মেহেদী হাসান আকন্দ : “পাগলিটাও মা হয়েছে, তবে বাবা হয়নি কেউ; পাগলি বলে যায়নি ছেড়ে প্রসব ব্যথার ঢেউ” জনপ্রিয় একটি কবিতার কয়েকটি চরণের করুণ বাস্তবায়ন হয়েছে নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামে। নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত রোববার কন্যা সন্তানের মা হলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ববিতা নামের এক নারী। মানসিক ভারসাম্যহীন ববিতা মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মৃত মুনির হোসেনের কন্যা। মা বিনা খাতুন একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মহিলা। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়। ছোট বোন রোজিনার বিয়ে হয়েছে। এক ভাই আব্দুল্লাহ মাত্র ১০বছর বয়স। ৩বছর ঘরে শিকলে বাধাঁ ছিল ববিতার জীবন। প্রায় ১১মাস পূর্বে শিকল খুলে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যায় ববিতা।
মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে প্রায় তিনমাস ধরে পার্শবর্তী উপজেলার আটপাড়া বাজারের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতেন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারসাম্যহীন মহিলাটির পরিচয় অনুসন্ধান করে বিষয়টি মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেন। মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানসিক ভারসাম্যহীন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাটিকে উদ্ধার করে গোবিন্দশ্রী তার গ্রামের বাড়িতে পাঠায়। তিনি মহিলাটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। গত রোববার মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মহিলাটির কোলজুড়ে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি উম্মে সালমা হাসপাতালে গিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা গর্ভে জন্ম নেয়া ফুটফুটে কন্যা সন্তান দেখে আসেন। তিনি বাচ্চার সুরক্ষা এবং মায়ের চিকিৎসার খোজখবর নেন।
মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাঈম আহমেদ রিয়াদ জানান, রোববার মহিলাটির কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে। মা ও মেয়ে ভালই আছে। মদন উপজেলার নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ মোবাইল ফোনে জানান, গত ১৫ দিন আগে আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে ওই ভারসাম্যহীন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাটিকে উদ্ধার করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। রোববার তার একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। অনেকেই বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোঃ আলাল উদ্দিন জানান, বিষয়টি তিনি অবগত। বাচ্চাটিকে কেউ দত্তক নিতে আগ্রহী হলে প্রয়োজনীয় আইনী প্রক্রিয়া অবলম্বন করে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নেত্রকোণা জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী মনোরঞ্জন সরকার বলেন, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আজ মানসিক ভারসাম্যহীন নারীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। সমাজের এসব বখাটেদের খুজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। যাতে সমাজে এধরনের ঘটনার পুরাবৃত্তি না ঘটে।