বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কোভিড-১৯-এর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চার শতাংশ সুদে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আরো ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। আর তা বিতরণ শুরু আগামী মাসেই এবং এতে অগ্রাধিকার পাবেন প্রান্তিক অঞ্চলের নারী-উদ্যোক্তারা। করোনাভাইরাস (কোাভিড-১৯) পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দ্বিতীয় দফার প্রণোদনার আওতায় মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের আরও ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। গতকাল সোমবার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানিয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান। মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান এবং মো. সিরাজুল হায়দার এনডিসি।
প্রকৃত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে মোট ঋণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের অর্ধেকই যেন ২০ লাখ টাকার কম ঋণ পান, নারী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে মোট ঋণের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ, এসএমই ক্লাস্টার উদ্যোক্তাদের ১০ শতাংশ, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বেশি এবং ট্রেডিং খাতের উদ্যোক্তাদের ৩০ শতাংশ ঋণ বিতরণে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন ড. মো. মফিজুর রহমান। প্যাকেজের সর্বোচ্চ সীমা ৭৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকায় কমিয়ে আনা হতে পারে বলেও তিনি ধারণা দেন।
এ ছাড়া আগে প্রণোদনার ঋণ না পাওয়া উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, আগামী মাসে (২ সেপ্টেম্বর) এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদের পরবর্তী সভায় ঋণ বিতরণের সংশোধিত নীতিমালা অনুমোদনের পর শিগগিরই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করা হবে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ঋণ বিতরণ শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ড. মো. মফিজুর রহমান আরো বলেন, গত অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বিতরণের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ ছিল তা মোকাবিলা করে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০০ কোটি টাকা বিতরণে আশাবাদী এসএমই ফাউন্ডেশন।
তিনি আরো জানান, এবার প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ কয়েকটি নতুন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
উল্লেখ্য, ফাউন্ডেশনের ঋণ কর্মসূচি বিতরণবিষয়ক নীতিমালা ও নির্দেশিকার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- করোনা মহামারির কারণে গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত অতিক্ষুদ্র (মাইক্রোক্রেডিড), ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে নিম্নবর্ণিত ক্যাটাগরির উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। যারা সরকারের প্রথম দফার প্রণোদনার আওতায় ঋণপ্রাপ্ত হননি, অগ্রাধিকারভূক্ত এসএমই সাব-সেক্টর এবং ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা, নারী-উদ্যোক্তা, নতুন উদ্যোক্তা অর্থাৎ যারা এখনো ব্যাংক ঋণ পাননি, পশ্চাদপদ ও উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তারা।
প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তারা চার শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি সমান মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে। ব্যাংকের চাহিদাকৃত ডকুমেন্টসহ ‘সম্পূর্ণ/পরিপূর্ণ ঋণ আবেদনপত্র’ ব্যাংকের নিকট দাখিলের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঋণ মঞ্জুর করে গ্রাহকের অনুকূলে বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। সাধারণভাবে একক ও যৌথ মালিকানাধীন উদ্যোগের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করা হবে। তবে প্রান্তিক ক্ষুদ্র, বিশেষ করে নারী-উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনার লক্ষ্যে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পাঁচ জন উদ্যোক্তার অনুকূলে গ্রুপভিত্তিক ঋণ বিতরণ করা যাবে। গত অর্থবছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এসএমই ফাউন্ডেশন অংশীদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক এক বা একাধিক শাখায় ফোকাল কর্মকর্তা নির্ধারণ করবে। উদ্যোক্তারা ফোকাল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ফোকাল কর্মকর্তা এসএমই ফাউন্ডেশন, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন।