বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রায় দেড় বছর পর করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে ঘুরছে পরিবহন ও শিল্পের চাকা। শ্রমজীবী মানুষ কাজে যেতে পারছেন। ক্ষুদ্র ও ফুটপাথের ব্যবসায়ীরাও আবার দোকান খুলেছেন। কমবেশি বেচাকেনাও হচ্ছে। শপিং মলে ক্রেতার সমাগম হচ্ছে। ঘরে ও বাইরে নির্বিঘ্নে কাজ করছে মানুষ। ফলে মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ অচলাবস্থার পর কলকারখানাসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মস্থল খুলে দেওয়ায় আবারও গতি ফিরছে দেশের অর্থনীতিতে। যদিও চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। সেটিকে অবশ্য সাময়িক সমস্যা বলছে সরকার।
তবে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডগুলো শুরু হয়েছে পুরোদমে। দোকানপাট, শপিং মল, অফিস-আদালত, ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, শিল্পকারখানা ও সড়ক, নৌ, রেল, আকাশপথের পরিবহনসহ সবকিছু খুলে দেওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। শ্রমজীবীরাও যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। শুধু তা-ই নয়, মানুষের মনের এই স্বস্তি সামষ্টিক অর্থনীতিতেও এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে শুরু হয়েছে পুরোদমে উৎপাদন। এদিকে শেয়ারবাজারেও শুরু হয়েছে ঊর্ধ্বমুখিতা। অনেক দিন পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক সাড়ে ৬ হাজারের ওপরে উঠেছে। দৈনিক লেনদেন গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৩ হাজার কোটিতে। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার লেনদেন কিছুটা কমেছে। এদিকে রপ্তানি, রেমিট্যান্স খাত দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে করোনা রোগীর মৃত্যু এবং শনাক্তের হারও কমেছে। অনেক দিন পর দৈনিক মৃত্যু নেমে এসেছে দেড় শর নিচে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১২০ জন। শনাক্ত ৪ হাজারেরও কম।
দীর্ঘদিন পর হোটেল, মোটেল খুলে দেওয়ায় পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচে ভিড় বিরাজ করছে। গণহারে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করায় ও সংক্রমণের হার কমে আসায় মানুষের মনে করোনার আতঙ্ক অনেকটাই কমেছে। তবে দেশবাসীকে নতুন করে আতঙ্কিত করছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায়। জনগণের মধ্যে সচেতনতা কমে আসায় আবারও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের উদাসীনতা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক আবুল কাসেম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থানগুলো আবারও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। মানুষ কাজ করছে। তবে মানুষের মনে অজানা একটা আতঙ্ক তো রয়েছেই। যদিও তা আগের তুলনায় অনেকটা কম। আর শিল্প খাতের উৎপাদন শুরু হয়েছে।
রপ্তানি কিছুটা নেতিবাচক থাকলেও সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণ কমলে এটা বাড়বে। তিনি বলেন, আপতদৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কেননা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পোষাতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে বলে তিনি মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনায় দেশের স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন, যারা মূলত দিনমজুর। এখন সবকিছু খুলে দেওয়ায় তারা কাজ করতে পারছেন।
ফলে অর্থনীতিতে কিছুটা গতির সঞ্চার হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগ ও স্থায়ী কর্মসংস্থান বাড়াতে না পারলে অর্থনীতিকে টেকসই করে তোলা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। বিপিসির একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন পর সারা দেশে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। আর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বেড়েছে কনটেইনার লোড-আনলোডের সংখ্যা, যা নতুন করে ইঙ্গিত দিচ্ছে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর। এ পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। আর অর্থমন্ত্রী বলছেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার একমাত্র পথ গণহারে মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা। সরকার এ মুহূর্তে সেই কাজটিই করছে। ফলে সামনের দিনগুলোতেও এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ উচ্চতর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে কভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২০২৪ মার্কিন ডলার। অবশ্য চূড়ান্ত হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। এর ফলে গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি সফল হলে সামনের দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতি আবারও আগের অবস্থানে ফিরে যাবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।