানারে এমন শ্লোগান লেখা হলো সে সম্পর্কে জানতে কুষ্টিয়া সওজের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদুল করিম’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বার তো সব ঢাকা থেকে ফরমেট দিয়ে দিয়েছে আমরা শুধু প্রিন্ট করে লাগিয়েছি। সরকারী ব্যানারের বাইরে অন্য কোন ব্যানারতো হওয়ার কথা নয়, এ ব্যানারটির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই, আমি খোঁজ নিচ্ছি, কেন কি ভাবে হলো এটি। এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উক্ত স্থানে স্থাপিত ব্যানারটি সংশোধনপুর্বক তা পুনঃস্থাপনের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।