বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মহাসড়কে চুরি-ডাকাতিসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক থেকে পণ্য চুরি প্রতিরোধের জন্য একটি জুতসই নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। নীতিমালা তৈরির জন্য ১২ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। অতিরিক্ত আইজিপি ও হাইওয়ে পুলিশের প্রধান মল্লিক ফখরুল ইসলামকে ওই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকেই সড়ক-মহাসড়কে চুরি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতি ঘটছে। রপ্তানিমুখী গার্মেন্টের পণ্য ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানে পরিবহনের সময় চুরি-ডাকাতি হচ্ছে বেশি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চুরি-ডাকাতি প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে। এসব চুরি-ডাকাতি রোধে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে টহল ও নজরদারি বাড়ানোর জন্য দফায় দফায় আহ্বান জানানো হয়েছে। হাইওয়ের সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের টহলদারি ও তদারকি করার পরও চুরি-ডাকাতি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ঢাকার মিরপুর বেড়িবাঁধ, ধউর ও আশুলিয়া, বাইপাইল সড়কেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে পুলিশের কাছে অনুরোধ জানায় বিজিএমইএ। সংগঠনের পক্ষ থেকে মহাসড়কে চুরি ও ডাকাতি প্রতিরোধে সব ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে ট্র্যাকিং ডিভাইস, জিপিএস স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতিকে বলা হয়েছে। মালিকদের বলা হয়েছে জিপিএস না থাকলে ট্রাকে পণ্য না দিতে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাইওয়েতে চুরি, ডাকাতিসহ নানাবিধ অপরাধের কারণে আমরা দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তি, হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, শিল্পপুলিশের প্রধান, হাইওয়ে পুলিশের প্রধানসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। এবং সুফল পাচ্ছি। পুলিশ টহল ও তল্লাশি বাড়ানোর কারণে চুরি-ডাকাতি কিছুটা হলেও কমেছে। আমরা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতিকে প্রতিটি গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার বসানোসহ নানাবিধ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তিনি আরও বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনার কাজ চলছে। আশা করছি আগামী তিন মাসের মধ্যে তা হয়ে যাবে। মহাসড়কে চুরি-ডাকাতি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতারা জানান, মহাসড়কে চুরি ও ডাকাতি প্রতিরোধে প্রত্যেক কারখানা কর্তৃপক্ষ পণ্য ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে তুলে দেওয়ার আগে ওই গাড়ির চালক ও চালকের সহকারীর ছবি তুলে রাখা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি রাখা উচিত। যাতে কোনো চালক বা চালকের সহকারী অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে গেলে তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা যায়। রপ্তানিমুখী একটি কারখানার মালিক জানান, চুরি-ডাকাতি ছাড়াও মহাড়কে পণ্যবাহী ট্রাকে মাদক পরিবহন একটি বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। কিছু ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চালক বা চালকের সহকারীরা পণ্য আনার পাশাপাশি ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বহন করেন। তারা প্রায়ই পুলিশের হাতে ধরা পড়ছেন। এতে ওই ট্রাকে পণ্য পরিবহনের জন্য দেওয়া মালিক কর্তৃপক্ষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান থেকে মালামাল চুরি প্রতিরোধে নীতিমালার জন্য আইজিপি সম্প্রতি যে কমিটি গঠন করেছেন তাতে অতিরিক্ত আইজিকে (হাইওয়ে) সভাপতি ও পুলিশ সদর দফতরের এআইজিকে (ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) সদস্যসচিব করা হয়েছে। ১২ সদস্যের কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিল্পপুলিশের ডিআইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি), সিআইডির অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি অপারেশন্স-১, বিজিএমইএর সভাপতি কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি, বিকেএমইএর সভাপতি কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কমিটিকে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও সদস্য কোঅপ্ট করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ উপস্থাপন করতে বলা হয়। যা মহাসড়কে চুরি-ডাকাতি ও অপরাধ প্রতিরোধসংশ্লিষ্ট সব পক্ষ অনুসরণ ও প্রতিপালন করবে।
কমিটির সদস্যসচিব ও পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) এ কে এম মোশাররফ হোসেন মিয়াজী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাভার্ডভ্যান থেকে মালামাল চুরি প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশের জন্য গঠিত কমিটির একাধিক সভা ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিগগিরই নীতিমালার খসড়া উপস্থাপন করা হবে।