বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মজুদ ১৭ লাখ টন শত প্রতিক‚লতার মধ্যে এবার বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগেরও বেশি অর্জিত হয়েছে। পাশাপাশি এ যাবত কালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মজুদ গড়ে উঠেছে। বর্তমানে সরকারের মজুদের পরিমাণ সাড়ে ১৭ লাখ টনেরও বেশি। যা সরকারকে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এছাড়া আগামী দুই মাসের মধ্যে আমদানির আরও পাঁচ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সরকারের গুদামে স্থান পেতে যাচ্ছে। তাতে সরকারের মজুদ সর্বকালের রেকর্ডে পরিণত হবে। এদিকে বেসরকারীভাবে বিদেশ থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। দেশের বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে খাদ্য মজুদের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় অঙ্গীকার। তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগের বেশি অর্জিত হয়েছে। বোরো চাল সংগ্রহ অভিযানের শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। তার আগেই মন্ত্রণালয় শতভাগের বেশি চাল সংগ্রহে সফলতা দেখিয়েছে।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ মুজিবর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এবার চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ লাখ মেট্রিক টন। এক দিন আগে অর্থাৎ ৩০ আগস্ট লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল বেশি সংগৃহীত হয়েছে। গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ মেট্রিক টন। একদিন আগে অর্থাৎ ৩০ আগস্ট পর্যন্ত গম সংগ্রহ করা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন। ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন। এটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, সরকারীভাবে তিন লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির পথে রয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সকল চাল চলে আসবে। এছাড়া রাশিয়া থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হচ্ছে। আগামী ৫ সেপ্টম্বর প্রথম চালান রওনা দেবে। প্রথম চালানে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আসবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই গম দেশে এসে পৌঁছাবে। সে হিসেবে আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারের মজুদে যোগ হবে আরও পাঁচ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য।
দেশে বর্তমানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। ৩০ আগস্ট পর্যন্ত চালের মজুদের পরিমাণ ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৯ শত পঁয়তাল্লিশ টন। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ১৫ লাখ ১৯ হাজার ৭ শত ছাপ্পান্ন টন এবং গম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫ টন এবং ধান ১ লাখ ৬ হাজার ৩শত বিরানব্বই টন।
গতবছর এই দিনে মজুদের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ২ শত ১৫ টন। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ১০ লাখ ৪৫ হাজার ৫ শত ছাপ্পান্ন টন, গম ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫ শত তিরাশি টন এবং ধান ৮৬ হাজার ২ শত সত্তর টন। এছাড়া গত সোমবার ৪১৫টি প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে বেসরকারীভাবে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সিদ্ধ নন বাসমতি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার এবং আতপ ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ১২ আগস্ট চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে এনবিআর। এই সুবিধা আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে আমদানির চাল স্থলবন্দরসমূহ দিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দামও কমতে শুরু করেছে।
এর আগে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুদ গড়ে উঠে ২০১৯ সালে। তখন আগের রেকর্ডের চেয়ে তিন মেট্রিক টনেরও বেশি। চাল ও গম মিলে সরকারের খাদ্যগুদামে বর্তমানে মজুদ ছিল ১৯ লাখ ৮ হাজার ৬৮৮ মেট্রিক টন। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট খাদ্য মজুদের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া আরও কিছু গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে ধারণ ক্ষমতা আরও এক লাখ মেট্রিক টন বাড়বে। সে ক্ষেত্রে দেশে খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২১ লাখ মেট্রিক টনে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতে বর্তমানে সরু চালের বাজার মূল্য কেজি প্রতি ৫৮.৬২ টাকা, মাঝারি চাল কেজি প্রতি ৪৯.৭৭ টাকা এবং মোট চাল ৪২.৯৮ টাকা।
দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ গড়ে ওঠায় চালের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে। চাল ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এত দিন প্রভাব খাটালেও বর্তমানে তারা নীরব হতে যাচ্ছে। সরকারের হাতে মজুদ কমে গেলে এরা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। কিন্তু সরকারের হাতে মজুদ বেড়ে যাওয়ায় এরা কারসাজি করা থেকে সরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্য বাজার স্থিতিশীল থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলের জন্য মঙ্গল। ২০১৭ সালের সরকারের খাদ্য মজুদ তলানিতে এসে পৌঁছায়। তখন সরকারের মজুদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এই পরিস্থিতিতে দেশের চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। রাতারাতি চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারও বিব্রত হয়ে পড়ে। মজুদ কমে যাওয়ায় বাজার কিছুটা হলেও এই সিন্ডিকেটের দখলে চলে যায়। কখনও কখনও পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে। তখন দ্রæত চাল আমদানি করে এবং ওএমএস কর্মসূচী চালু করে সরকার বাজার স্থিতিশীল করে।
চালের বাজার স্থিতিশীল করতে দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় চলছে ওএমএস কর্মসূচী। সারাদেশে ৭৩৭ ডিলার প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণের দ্বিগুণ চাল ও আটা এই কর্মসূচীর আওতায় বিক্রি করছেন। এতে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা এবং প্রতি কেজি আটা ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রতিদিন লাইন দিয়ে এই কর্মসূচীর আওতায় চাল ও আটা কিনছেন।